অশালীন কাজের প্রতিবাদ, দমদমে নিগৃহীত মহিলা

বাড়ির সামনে বসে মদ্যপানের প্রতিবাদ করায় ঘরে ঢুকে মহিলাদের মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল এক দল যুবকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ঘটনাস্থলে পুলিশ আসার পরেও তাদের সামনেই অভিযুক্তেরা তাণ্ডব চালাতে থাকেন। তবু কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। বুধবার রাতে দমদম ক্যান্টনমেন্টের এই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ১৪:৪২
Share:

জখম ঝর্নাদেবী।—নিজস্ব চিত্র

বাড়ির সামনে বসে মদ্যপানের প্রতিবাদ করায় ঘরে ঢুকে মহিলাদের মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠল এক দল যুবকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ঘটনাস্থলে পুলিশ আসার পরেও তাদের সামনেই অভিযুক্তেরা তাণ্ডব চালাতে থাকেন। তবু কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। বুধবার রাতে দমদম ক্যান্টনমেন্টের এই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, এই ঘটনায় জখম হয়েছেন এক বৃদ্ধা। শ্লীলতাহানি করা হয়েছে তাঁর পুত্রবধূরও। এত সবের পরেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টে বৃহস্পতিবার থানায় গেলে ওই পরিবারের এক তরুণীর উদ্দেশে থানার আইসি পার্থরঞ্জন মণ্ডল কটূক্তি করেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনার সঙ্গে অনেকেই পার্ক স্ট্রিট-কাণ্ডের মিল খুঁজে পেয়েছেন। সেখানেও অভিযোগকারিণীকে থানায় বসিয়ে কটূক্তি করেছিলেন দুই পুলিশ অফিসার। তবে এ দিনের ঘটনার প্রেক্ষিতে দমদম থানার আইসি বলেন, “আমি কোনও খারাপ কথা বলিনি। অভিযোগ নিয়ে তদন্তও শুরু হয়েছে। ওই পরিবারের বিরুদ্ধেও শ্লীলতাহানির পাল্টা অভিযোগ দায়ের হয়েছে।”

কী ঘটেছিল বুধবার রাতে?

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, দমদম ক্যান্টনমেন্টের পঞ্জাবি বাড়ি মোড়ের ওই বহুতলের নীচে প্রায়ই স্থানীয় নির্মাণ ব্যবসায়ী সজল ঘোষের নেতৃত্বে মদ্যপানের আসর বসানো হয় বলে অভিযোগ। তা নিয়েই কয়েক মাস ধরে প্রতিবাদ করছিল ওই পরিবারটি। থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছিল। নিগৃহীত পরিবারের অভিযোগ, আবাসনের করিডরে এমন মদ্যপানের আসর বসত যে, গেট থেকে ফ্ল্যাটে পৌঁছনোরও উপায় থাকত না। কিন্তু বারবার অভিযোগ জানালেও কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। উল্টে অভিযুক্তদের দাপট আরও বেড়ে গিয়েছিল।

সেই অভিযোগের সূত্রেই বুধবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ওই ফ্ল্যাটে চড়াও হন সজল ঘোষ ও তাঁর দলের আরও কিছু যুবক। অভিযোগ, ফ্ল্যাটে ঢুকেই পরিবারের লোকজনের উদ্দেশে গালাগালি করতে থাকেন তাঁরা। এর প্রতিবাদ করলে ওই পরিবারের বৃদ্ধা গৃহকর্ত্রী ঝর্না মিত্র ও বাকি মহিলাদের উপরে চড়াও হন ওই যুবকেরা। এই পরিস্থিতিতে উপায়ান্তর না দেখে থানায় ফোন করে ওই পরিবার।

অভিযোগকারিণী মহিলা জানিয়েছেন, থানা থেকে এক দল পুলিশকর্মী বুধবার রাতে তাঁদের বহুতলে যান। তাঁদের সামনেই ওই পরিবারের মহিলাদের উপরে চড়াও হন কিছু যুবক। তাঁদেরই এক জন ধাক্কা মারেন ওই বৃদ্ধাকে। তার চোটেই পড়ে গিয়ে কপাল ফাটে বৃদ্ধার। অভিযোগ, মারধর করা হয় তাঁর পুত্রবধূকেও। জখম ওই বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতেও অস্বীকার করে ওই পুলিশ। পরে দমদম পুর-হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয় ওই বৃদ্ধার।

বৃহস্পতিবার বিকেলে পূর্ব কলকাতায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছেন তিনি।

পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঘটনার কথা জানলেও রাতভর ওই পরিবারের অভিযোগও নিতে চায়নি তারা। বৃহস্পতিবার সকালে অভিযোগ জমা নেওয়া হয়। দমদম থানার অবশ্য দাবি, ওই পরিবারের কর্তার বিরুদ্ধেও একটি শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কিন্তু যেখানে পুলিশের সামনেই মারধর করা হল, সেখানে শ্লীলতাহানি হল কী ভাবে? কেনই বা পুলিশের সামনে মারধর করেও ছাড় পেয়ে গেলেন অভিযুক্তেরা? এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য দিতে পারেনি পুলিশ। ব্যারাকপুরের এডিসিপি সুরেশ চাটভি বলেছেন, “সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলেই প্রয়োজন মতো আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সজল ঘোষ শাসকদলের বেশ কিছু নেতার ঘনিষ্ঠ। তাই ওই ব্যবসায়ী এবং তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে চাইছে না। যদিও সজলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা অস্বীকার করেছেন দমদমের তৃণমূল নেতা বরুণ নট্ট। তিনি বলেছেন, “আগে ও সিপিএম করত। এখন কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয় বলেই শুনেছি।”

তবে গোলমালের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন সজল। তিনি বলেন, “ওই ফ্ল্যাট আমিই তৈরি করেছিলাম। তবে কাল রাতে আমি সেখানে ছিলাম না। কী ঘটেছে, তা-ও বলতে পারব না। ওই বহুতলের সব ফ্ল্যাট বিক্রি হওয়ার পরে সেখানে আমার আর যাতায়াত নেই। তাই আমি মদ্যপানের আসর বসাই, এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা।”

সজল এই দাবি করলেও পুলিশ সূত্রের খবর, তাঁর বিরুদ্ধে এটিই প্রথম অভিযোগ নয়। মাস কয়েক আগেও তিনি দলবল নিয়ে ওই পরিবারের উপরে চড়াও হয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। সে সময়েও সজল ও তাঁর কয়েক জন সঙ্গীর বিরুদ্ধে থানায় শ্লীলতাহানির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, পুলিশ সে বারও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। বরং নিজেরাই আদালতে গিয়ে আগাম জামিন পেয়ে যান অভিযুক্তেরা।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই বহুতলে গিয়ে দেখা গেল, কোনও বাসিন্দাই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না। এলাকার বাসিন্দাদের অনেকে বলছেন, সন্ধ্যার পর থেকেই এলাকায় মত্ত যুবকেরা রীতিমতো দাপিয়ে বেড়ায়। তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলে কেউই বিপদ ডেকে আনতে চান না।

নিজেদের ফ্ল্যাটে বসেও আতঙ্কে রয়েছে নিগৃহীত পরিবারটি। পরিবারের এক তরুণী বলেন, “ঘরের ভিতরেও আতঙ্কে রয়েছি। পুলিশ তো কিছুই করছে না। ফের যে হামলা হবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?”

পূর্ব কলকাতায় আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া ঝর্নাদেবীর বক্তব্য, “ওই ফ্ল্যাটে আমরা নিরাপদ নই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফ্ল্যাট বিক্রি করে অন্য জায়গায় চলে যাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন