Heavy Rainfall In Kolkata

রাতভর তুমুল বৃষ্টিতে জলমগ্ন কলকাতা, ভাসছে সল্টলেক! বিপন্ন শহরবাসী, লাইনে জল জমে বিপর্যস্ত ট্রেন চলাচলও

কলকাতা এবং শহরতলির নিচু এলাকাগুলি প্লাবিত। রেললাইনে জল জমে ট্রেন চলাচলও বিপর্যস্ত। বিভিন্ন এলাকায় পুজোর প্রস্তুতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। কোথাও ভেঙে পড়েছে নির্মীয়মাণ স্টল। কোথাও ভেসে গিয়েছে বিবিধ সরঞ্জাম।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:০৯
Share:

টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন রাস্তাঘাট। ছবি: রিঙ্কি মজুমদার।

বিপন্ন কলকাতা! জলবন্দি গোটা শহর। রাতভর তুমুল বৃষ্টিতে কলকাতা, সল্টলেক এবং লাগোয়া এলাকা বানভাসি চেহারা নিয়েছে। প্রচুর বাড়ির একতলায় জল ঢুকে গিয়েছে। কলকাতা এবং শহরতলির নিচু এলাকাগুলি প্লাবিত। রেললাইনে জল জমে ট্রেন চলাচলও বিপর্যস্ত। বিভিন্ন এলাকায় পুজোর প্রস্তুতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। কোথাও ভেঙে পড়েছে নির্মীয়মাণ স্টল। কোথাও ভেসে গিয়েছে বিবিধ সরঞ্জাম। অনেকেই বলছেন, স্মরণকালের মধ্যে এমন দুর্যোগ দেখা যায়নি। তুমুল এই বৃষ্টি মেঘভাঙা কি না, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে।

Advertisement

অনেকেরই বক্তব্য, এমন তুমুল একটানা বৃষ্টি সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি। কলকাতা শহরের নিচু এলাকা তো বটেই, যে সমস্ত এলাকায় সচরাচর জল জমে না, সেগুলিও জলের তলায়। একতলা বাড়ির ভিতরে জল ঢুকেছে। বহু এলাকায় জমা জলের কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ নিজেরাই বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রাস্তায় বা গ‍্যারাজে দাঁড় করানো গাড়ির ভিতরে জল ঢুকেছে। রাতেই বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা নিচু এলাকার লোকজনকে সাহায‍্য করতে বেরিয়ে পড়েছিলেন। কোথাও তাঁরা গাড়ি ঠেলে উঁচু জায়গায় তুলেছেন। কোথাও বিপন্ন এবং জলবন্দি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিয়েছেন।

প্রবল বৃষ্টিতে নাজেহাল শহরবাসী। ছবি: রিঙ্কি মজুমদার।

আবহাওয়া যে দুর্যোগপূর্ণ হতে চলেছে, গত দু’দিন ধরেই সেই পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু তা যে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পৌঁছোবে, সে বিষয়ে আগাম কোনও আন্দাজ ছিল না। যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তা-ও কল্পনাতীত। সোমবার রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। মধ‍্যরাতের পরে তার তীব্রতা বাড়ে। টানা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে নাগাড়ে বৃষ্টি হয়েছে। তখনই বিভিন্ন নিচু এলাকায় জল জমতে শুরু করে। নাগরিকদের একাংশের বক্তব্য, পুজোর প্রস্তুতির জন‍্য মণ্ডপ তৈরির জিনিসপত্র জমে অনেক এলাকাতেই নিকাশিব‍্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার উপর ভয়ঙ্কর বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও সঙ্গিন হয়ে পড়েছে।

Advertisement

জলমগ্ন রাস্তাঘাট। ছবি: রিঙ্কি মজুমদার।

সকালের আলো ফোটার পরে বৃষ্টির বেগ কমেছে। কিন্তু বৃষ্টি একেবারে থেমে যায়নি। আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে যে এলাকাগুলি ইতিমধ্যেই বানভাসি, সেখানকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পুর-প্রশাসন ভোর থেকেই বিভিন্ন এলাকায় পাম্প চালিয়ে জল নামানোর চেষ্টা শুরু করেছে। কিন্তু জমা জলের পরিমাণ এত বেশি যে, পাম্প চালিয়েও দ্রুত সে জল নামানোর পরিস্থিতি নেই। সময় লাগবে বলে পুর প্রশাসকেরাই জানাচ্ছেন। ফলে বৃষ্টি একেবারে না থামলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা।

পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনেককেই অতীতের বন্যার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। অনেকেই ১৯৭৮ সালের ভয়াবহ বানভাসি পরিস্থিতির সঙ্গে সোমবার রাতভর বৃষ্টিতে নাজেহাল শহরের তুলনাও করতে শুরু করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, কলকাতার অনেক এলাকায় সেই বন্যার সময়েও জল জমেনি। এ বার জমেছে। যার প্রেক্ষিতে আবার শহরের নিকাশিব‍্যবস্থা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই নিষেধ সত্ত্বেও প্লাস্টিক ব‍্যবহার করেন। যা বর্জ‍্য হিসাবে নিকাশি নালার মুখ এবং গ‍্যালিপিট আটকে দেয়। ফলে জমা জল দ্রুত বেরিয়ে যেতে পারে না। জল জমে থাকলে তা থেকে নানা রোগব‍্যাধি ছড়ানোরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এমনিতেই গত কয়েক সপ্তাহ থেকে একের পর এক নিম্নচাপে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়ছিল। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, সপ্তাহান্তে পুজোর শুরুর সময় আরও একটি নিম্নচাপের প্রভাবে আবার প্রবল বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা।

পুর প্রশাসনের একাংশের হিসাবে উত্তর কলকাতার তুলনায় দক্ষিণ কলকাতায় বেশি বৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে দক্ষিণে জনজীবন আরও বেশি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

মঙ্গলবারেও দিনভর আকাশ মেঘলা থাকবে। বৃষ্টিও হবে। তবে তার পরিমাণ হালকা থেকে মাঝারি পর্যায়ে থাকবে বলেই অনুমান। যদি ভারী বৃষ্টি হয়, তা হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। পুরসভার একটি সূত্রের বক্তব্য, ভোর ৪টে থেকে লকগেট খোলা হয়েছে। তাতে জল নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত পুরসভার লকগেটগুলি বন্ধ থাকবে গঙ্গায় জোয়ার আসার কারণে। ওই সময়ে আবার এমন ভারী বৃষ্টি হলে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement