দেড় যুগ অত্যাচার সয়ে থানায় বধূ

অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনীর অফিসার, দেবাশিস দত্তরায়। ১১০ কেজি ওজনের বলিষ্ঠ চেহারা। অনুপার দাবি, বাঁচার প্রাণপণ চেষ্টায় বরকে কী ভাবে যেন ঠেলে সরিয়ে দেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:১৫
Share:

—প্রতীকী ছবি।

সহ্যের বাঁধ ভাঙল লক্ষ্মীপুজোর সকালে। অভিযোগ, স্ত্রী অনুপার ঘাড় ধরে তখন জ্বলন্ত গ্যাসের মধ্যে মুখটা ঠেসে ধরতে যাচ্ছেন তাঁর স্বামী।

Advertisement

অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনীর অফিসার, দেবাশিস দত্তরায়। ১১০ কেজি ওজনের বলিষ্ঠ চেহারা। অনুপার দাবি, বাঁচার প্রাণপণ চেষ্টায় বরকে কী ভাবে যেন ঠেলে সরিয়ে দেন তিনি। আশ্রয় নেন একতলায় প্রতিবেশিনীর ফ্ল্যাটে। ১৮ বছরের দাম্পত্যে প্রতিবাদের সিদ্ধান্তও তখনই তিনি নেন বলে জানিয়েছেন ওই মহিলা।

প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা অনুপা দত্তরায়ের স্বামী কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনী (সিআইএসএফ)-র সাব-ইনস্পেক্টর। কাগজের বিজ্ঞাপন দেখে ২০০০ সালে তাঁদের বিয়ে হয়েছিল। বরের অত্যাচার, মারধর, প্রাণনাশের হুমকির কথা জানিয়ে এ বার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন মহিলা। সোমবার সকালে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে ঢাকুরিয়ার বাড়ি থেকে এক শুভানুধ্যায়ীর বাড়িতে চলে আসেন মহিলা। অনুপার মেয়েও এ দিন আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘বাবার সঙ্গে আর আমাদের থাকা সম্ভব নয়! বাবার হাত থেকে যে ভাবে হোক বাঁচার চেষ্টা করছি।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: চাঁদার জন্য প্রৌঢ়কে মারধর, ধৃত

স্বামীর নামে রবিবার গরফা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁর স্ত্রী। অভিযুক্তকে ফোন করা হয়েছিল। ফোন বন্ধ ছিল। পরে তাঁর ঢাকুরিয়ার বাড়িতে গিয়েও কথা বলার চেষ্টা হয়। কিন্তু দেখা মেলেনি। অভিযুক্তের ৮৫ বছরের বৃদ্ধা মা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। অনুপা অবশ্য স্বামীর সঙ্গে শাশুড়িও মারধর করেন বলে অভিযোগ করেছেন।

স্বামীর নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ নির্যাতিতার।

অনুপার বক্তব্য, রগচটা বরের অত্যাচার, নিষ্ঠুরতা চলছে দাম্পত্যের গোড়া থেকেই। তাঁর কথায়, ‘‘এত দিন মেয়ের মুখ চেয়ে সব সয়েছি। মা-বাবা আলাদা হলে মেয়ের কষ্ট হবে ভেবে পিছিয়ে এসেছিলাম। এখন মেয়েই বলছে, প্রতিবাদ না-করলে আমরা কেউ বাঁচব না!’’ প্রতিবাদ না-করলে তিনি নিজে মায়ের সঙ্গে থাকবেন না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন একাদশ শ্রেণির ছাত্রী মেয়েটি।

আরও পড়ুন: বৃদ্ধার গলা টিপে লুটের চেষ্টা, ধৃত ১

ঠিক কী কারণে অশান্তি?

অনুপার দাবি, বিয়েতে ২০ হাজার টাকা নগদ, আসবাবপত্র, সোনাদানা সব স্ত্রীর বাপের বাড়ির থেকে আদায় করেছিলেন তাঁর স্বামী। কিন্তু নানা ছুতোয় তখন থেকেই নির্যাতনের শুরু। অনুপার অভিযোগ, ‘‘সকালে ‘চা কই’ বলে মারধর শুরু হয় বরের।’’ তাঁর স্বামী বিশাখাপত্তনমে কর্মরত। এখন ছুটিতে কলকাতায় এসেছেন। স্ত্রীর অভিযোগ, স্বামী সংসারে টাকা দেওয়া থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে অশান্তি করেন। ইচ্ছে মতো মেয়ে ও স্ত্রীকে পেটান। এর আগেও তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে স্বামী পুড়িয়ে মারার ভয় দেখিয়েছিলেন বলে অভিযোগ স্ত্রীর। অনুপা জানিয়েছেন, বরের বাঁধা বুলি, ‘আমি পুলিশ! মেরে এমন কেস সাজাব, লোকে ভাববে তোর মাথা খারাপ, আত্মহত্যা করেছিস!’ এ বার মহিলা কমিশন ও গরফা থানার দ্বারস্থ হন তিনি। মহিলার কথায়, ‘‘এখন ও বলছে, কেস না-তুললে মেরে দেব। তাই বাড়ি ঢুকতে ভয় পাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন