মারধরে অভিযুক্তদের ধরতে ‘ঢিলেমি’ কেন

গত ৩ জানুয়ারি হাওড়ার শ্রীবাস দত্ত লেনে বাপি প্রসাদ নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে চুরির অভিযোগে লাঠি, বাঁশ, রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করে কয়েক জন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:০২
Share:

অত্যাচারিত: চলতি মাসের শুরুতে চোর সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়া হয় হাওড়ার যুবক বাপি প্রসাদকে (বাঁ দিকে)। বুধবার ভিআইপি রোডে রেলিংয়ে বেঁধে মারা হয় আরও এক যুবককে (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

গণপিটুনির ছবি ক্যামেরাবন্দি হয়েছিল। চিহ্নিত করা হয়েছিল অভিযুক্তদেরও। কিন্তু তার পরেও গ্রেফতার করা গেল না তাদের অধিকাংশকেই। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে হাওড়া ও লেকটাউন থানা এলাকার দু’টি ঘটনার ক্ষেত্রে এই অভিযোগ করেছেন এলাকার বাসিন্দারা।

Advertisement

গত ৩ জানুয়ারি হাওড়ার শ্রীবাস দত্ত লেনে বাপি প্রসাদ নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে চুরির অভিযোগে লাঠি, বাঁশ, রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করে কয়েক জন। নাইলনের দড়ির সাহায্যে বাপির দু’টি হাত বাতিস্তম্ভে পিছমোড়া করে বেঁধে শুরু হয় অত্যাচার। সেই ঘটনার রেশ না কাটতেই বুধবার সকালে তার পুনরাবৃত্তি দেখা যায় লেকটাউন থানার দক্ষিণদাঁড়ি এলাকায়, ভিআইপি রোডের ধারে। গাড়ির ব্যাটারি

চুরির অভিযোগে মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবক ও তার মাদকাসক্ত সঙ্গীকে মোটা দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধরের অভিযোগ ওঠে কয়েক জন গাড়িচালকের বিরুদ্ধে।

Advertisement

হাওড়ার ঘটনায় গ্রেফতারির সংখ্যা এখনও পর্যন্ত শূন্য! লেকটাউনে নাগরিকদের প্রত্যাশা পূরণে কিছুটা হলেও মুখরক্ষা করেছে বিধাননগর কমিশনারেট। সুনীল রায় ও মনোহর রায় নামে দু’জনকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা, হুমকি দেওয়া-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করে তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু ভিডিয়োয় সুনীলদের সঙ্গে যাদের দেখা গিয়েছে, তারা এখনও কেন অধরা, সেই প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই যুবকের উপরে যে ভয়াবহ অত্যাচার চলেছে, তার সবটা ভিডিয়োয় দেখা যায়নি।

ঘটনাস্থলের কাছে কমল সাহার চায়ের দোকান। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘গত পাঁচ-ছ’দিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই যুবককে এলাকায় দেখছিলাম। যখন যে খাবার দিত, তা-ই খেত। সকালে ফুটপাতের ধারে আগুন পোহাচ্ছিল। হঠাৎ করে সবাই মিলে দড়ি দিয়ে হাত-পা বেঁধে কী মারই মারল।’’ তপন ঘরুই নামে আর এক জন বলেন, ‘‘বারবার বললাম, এক জন মানসিক ভারসাম্যহীন

যুবক কী ভাবে চুরি করবে? কেউ কথা শুনলে তো! মুড়ো বাঁশ, বাটাম দিয়ে এলোপাথাড়ি পিটিয়েছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দা পদ্মা চৌহান বলেন, ‘‘মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকটিকেই সব চেয়ে বেশি মেরেছে। পুলিশ দু’জনকে ধরে নিয়ে গেল। বাকিরা এখনও কেন ধরা পড়ল না?’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের সঙ্গে আরও দু’জন মাদকাসক্ত যুবক দক্ষিণদাঁড়ির ফুটপাতে থাকতেন। ঘটনার সময়ে এক মাদকাসক্ত সেখানে ছিলেন না। গাড়িচালকদের রোষ গিয়ে পড়ে অন্য মাদকাসক্ত যুবক ও মানসিক ভারসাম্যহীন ওই যুবকের উপরে। এর পরেই কখনও বাঁশ দিয়ে মারধর তো কখনও ফ্লেক্সের টুকরোয় আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেওয়া হয়।

হাওড়ায় আক্রান্ত যুবক শ্রীবাস দত্ত লেনেরই বাসিন্দা। ছোটবেলা থেকেই যে তিনি মাঝেমধ্যে মস্তিষ্কের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন, এলাকার লোকের তা অজানা ছিল না। ভারসাম্য হারালে সেই সময়ে আশপাশের বাড়িতে ঢুকে পছন্দমতো জিনিস নিয়ে তিনি পালিয়ে যেতেন। আবার সুস্থ থাকাকালীন উৎসবের মরসুমে পুলিশের সঙ্গে তাঁকে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করতেও দেখা গিয়েছে। এ ধরনের যুবককে মারধরের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন আক্রান্তের পরিজনেরা। এর পরেও দোষীদের ধরতে পুলিশের তৎপরতা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ।

হাওড়া সিটি পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হলেও তাতে নির্দিষ্ট ভাবে কারও নামের উল্লেখ নেই।’’ কিন্তু ছবি তো রয়েছে! এ বার ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘অভিযুক্তেরা এখন এলাকাছাড়া। যারা এ কাজ করেছে, তারা ধরা পড়বেই।’’

বিধাননগর কমিশনারেটের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘দু’জন যখন ধরা পড়েছে, বাকিরাও ধরা পড়বে। দোষীদের চিহ্নিত করে দ্রুত তাদের গ্রেফতার করতে তদন্ত চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন