রেবাদেবীর ছেলে সঞ্জীবশঙ্কর গুপ্ত (বাঁ দিকে)। শনিবার তাঁদের ফ্ল্যাটে তালা লাগিয়ে দিচ্ছে পুলিশ (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র
তিন দিন ধরে বৃদ্ধা মায়ের মৃতদেহ আগলে রেখেছিলেন ছেলে। চেতলার ফ্ল্যাটে মায়ের দেহ বাড়ির মধ্যে রাখা যাবতীয় কাপড়ে মুড়িয়ে শুক্রবার দুপুরে দাহ করার চেষ্টা করেন ছেলে সঞ্জীবশঙ্কর গুপ্ত। বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশের সন্দেহ হয়, এই মৃত্যুর পিছনে কোনও রহস্য রয়েছে। তবে শনিবার ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গেল, হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েই মৃত্যু হয়েছে চেতলার ওই বৃদ্ধার।
শুক্রবার রাতে চেতলার শঙ্কর বসু রোডে একটি আবাসনের নীচের তলার একটি ঘর থেকে রেবা গুপ্ত (৮২) নামে ওই বৃদ্ধার অর্ধদগ্ধ দেহ উদ্ধার হয়। শুক্রবার রাতেই রেবাদেবীর ছেলে সঞ্জীবশঙ্করকে আটক করে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। কিন্তু পুলিশ সূত্রের খবর, মানসিক ভাবে সুস্থ না থাকায় সঞ্জীবশঙ্কর পুলিশকে মায়ের মৃত্যুর কারণ হিসেবে বিভিন্ন সময়ে অসংলগ্ন কথা বলে বিভ্রান্ত করেছেন। শনিবার সঞ্জীবশঙ্করকে আলিপুর আদালতের অনুমতি নিয়ে পাভলভ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শনিবার মৃতার দেহ ময়না-তদন্তের পরে জানা যায়, তিন দিন আগেই রেবাদেবী হঠাৎ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত বৃদ্ধা দীর্ঘদিন ধরে জরায়ুতে সংক্রমণে ভুগছিলেন। বার্ধক্যজনিত নানা অসুখও ছিল তাঁর।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বাবা-মায়ের একমাত্র পুত্র সঞ্জীবশঙ্কর মেধাবী ছাত্র ছিলেন। সঞ্জীবের বাবা পেশায় চিকিৎসক বছর দশেক আগে মারা যান। মা রেবাদেবী ভবানীপুরে একটি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা। পদার্থবিদ্যা নিয়ে পিএইচডি করে সঞ্জীবশঙ্কর পঞ্জাবের মোহালিতে চাকরি করতেন। কিন্তু কোনও কারণে তাঁর চাকরি চলে যায়। স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদও হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে চেতলার ফ্ল্যাটে মায়ের সঙ্গেই থাকতেন সঞ্জীবশঙ্কর। ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা জানান, ওঁরা কারও সঙ্গে তেমন মেলামেশা করতেন না। শনিবার দুপুরে চেতলার রেবাদেবীর ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে দেখা গেল, এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষী ইন্দ্র রায়ের অভিযোগ, ‘‘দিন পনেরো আগে সঞ্জীবশঙ্করবাবুর সঙ্গে কেউ দেখা করতে এসেছিলেন। সেই ব্যক্তিকে ওঁর ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দিলে পরে সঞ্জীববাবু আমাকে মারধর করেছিলেন।’’ ইন্দ্রবাবুর কথায়, ‘‘সঞ্জীববাবুদের ফ্ল্যাটের দরজা-জানলা সব সময়ে বন্ধ থাকত। ওঁরা কারও সঙ্গে কথা বলতেন না। শুক্রবার দুপুর থেকে ওঁদের ফ্ল্যাট থেকে পোড়া পোড়া গন্ধ বেরোতে থাকে। পরে গোটা আবাসন জুড়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শনিবার দুপুরে এসএসকেএম হাসপাতালে দিদির দেহ নিয়ে হাজির ছিলেন মৃতার ভাই শৈবাল সেন। তবে তিনি বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আত্মীয়ের মৃতদেহ বাড়ির মধ্যে আগলে রাখার ঘটনা নতুন নয়। মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল বলছিলেন, ‘‘এ রকম মনোরোগীরা এতটাই কাল্পনিক জগতে বাস করেন যে, তাঁরা যাবতীয় বাস্তবজ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। ওঁরা একটি মানুষকেই পৃথিবী বলে মনে করে মায়ের দেহ আগলে রাখতে পিছপা হন না।’’