পরিকাঠামো দুর্বল, সমস্যা পোষ্যদের ময়না-তদন্তে

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ সালে কলকাতা ও শহরতলি এলাকার প্রায় ৬০টি কুকুরের ময়না-তদন্ত করা হয়েছিল। ২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই সংখ্যা যথাক্রমে ৯০ ও ১৪০।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৮ ০৩:৩৯
Share:

পোষ্যের অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ অজ্ঞাতই থেকে যাচ্ছে অনেকের কাছে!

Advertisement

কারণ, পোষ্যদের ময়না-তদন্তের জন্য পর্যাপ্ত সরকারি পরিকাঠামোই নেই। বেলগাছিয়ার প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, সেখানে না রয়েছে মর্গ, না রয়েছেন পর্যাপ্ত সংখ্যক শল্য চিকিৎসক। অথচ শহর ও শহরতলি থেকে প্রতিনিয়ত ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে আসা মৃত কুকুরের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আগামী দিনে ময়না-তদন্ত করা সম্ভব নয়— এই মর্মে উপাচার্য পূর্ণেন্দু বিশ্বাস কলকাতার পুলিশ কমিশনার, রাজ্য পুলিশের ডিজি-সহ প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রীকে চিঠি লিখছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, বর্তমানে সেখানে চার জন চিকিৎসক রয়েছেন যাঁরা ময়না-তদন্ত করতে পারেন। কিন্তু এই পাঁচ জনকে একাধারে প্রাণী বিজ্ঞানের স্নাতক কোর্সের ক্লাস নিতে নদিয়ার মোহনপুরে যেতে হয়, আবার বেলগাছিয়ার ক্যাম্পাসে স্নাতকোত্তর কোর্সের ক্লাসও নিতে হয়। পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, ‘‘নিয়মানুযায়ী ময়না-তদন্তের প্রক্রিয়া সরকারি হাসপাতালে করানো হয়। শহর ও শহরতলির বিভিন্ন থানার আধিকারিকেরা এত দিন আমাদের অনুরোধ করায় মানবিকতার খাতিরে ময়না-তদন্ত করা হয়েছে। কিন্তু গত দু’বছরে ময়না-তদন্ত করতে গিয়ে আমাদের নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।’’

Advertisement

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ সালে কলকাতা ও শহরতলি এলাকার প্রায় ৬০টি কুকুরের ময়না-তদন্ত করা হয়েছিল। ২০১৬-১৭ এবং ২০১৭-১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই সংখ্যা যথাক্রমে ৯০ ও ১৪০। বেলগাছিয়ার ক্যাম্পাসে মর্গ না থাকায় মৃতদেহ সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে। উপাচার্যের কথায়, ‘‘মৃত পশুপাখির ময়না-তদন্তের প্রয়োজনে অবিলম্বে পৃথক স্থায়ী মর্গ নির্মাণের জন্য কলকাতার পুলিশ কমিশনার, রাজ্য পুলিশের ডিজি ছাড়াও প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রীকে চিঠি পাঠাব।’’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, বুধবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ বেলঘরিয়া থানার পুলিশ চারটি মৃত কুকুরকে ময়না-তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসে। আবার মানিকতলা থানা থেকে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটি মৃত কুকুরকে আনা হয়। অধ্যাপক শৈবাল চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘ময়না-তদন্তের জন্য মৃত কুকুর আনলেও তার মৃত্যুর শংসাপত্রের ব্যবস্থাও আমাদের করে দিতে হয়। নিয়ম মতো সন্ধ্যার পরে ময়না-তদন্ত করা যায় না। অথচ মর্গ না থাকায় দেহ সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা থাকছে না। ফলে পচাগলা দেহের ময়না-তদন্তের প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে।’’

প্রসঙ্গত, বেলগাছিয়ার প্রাণী ও মৎস্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের প়ড়ুয়াদের হাতেকলমে শেখানোর জন্য একটি ঘর রয়েছে যেখানে পশুপাখির শব ব্যবচ্ছেদের ব্যবস্থা রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে এখানেই মৃত কুকুরের ময়না-তদন্ত হয়। কিন্তু এই ব্যবস্থারই আমূল পরিবর্তন চান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

দিনের পর দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ময়না-তদন্তে যে সমস্যা হচ্ছে তা মেনে নিলেন বিধায়ক তথা একটি পশুপ্রেমী সংস্থার কর্ণধার দেবশ্রী রায়। তাঁর কথায়, ‘‘দিনে দিনে পশুপাখিপ্রেমীদের সংখ্যা বাড়ছে। পোষ্যের ময়না-তদন্তের জন্য স্থায়ী মর্গ নির্মাণ জরুরি। এ জন্য সরকারের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।’’ রাজ্যের প্রাণী সম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘স্থায়ী মর্গ নির্মাণের কথা ভাবা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন