শ্বশুরবাড়িতে মৃত্যু অগ্নিদগ্ধ তরুণীর, পলাতক স্বামী

পরে এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে মৃতার পরিবার। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকেই পলাতক মৃতা তরুণীর স্বামী গৌতম দাস। তরুণীর বাবা তপন ঘোষের নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২০
Share:

স্বামী গৌতমের সঙ্গে অনিন্দিতা।

ভোরবেলা তখনও ঘুমে আচ্ছন্ন গোটা বাড়ি। আচমকা বাইরের ঘরের জানলায় জোরে আঘাত করেন কেউ। শোনা যায় এক মহিলার কণ্ঠস্বর। কে ডাকছেন, প্রথমে বুঝতে পারেননি বাড়ির বাসিন্দারা। পরে দরজা খুলতেই দেখেন, সামনে দাঁড়িয়ে মেজ মেয়ের শাশুড়ি ঝর্না দাস। ওই বাড়ির মেজ মেয়ে অনিন্দিতা দাস (২৮) শ্বশুরবাড়িতে নিজের গায়ে আগুন দিয়েছেন বলে খবর দিতে এসেছেন তিনি। পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ওই তরুণীর। রবিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে চিৎপুর থানা এলাকায়।

Advertisement

পরে এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে মৃতার পরিবার। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকেই পলাতক মৃতা তরুণীর স্বামী গৌতম দাস। তরুণীর বাবা তপন ঘোষের নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। খোঁজ চলছে তরুণীর স্বামীর। যদিও তপনবাবুর অভিযোগ, জামাই গৌতমই তাঁর মেয়েকে পুড়িয়ে মেরেছেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন অনিন্দিতার শাশুড়ির মুখে মেয়ে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার খবর পেয়েই সেই বাড়িতে ছুটে যান রাজা মণীন্দ্র রোডের বাসিন্দা তপনবাবুরা। অভিযোগ, মেয়ের শ্বশুরবাড়ির দোতলায় ওই তরুণীর ঘরে ঢুকে তাঁরা দেখেন, অনিন্দিতা সেখানে নেই। পরে শাশুড়ির কথামতো শৌচাগারের দরজা খুলে দেখেন, সেখানে মেঝেতে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছেন অনিন্দিতা। আর পাশের একটি ঘরে বসে কাঁদছে তাঁদের বছর নয়েকের নাতনি। সঙ্গে সঙ্গে অনিন্দিতাকে তুলে তপনবাবু এবং তাঁর ছেলে মিলে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়ে দেন হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।

Advertisement

পরিবার সূত্রের খবর, বছর দশেক আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজের পছন্দে পাড়ারই যুবক গৌতমকে বিয়ে করেন অনিন্দিতা। গৌতমের বাড়ি তাঁদের বাড়ির কয়েকটি বাড়ির পরেই। বিয়ের সময়ে গৌতম অনুষ্ঠান বাড়ির ফোটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করলেও গত চার-পাঁচ বছর ধরে কোনও কাজও করতেন না তিনি। পুরো সংসার চলত মেয়ের শাশুড়ি ঝর্না দাসের টাকায়। ঝর্নাদেবী বিএসএনএল-এ কাজ করেন বলে জানিয়েছেন তপনবাবু।

পুলিশের কাছে তপনবাবু জানিয়েছেন, এ দিন নাতনি কাঁদতে কাঁদতে তাঁদের বলেছে, রাতে তার বাবা মাকে খুব মেরেছিল। মারতে মারতে গৌতমই অনিন্দিতাকে শৌচাগারে নিয়ে গিয়েছিল বলেও নাতনি জানিয়েছে বলে দাবি তপনবাবুর। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমার জামাই-ই ওকে মারার পরে গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’’ তপনবাবু আরও জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে মেয়ে একদমই ভাল ছিল না। প্রায়ই জামাই মদ্যপান করে এসে রাতে মেয়েকে মারধর করতেন। তিনি বলেন, ‘‘অনেক বার মেয়েকে বলেছিলাম চলে আয়। কিন্তু ও আসতে চাইত না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন