আরজিকরের সেই ফিজিওথেরাপিস্ট কি আদৌ প্রশিক্ষিত, প্রশ্ন

অস্ত্রোপচারের ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি বিকাশ প্রসাদের ফিজিওথেরাপি করেছিলেন কে? তিনি কি আদৌ বিষয়টিতে প্রশিক্ষিত? ফিজিওথেরাপি শুরুর অল্প সময়ের মধ্যে বিকাশবাবুর মৃত্যুর পরে তাঁর পরিবারের তরফে গাফিলতির যে অভিযোগ উঠেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৫ ১৭:১২
Share:

বিকাশ প্রসাদ। তখনও বেঁচে।

অস্ত্রোপচারের ২৪ ঘণ্টা কাটার আগেই আরজিকর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি বিকাশ প্রসাদের ফিজিওথেরাপি করেছিলেন কে? তিনি কি আদৌ বিষয়টিতে প্রশিক্ষিত? ফিজিওথেরাপি শুরুর অল্প সময়ের মধ্যে বিকাশবাবুর মৃত্যুর পরে তাঁর পরিবারের তরফে গাফিলতির যে অভিযোগ উঠেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই এই প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্টরা। তাঁদের বক্তব্য, এই প্রশ্নের উত্তর জানাটাই সব থেকে জরুরি। কারণ, প্রশিক্ষিত ফিজিওথেরাপিস্টরা রোগীর ক্ষতস্থানের কথা বিবেচনা করে তবেই ফিজিওথেরাপি শুরু করেন। সে ক্ষেত্রে এমন হওয়ার কথাই নয়।

Advertisement

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, যিনি ফিজিওথেরাপি করেছেন তিনি হাসপাতালেরই চিকিৎসক। কিন্তু তাঁর কি ফিজিওথেরাপি করার প্রশিক্ষণ রয়েছে? অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল এ সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি জানিয়েছেন, তদন্তের আগে এ সম্পর্কে কোনও কথাই বলা যাবে না। যদিও আরজিকরের সার্জিক্যাল ওয়ার্ডের নার্সদের একাংশ জানিয়েছেন, মূলত জুনিয়র ডাক্তাররাই এই কাজগুলি করে থাকেন। তাতে কখনও কখনও সমস্যা হয়। আবার কখনও ঠিকঠাক ভাবে সব উতরেও যায়।

এই কথা শুনে শিউরে উঠেছেন প্রশিক্ষিত ফিজিওথেরাপিস্টরা। কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের ফিজিওথেরাপিস্ট বলেন, ‘‘এটা তো ছেলেখেলা। ফিজিওথেরাপির মতো এমন একটি আদ্যন্ত প্রশিক্ষণভিত্তিক পরিষেবা কী ভাবে যে কেউ দিতে পারেন? এর জেরে এমন দুর্ঘটনা তো যখন-তখন ঘটতে পারে?’’ ফিজিওথেরাপিস্টদের সংগঠন ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ ফিজিওথেরাপির অন্যতম সদস্য অলোক রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘যিনি ওই কাজ করেছেন তিনি কোনও ভাবেই প্রশিক্ষিত নন। প্রশিক্ষিত ফিজিওথেরাপিস্ট ও রকম টানাহ্যাঁচড়া করবেন না।’’

Advertisement

বিকাশবাবুর দাদা দীপক প্রসাদ মঙ্গলবারই জানিয়েছিলেন, অস্ত্রোপচারের পরে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছিল তাঁর ভাইয়ের ফিজিওথেরাপি। আর তাতেই অস্ত্রোপচার হওয়া জায়গা থেকে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে ভিজে গিয়েছিল ব্যান্ডেজ। তাঁর ভাই যখন যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন, তখন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক বলেছিলেন, ‘‘রক্ত বেরোচ্ছে তো কী হয়েছে? ও আবার ব্যান্ডেজ করে দেব। এটা না করলে রোগী হাঁটতে পারবে না।’’

এ দিনও দীপকবাবু বলেন, ‘‘ওই ডাক্তারবাবু আমাকেই প্রথমে বলেছিলেন, ভাইয়ের পা ধরে নাড়াতে। আমি বলেছিলাম, এক দিন আগে যার অপারেশন হয়েছে, তার পা ধরে কী ভাবে নাড়াব? ব্যথা লাগবে তো! ডাক্তারবাবু বলেছিলেন, এটা না করলে ভাই আর কোনও দিন হাঁটতেই পারবে না।’’ এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই বিকাশবাবুর মৃত্যু হয়।

অস্ত্রোপচারের পরবর্তী যে সময়টা রোগীর পরিচর্যার ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে এমন আচরণ কী ভাবে চলতে পারে? রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রশিক্ষণ ছা়ড়া এটা করার কথাই নয়। ঠিক কী হয়েছিল, তা তদন্ত রিপোর্টে স্পষ্ট হবে। যদি কারও গাফিলতি প্রমাণিত হয়, তা হলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন