না বলে ব্যবসায়ীর বাড়ির জল বন্ধ করায় ক্ষুব্ধ মেয়র

দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ ভুগছেন জলসঙ্কটে। অথচ বুধবার পুরসভার মেয়র পরিষদের বৈঠকে এই সঙ্কটমোচনে একটি বাক্যও ব্যয় করেননি মেয়র-সহ মেয়র পারিষদেরা। আলোচ্য সূচিতে স্থানই পায়নি বিষয়টি। জলের নিদারুণ পরিস্থিতি নিয়ে কোনও জরুরি ঘোষণাও হয়নি সেখানে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৫ ০০:১২
Share:

দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ ভুগছেন জলসঙ্কটে। অথচ বুধবার পুরসভার মেয়র পরিষদের বৈঠকে এই সঙ্কটমোচনে একটি বাক্যও ব্যয় করেননি মেয়র-সহ মেয়র পারিষদেরা। আলোচ্য সূচিতে স্থানই পায়নি বিষয়টি। জলের নিদারুণ পরিস্থিতি নিয়ে কোনও জরুরি ঘোষণাও হয়নি সেখানে।

Advertisement

তবে ম্যান্ডেভিলা গার্ডেন্সে জল চুরির অভিযোগে এক ব্যবসায়ীর বাড়ির জলের লাইন কেটে দেওয়ায় রীতিমতো উত্তেজিত হয়ে পড়েন খোদ মেয়রই। তাঁকে না জানিয়ে কেন এ ভাবে লাইন কাটা হল, তা নিয়ে কার্যত ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। কিন্তু অভিযোগ ছিল, বেআইনি ভাবে সাকশন করে জল নিচ্ছিলেন ওই ব্যবসায়ী। তাই এই ব্যবস্থা। কিন্তু এমন একটি সাধারণ, আইনানুগ ঘটনায় কি মেয়রের মতো সর্বোচ্চ ব্যক্তির অনুমতি এতটাই জরুরি? — প্রশ্ন উঠেছে পুর-মহলে।

অন্য দিকে, এই লাইন কেটে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন রাজ্যের প্রবীণ মন্ত্রী, বালিগঞ্জের বিধায়ক ও প্রাক্তন মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে পুরসভার জলের লাইন থেকে জল টানার ফলে অন্যদের জল পেতে অসুবিধা হচ্ছে। স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানিয়েছি।’’ তিনি জানান, এ সব রুখতে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তবে মেয়র অবশ্য বলেছেন, ‘‘লাইন কাটা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সতর্ক করে দু’একদিনের মধ্যে ওই লাইন জুড়ে দিতে বলা হয়েছে।’’

Advertisement

পুরসভার জল দফতরের এক আধিকারিক জানান, সাউথ পয়েন্ট স্কুলের অভিভাবকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সেখানে পানীয় জলের কল বসানোর চেষ্টা করেন স্থানীয় কাউন্সিলর সুদর্শনা মুখোপাধ্যায়। কিন্তু কাজের আগেই দেখা যায়, জলের চাপ খুব কম। কারণ জানতে পুর-ইঞ্জিনিয়ারেরা কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখেন। তখনই তাঁদের নজরে আসে ওই ব্যবসায়ীর বাড়িতে পাম্পের সাহায্যে জল টানা হচ্ছে। ওই এলাকার এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার নোটিস পাঠান বাড়ির মালিকের কাছে। তার পরে বুধবার দুপুরেই কেটে ফেলা হয় জলের লাইন।

পুরসভা সূত্রে খবর, দক্ষিণ কলকাতার ১০ এবং ১১ নম্বর বরো এলাকার কিছু ওয়ার্ডে পুরভোটের আগে থেকেই জলের অভাব। ওই সব এলাকার একাধিক নির্বাচিত কাউন্সিলর জানান, বড় গলায় ভোটারদের বলেছিলাম আমাদের ক্ষমতায় আনুন, মে মাসের মধ্যেই আপনাদের বাড়িতে জল পৌঁছে যাবে। সেই প্রতিশ্রুতি ‘বুমেরাং’ হওয়ায় তাঁরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছেন। তাঁদের বক্তব্য, প্রতিদিনই বাড়িতে বা ওয়ার্ড অফিসে ভিড় করে জলের দাবি জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। কিন্তু তাঁদের কোনও প্রতিশ্রুতি দিতে পারছি না। আর গার্ডেনরিচের জল কবে আসবে, তা-ও জানাতে পারছি না। এক কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘এখন ভগবানই ভরসা। কবে বর্ষা নামবে সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছি।’’

ভোটের আগে তৃণমূল বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছিল, গার্ডেনরিচ জলপ্রকল্প থেকে অতিরিক্ত ৫ কোটি গ্যালন জল মিলবে। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও জানান, গার্ডেনরিচ থেকে ওই জল এলেই সমস্যা মিটবে। কিন্তু এখনই শহরের একটি অংশে জলের জন্য যে হাহাকার, তাতে দিন কয়েকের মধ্যে বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হবে বলেই আশঙ্কা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন