Blind Student

Education For the Blind: পড়ার সঙ্গে দৃষ্টিহীনদের যোগ কবে হবে, চিন্তা শিক্ষকদের

করোনাকালে গত দেড় বছর স্কুল বন্ধ থাকায় এই পড়ুয়ারা কী ভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে, সেই চিন্তাই এখন কুরে কুরে খাচ্ছে তাদের শিক্ষকদের।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৫৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

আর পাঁচ জন সাধারণ পড়ুয়ার থেকে ওদের জগৎ অনেকটাই আলাদা। অনলাইনে সাধারণ পড়ুয়ারা ক্লাস করতে পারলেও সেই মাধ্যমে পড়াশোনা করা ওদের কাছে কার্যত যুদ্ধজয়ের শামিল। কারণ, ওদের অনেকে দৃষ্টিহীন। কেউ কেউ মূক ও বধির। করোনাকালে গত দেড় বছর স্কুল বন্ধ থাকায় এই পড়ুয়ারা কী ভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে, সেই চিন্তাই এখন কুরে কুরে খাচ্ছে তাদের শিক্ষকদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, ক্লাসে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতির সাহায্যে এই ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো হয়। বাড়িতে বসে যা কখনওই সম্ভব নয়। ফলত, দীর্ঘ সময় লেখাপড়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলে এমন পড়ুয়াদের মধ্যে স্কুলছুটের হার বেড়ে যেতে পারে, এই আশঙ্কাই করছেন শিক্ষকেরা।

Advertisement

নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ ঘোষ জানালেন, তাঁদের স্কুল পুরোটাই আবাসিক। অতিমারির ঢেউ আছড়ে পড়ার পরপরই সব পড়ুয়া বাড়ি চলে গিয়েছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম বলতে শুধু ফোন। বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “সাধারণ পড়ুয়ারা যে ভাবে অনলাইনে ক্লাস করে, সে ভাবে তো দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা পারে না। অনেক নতুন জিনিস স্পর্শ করে ওদের শেখাতে হয়। অনলাইন ক্লাসে কী ভাবে তা সম্ভব? নবম, দশম বা উঁচু ক্লাসের পড়ুয়ারা যদি বা অডিয়ো ক্লিপ বা আমাদের বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কিছুটা ক্লাস করতে পারে, নিচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা তা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত।’’ তিনি জানান, তাঁদের স্কুলে ব্রেলের মাধ্যমে দৃষ্টিহীনদের প্রথম শ্রেণি থেকে পড়ানো শুরু হয়। ধীরে ধীরে তারা এই বিশেষ পদ্ধতির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু এ বার প্রথম শ্রেণিতে ছাত্র ভর্তি করেননি তাঁরা। তাদের কী ভাবে পড়াবেন, সেই সমস্যার কোনও সমাধান না হওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

অধ্যক্ষ বলেন, ‘‘সরকার যখন স্কুল খোলার নির্দেশ দেবে, তখন যাতে তারা আবাসিক স্কুলগুলি খোলার দিকেও বিশেষ নজর দেয়, সেই আবেদন জানাচ্ছি।’’ কলকাতায় দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের জন্য আর একটি স্কুল, ক্যালকাটা ব্লাইন্ড স্কুলের টিচার ইন-চার্জ লিজ়া বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তাঁরা অনলাইনে পড়ানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। তবে তা নিচু ক্লাসের ছেলেমেয়েদের জন্য একেবারেই পর্যাপ্ত নয়।

Advertisement

দৃষ্টিহীন পড়ুয়াদের পাশাপাশি মূক ও বধিরদেরও অনলাইনে পড়ানো খুব কঠিন বলে মনে করেন রাজাবাজার এলাকায় এমন পড়ুয়াদের জন্য সরকার পোষিত ‘ক্যালকাটা ডেফ অ্যান্ড ডাম্ব স্কুল’-এর প্রধান শিক্ষক সমীরকুমার সামন্ত। তিনি জানান, ভিডিয়ো কল এবং সাইন ল্যাঙ্গোয়েজের মাধ্যমে উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের তা-ও কিছু কিছু বিষয় পড়ানো যাচ্ছে। কিন্তু এই ভাবে নিচু ক্লাসের ছেলেমেয়েদের পড়ানো খুব কঠিন। ক্লাসের সময়ে পড়ুয়াদের অভিভাবককে বলা হচ্ছে পাশে থাকার জন্য। তবে সমীরবাবু মনে করেন, এই ভাবে পড়ানো হলেও তা লক্ষ্যমাত্রা থেকে বহু দূরে থেকে যাচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের পড়ুয়াদের বিশেষ কিছু যন্ত্রের সাহায্যে কথা শেখানোর ব্যবস্থা আছে। স্কুল না খুললে সেটা সম্ভব নয়। তাই অতিমারির এই সময়ে স্কুল বন্ধ থাকায় ওদের পড়াশানা ও কথা শেখার ক্ষেত্রে একটা বিশাল ফাঁক রয়েই যাচ্ছে।’’

প্রধান শিক্ষক জানালেন, তাঁদের স্কুলে সব চেয়ে বড় সমস্যা শিক্ষকের অভাব। তিনি বলেন, ‘‘যেখানে ৩০-৩৫ জন শিক্ষক দরকার, সেখানে আমাদের স্কুলে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৮-১০ জন। আরও কয়েক জন শিক্ষক বেশি থাকলে আমরা হয়তো ছাত্রছাত্রীদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ করে আরও একটু ভাল ভাবে পড়াতে পারতাম।’’

তবে সমীরবাবুর মতে, করোনাকালে সব দিক বিচার করেই স্কুল খোলা উচিত। তাঁর কথায়, “মূক ও বধির পড়ুয়ারা এত দিন পরে স্কুলে এলে কি দূরত্ব-বিধি বজায় রাখতে পারবে? ওরা খেলাধুলো খুব ভালবাসে। খেলতে গিয়ে তো দূরত্ব-বিধি থাকে না। আমাদের স্কুলের কিছু পড়ুয়া হস্টেলে থাকে। তাদের পক্ষেই বা কী ভাবে দূরত্ব-বিধি মেনে চলা সম্ভব? তাই সব দিক দেখেই স্কুল খুলতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন