‘স্টোনম্যান’-এর কায়দায় মাথা থেঁতলে খুন, দেহ উদ্ধার ময়দানে

ভোরের ময়দানে টহল দিচ্ছিলেন কয়েক জন পুলিশকর্মী। হঠাৎ তাঁরা খেয়াল করেন, একটি গাছের আড়ালে কেউ শুয়ে আছেন। কাছে গিয়ে তাঁরা দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছেন বছর তিরিশের এক মহিলা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৪৩
Share:

অকুস্থল: ময়দানের এই এলাকাতেই মেলে দেহ। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

ভোরের ময়দানে টহল দিচ্ছিলেন কয়েক জন পুলিশকর্মী। হঠাৎ তাঁরা খেয়াল করেন, একটি গাছের আড়ালে কেউ শুয়ে আছেন। কাছে গিয়ে তাঁরা দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছেন বছর তিরিশের এক মহিলা। মাথার এক দিক থেঁতলানো। পরনের শাড়ি অবিন্যস্ত। একটু দূরে পড়ে রয়েছে রক্তে মাখা একটি পাথর। পাশে গাছের গুঁড়িতে লেগে রয়েছে রক্ত ও মাথার ঘিলু।

Advertisement

লালবাজার জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকালে ওই পুলিশকর্মীদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ময়দান থানার তদন্তকারীরা রাগবি মাঠের উত্তর দিক থেকে ওই মহিলার দেহ উদ্ধার করেন। এ দিন বিকেল পর্যন্ত মৃতার পরিচয় জানতে পারেনি পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, ওই মহিলা ছিলেন ভবঘুরে। রাতে ময়দানের ওই এলাকাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। সেই সময়ে ‘স্টোনম্যান’-এর কায়দায় কোনও দুষ্কৃতী পাথর দিয়ে মাথায় আঘাত করে তাঁকে খুন করেছে। ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টও বলছে, ভারী ও ভোঁতা কোনও অস্ত্র দিয়েই ওই মহিলার মাথায় আঘাত করা হয়েছিল। মৃতার দেহেও বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে খুন হওয়ার আগে ওই মহিলা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন কি না, তা এখনও জানা যায়নি। দেহ উদ্ধারের পরেই ওই এলাকা থেকে পুলিশ এক জনকে আটক করেছে। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘রাগবি মাঠের উত্তর দিকের পুকুরের কাছ থেকে ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তাঁর পরনের লুঙ্গিতে রক্তের দাগ মিলেছে। অসংলগ্ন কথা বলছিলেন ওই ব্যক্তি।’’

পুলিশ সূত্রের খবর, নব্বইয়ের দশকে কলকাতার ফুটপাতে ঘুমন্ত অবস্থায় পাথর দিয়ে আঘাত করে খুন করার একাধিক ঘটনা ঘটেছিল। রহস্যময় সেই খুনি বা খুনির দল লোকের মুখে আজও ‘স্টোনম্যান’ নামে পরিচিত। প্রায় পনেরোটির মতো ঘটনায় দেখা যায়, একই ভাবে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে খুন করা হয়েছে ফুটপাতে শুয়ে থাকা ব্যক্তিকে। কিন্তু লালবাজার ওই রহস্যের উদ্ঘাটন করতে পারেনি।

Advertisement

সম্প্রতি ময়দান এলাকার গঙ্গাসাগর মাঠের ধার থেকে উদ্ধার হয়েছিল দু’বছরের একটি শিশুর মৃতদেহ। তদন্তে জানা যায়, ওই শিশুটির বাবাই তাকে পাথর দিয়ে থেঁতলে মেরেছিল। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এখন পুলিশি হেফাজতেই রয়েছে সে। শিশু খুনের কিনারা হলেও বছর দু’য়েক আগের দু’টি খুনের ঘটনায় এখনও অধরা অভিযুক্তেরা। দু’টি ঘটনাতেই অন্যত্র খুন করে ময়দানের নির্জন এলাকায় রাতের অন্ধকারে দেহ ফেলে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। ২০১৬ সালের অগস্টে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর নীচে মাছের ড্রাম থেকে এক যুবকের দেহ মেলে। ওই বছরেরই নভেম্বরে উট্রাম রোডে উদ্ধার হয়েছিল এক মহিলার দেহ। দু’টি ঘটনাতেই খুনের কিনারা তো দূর, দেহ শনাক্তও করতে পারেনি পুলিশ।

এ দিন সকালে ওই দেহ উদ্ধারের পরেই ঘটনাস্থলে যান কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার মিরাজ খালিদ ও হোমিসাইড শাখার অফিসারেরা। পরে ঘটনাস্থলে যান ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরাও। পুলিশের অনুমান, পাথরটি তিন-চার ফুট উপর থেকে ওই মহিলার মাথায় ছোড়া হয়। যার জেরে রক্ত এবং ঘিলু ছিটকে গিয়ে গাছের গুঁড়িতে লাগে। রাগবি মাঠের যে দিকে এই ঘটনা ঘটেছে, সেখানে সচরাচর কেউ যায় না। ওই জায়গায় সিসি ক্যামেরাও নেই। উট্রাম

রোড এবং জওহরলাল নেহরু রোড দিয়ে সেখানে যাওয়া যায়। ওই দুই রাস্তার ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন