ভস্মীভূত: আগুনের গ্রাসে সাপুরজি বাজার। বুধবার রাতে, নিউ টাউনে। নিজস্ব চিত্র
আগুন থেকে নিজের দোকান রক্ষা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন তিনি। দোকান শেষ পর্যন্ত বাঁচলেও আগুনের গ্রাস থেকে বাঁচলেন না ওই ব্যবসায়ী। অগ্নিকাণ্ডে গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে তার একটি অংশ সোজা মুখে এসে লাগে ইনসান আলি মোল্লার। বৃহস্পতিবার বাইপাসের এক বেসরকারি হাসপাতালে মারা গেলেন তিনি।
ইনসানের বাবা জালালউদ্দিন মোল্লা জানিয়েছেন, গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁরা ছেলেকে নিয়ে চারটি হাসপাতাল ঘোরেন। কিন্তু প্রতিটি হাসপাতাল থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়, ওই যুবকের যে ধরনের আঘাত রয়েছে, সেই অবস্থায় তাঁকে বাঁচানোর পরিকাঠামো তাদের নেই। শেষে বাইপাসেরই একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ইনসানকে। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
বুধবার রাত তিনটে নাগাদ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটেছে নিউ টাউনের সাপুরজি বাজারে। পুড়ে যায় ৩০টিরও বেশি দোকান। দমকলের পাঁচটি ইঞ্জিন প্রায় দেড় ঘণ্টায় আগুন আয়ত্তে আনে। আগুন নেভাতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন এক দমকলকর্মী-সহ দু’জন। আগুন লাগার কারণ অবশ্য জানা যায়নি। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, আগুন লাগানো হয়ে থাকতে পারে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, নিউ টাউন অ্যাকশন এরিয়া (৩)-এ সাপুরজি বাজার এলাকায় একাধিক আবাসন রয়েছে। কয়েক হাজার বাসিন্দা থাকেন। ব্যবসায়ীদের একাংশ জানান, বুধবার রাত তিনটে থেকে সাড়ে তিনটের মধ্যে একটি দোকানে প্রথমে আগুন লাগে। বাঁশ ও টিনের ছাউনি থাকায় মুহূর্তে তা ছড়িয়ে পড়ে পাশের দোকানগুলিতে। ফাটতে শুরু করে পরপর গ্যাস সিলিন্ডার। পুড়ে যায় দোকানে মজুত রাখা সমস্ত আনাজ ও মাছ। ভস্মীভূত অন্তত ১৫-২০টি মোটরবাইক, ফ্রিজ, জেনারেটরও।
বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই রাতে এলাকায় নাম-সঙ্কীর্তন হচ্ছিল। আওয়াজ শুনে তাঁরা প্রথমে ভেবেছিলেন বাজি ফাটছে। সাপুরজি বাজারেই চায়ের দোকান চালান সাগর মণ্ডল। রাতে দোকানেই ছিলেন তিনি। ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘আচমকা বিকট শব্দ শুনে দোকান থেকে বেরিয়ে দেখি, দাউদাউ করে জ্বলছে চার পাশ।’’ আর এক ব্যবসায়ী রবীন মণ্ডল জানান, তাঁর মাছের দোকান। রাতে তিনি আগুন লাগার খবর পান। রবীন বলেন, ‘‘অনেক ক্ষতি হয়ে গেল আমার।’’
ইনসানের এক আত্মীয় শেখ তৌহিদ জানান, নিউ টাউনের পাথরঘাটার ছাপনা গ্রামে বাড়ি ইনসানদের। বুধবার ঘটনার সময়ে বাড়িতেই ছিলেন তিনি। মাঝরাতে এক জন ফোন করে আগুনের খবর দেন। সাপুরজি বাজারে দোকান রয়েছে ইনসানের বাবা জালালউদ্দিনেরও। আগুন লেগেছে শুনে ছুটে যান বাবা-ছেলে। জল ঢেলে আগুন নেভাতে যান ইনসান। সে সময়েই গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে তার একটি অংশ এসে লাগে ওই ব্যবসায়ীর মুখে।
বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, বাজারে নেই ন্যূনতম অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা। ঠিক উপর দিয়ে গিয়েছে বিদ্যুতের হাইটেনশন তার। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু জানিয়েছেন, অস্থায়ী ওই বাজারে আগুন নেভানোর কোনও ব্যবস্থা ছিল না। দ্রুততার সঙ্গে দমকল কাজ না করলে আগুন আরও বড় আকার নিত। হিডকো সূত্রের খবর, ঘটনা খতিয়ে দেখে তার রিপোর্ট শীর্ষকর্তাদের কাছে জমা দেওয়া হবে।