সাততলার ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু মহিলার

পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন ওই মহিলাকে। পুলিশের ধারণা, এটি আত্মহত্যা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৭
Share:

মর্মান্তিক: আবাসনের সামনের রাস্তা থেকে উদ্ধার হয় রিনা সরকারের (ইনসেটে) দেহ। শনিবার বিকেলে, যোধপুর পার্কে। নিজস্ব চিত্র

সাততলা আবাসনের নীচে বসে ছিলেন নিরাপত্তারক্ষী। শনিবার বিকেল চারটে নাগাদ ভারী কিছু পড়ার আওয়াজ পেয়ে ছুটে গিয়ে তিনি দেখেন, আবাসনের সামনের রাস্তায় উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছেন এক মহিলা। রক্তে ভেসে যাচ্ছে আশপাশ। পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন ওই মহিলাকে। পুলিশের ধারণা, এটি আত্মহত্যা।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম রিনা সরকার (৩৮)। তাঁর বাড়ি লেক থানার পঞ্চাননতলা রোডে। গত ২৫ ডিসেম্বর একমাত্র ছেলেকে হারিয়েছিলেন রিনাদেবী। স্থানীয় সূত্রের খবর, ছেলেকে হারানোর পর থেকে তীব্র মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন ওই মহিলা। সেই কারণেই তিনি আবাসনের সাততলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন বলে অনুমান মৃতার পরিবারের।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রিনাদেবী যোধপুর পার্কের একটি আবাসনের তিনতলার ফ্ল্যাটে পরিচারিকার কাজ করতেন। সেই ফ্ল্যাটে সস্ত্রীক থাকেন বৃদ্ধ ভাস্কর দত্ত। তাঁদের ছেলেমেয়েরা বিদেশে থাকেন। রিনাদেবীর বৃদ্ধা মা-ও ওই ফ্ল্যাটে ৩০ বছর ধরে কাজ করছেন। আবাসনের ছাদের একটি ঘরে থাকেন তিনি। মৃতার স্বামী গাড়ি চালান। এ দিন ওই সময়ে তিনি ডিউটিতে ছিলেন।

Advertisement

এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ রিনাদেবী যোধপুর পার্কের ওই ফ্ল্যাটে কাজ করতে ঢোকেন। কাজ সেরে রিনাদেবী ছাদে মায়ের কাছে যান। রিনাদেবীর বড়দি বীণা দে বলেন, ‘‘এ দিন দুপুরে আমি মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আসি। দুপুরের স্নান-খাওয়া সেরে তিন জনে মিলে গল্প করার পরে আমি ও মা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ বিকেলে আশপাশের চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায়। উঠে দেখি, বোন নেই। তার পরে নীচে ছুটে গিয়ে দেখি, রাস্তায় ওর দেহ পড়ে রয়েছে।’’

এ দিন বিকেলে যোধপুর পার্কের ওই আবাসনে গিয়ে দেখা যায়, বীণাদেবী কান্নাকাটি করছেন। তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন পড়শিরা। বীণাদেবীর কথায়, ‘‘গত ২৫ ডিসেম্বর রিনার একমাত্র ছেলে ঋভু আত্মহত্যা করেছিল। বাইশ বছরের সেই ছেলের শোক কিছুতেই ভুলতে পারছিল না ও। প্রায়ই বলত, ঋভু নেই। বেঁচে থেকে কী লাভ!’’ বীণাদেবীর কথায়, ‘‘মৃত্যুর আধ

ঘণ্টা আগেও মা, আমি আর রিনা কথা বলছিলাম। তখনও ঋভুর প্রসঙ্গ টেনে আফশোস করছিল। আমরা ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলাম। কিন্তু ছেলের শোক ও কিছুতেই ভুলতে পারছিল না।’’

পঞ্চাননতলার বস্তিতে স্বামীকে নিয়ে থাকতেন রিনাদেবী। বীণাদেবী বলেন, ‘‘মা ভাস্করবাবুর ফ্ল্যাটে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। মায়ের বয়স হওয়ায় রিনাও ওখানে কাজ শুরু করে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ছেলের মৃত্যুর পরে টানা ২০ দিন বাড়ি থেকে বেরোয়নি রিনা। তীব্র মানসিক অবসাদে ভুগছিল।’’ এ দিন সন্ধ্যায় লেক থানার পুলিশ যোধপুর পার্কের ওই আবাসনের ছাদ ঘুরে দেখে। মৃতার মা, দিদি ও নিরাপত্তারক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এই ঘটনায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে তারা। পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘এটা নিছক আত্মহত্যা, না কি এর পিছনে অন্য কোনও রহস্য আছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন