এই শহরে রাতপথের বিভীষিকা ফের মনে পড়ে গেল ওঁদের

‘বাড়ির মহিলারাই পারেন শিক্ষা দিতে’

শোভাবাজারের তারক চ্যাটার্জি লেনে আমাদের বাড়ির কাছেই সে দিন কাকভোরে কয়েক জন তরুণ শ্লীলতাহানি করে আমার মেয়ের। সঙ্গে ছিলেন আমার হবু জামাইও।

Advertisement

এক নিগৃহীতার বাবা

শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৫৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

আমার মেয়ের সঙ্গে অন্যায় হয়েছিল বাড়ির দোরগোড়ায়। গত বছরের ২৬ এপ্রিল। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে শুধু যে ওরই অনেক সময় লেগেছে, এমন নয়। আমারও লেগেছে। এখনও কোনও মেয়েকে রাস্তায় বিপদে পড়তে হয়েছে শুনলে চিন্তা হয়। মেয়ের বাবা তো, বুঝি।

Advertisement

শোভাবাজারের তারক চ্যাটার্জি লেনে আমাদের বাড়ির কাছেই সে দিন কাকভোরে কয়েক জন তরুণ শ্লীলতাহানি করে আমার মেয়ের। সঙ্গে ছিলেন আমার হবু জামাইও। সেই সময়ে খবরের কাগজে সকলেই পড়েছিলেন, কী ভাবে রাস্তার মোড় থেকে গাড়িটা তাড়া করে মোটরবাইক নিয়ে এসে ওদের পথ আটকেছিল ছ’টি ছেলে। আমাদেরই বাড়ির সামনে এসে মেয়ের পোশাক ধরে কেউ টানার সাহস করতে পারে, এর আগে দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি কখনও। বহু বছর ধরেই কাজের খাতিরে শহরের বাইরে থাকে মেয়ে। কয়েক দিনের জন্য বাড়িতে এসে এই অভি়জ্ঞতা হয়েছিল ওর। এই শহরেই আবার দু’জন মহিলা এমন বিপদে পড়েছেন শুনে মেয়ের মুখটা ভেসে উঠল চোখের সামনে।

সে দিনের ঘটনার পরে পুলিশের সাহায্য যে পাইনি তেমন নয়। অভিযোগ করেছিলাম থানায়। অভিযুক্ত সকলেরই বয়স ছিল খুব কম। ওদের বাবা-মায়েরা থানায় এসে পায়ে ধরলেন, ক্ষমা চাইলেন। আমার মেয়ের তা দেখে মন খারাপ হল। সত্যিই ছেলে ভুল করলে বাবা-মায়ের শাস্তি পাওয়ার কারণ নেই। তাঁদের তো দোষ নয়। মেয়ে বলল, ‘বাবা ছেড়ে দাও’। তাই আমরা অভিযোগ তুলে না নিলেও, তা নিয়ে আর এগোইনি।

Advertisement

তবে আতঙ্কটা তো কাটেনি। সেই দিনটা এখনও মন পড়লে মেয়ের জন্য ভয় করে। কী অশালীন আচরণ করেছিল ছেলেগুলো। দোষ কী ছিল আমার মেয়ের? রাতভর কাজ করে, ভোরে বাড়ি ফিরছিল। ওর গাড়ির চালককে পর্যন্ত ছাড়েনি ওরা। গাড়ি থেকে নামিয়ে এনে মেরেছিল।

আমরা ছেড়ে দিলেও বারবার এমন ঘটনায় অভিযুক্তদের ছাড়া পাওয়া ঠিক নয়। শুনছি পরপর দু’দিনে শহরের দু’প্রান্তে দু’জন মহিলার সঙ্গে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এক বার ছাড় পেলে ফের যে এমন করবে না এই অপরাধীরা, তার কী নিশ্চয়তা আছে? যখন মেয়ের সঙ্গে এমন ঘটেছিল, সে দিন আমিই ধাওয়া করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলাম ওই ছ’জনকে। আমি যেমন আমার মেয়েকে বাঁচাতে এগিয়ে গিয়েছিলাম, এমন দোষীদের বাড়ির লোকেদেরও নিজের ছেলেকে শোধরাতে এগিয়ে আসা উচিত। এমন যুবকদের বাড়ির মহিলারা যদি এগিয়ে আসেন তাদের শাসন করতে, তবেই ঠিক শিক্ষা দেওয়া যাবে ওদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন