অভিজ্ঞতার অভাবে কাঠ পচেই ডুবেছিল নৌকা

কেএমডিএ সূত্রের খবর, ভাসমান বাজারে নৌকার সংখ্যা ছিল ১১৪টি। এর মধ্যে ১১২টি নৌকা জলাশয়ে রয়েছে।

Advertisement

কৌশিক ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৯ ০০:০৫
Share:

ডুবন্ত: পাটুলির ভাসমান বাজারে ডুবছে নৌকা। —ফাইল চিত্র

গোড়ায় গলদ।

Advertisement

দর্শনীয় ভাসমান বাজার তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় অন্তর নৌকা যে রোদে শুকোতে হয় কিংবা রং করতে হয়— খেয়াল রাখা হয়নি সে দিকে। আর তার জেরেই ঘটেছে বিপত্তি। পাটুলির ভাসমান বাজারের অধিকাংশ নৌকাই বেশ কমজোরি হয়ে পড়েছে। কয়েকটি নৌকা জলে ডুবেও গিয়েছে।

কেএমডিএ সূত্রের খবর, ভাসমান বাজারে নৌকার সংখ্যা ছিল ১১৪টি। এর মধ্যে ১১২টি নৌকা জলাশয়ে রয়েছে। বাকি ১২টি আপৎকালীন ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য মজুত রয়েছে। কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন ডুবে যাওয়া নৌকার সংখ্যা মাত্র দু’টি। যদিও বিক্রেতাদের দাবি, বাজারের ৫টি নৌকা ডুবেছে। কয়েক মাস আগে ভাসমান বাজারের জলাশয়ে নৌকাডুবির পরে কেএমডিএ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। প্রাথমিক রিপোর্টে কর্তৃপক্ষের দাবি, নৌকার মান খারাপ হয়ে গিয়েছিল। অধিকাংশ নৌকাই ডুবে যেতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই টনক নড়ে কেএমডিএ-র। কারণ নৌকাগুলির রক্ষণাবেক্ষণই হয়নি। ফলে নতুন করে নৌকা তৈরি এবং মেরামতির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেএমডিএ কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

কেন এই অবস্থা?

সূত্রের খবর, দোকানিরা না কি কেএমডিএ, কারা নৌকার রক্ষণাবেক্ষণ করবেন— এই বিভ্রান্তির জেরে আড়াই বছর আগে বাজার চালু হওয়া ইস্তক নৌকাগুলি জল থেকে আর ডাঙায় ওঠেনি। হুগলির বলাগড়ের যে সংস্থাকে নৌকা তৈরির বরাত দেওয়া হয়েছিল, তাদের এক কর্মীর কথায়, ‘‘নদীতে কিংবা সাগরে নৌকা ব্যবহারের পরে নির্দিষ্ট সময় অন্তর তা রোদে শুকোতে দিতে হয়। নৌকাগুলিকে রং করতে হয়। এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু হয়নি। ফলে নৌকার নীচের কাঠ পচে গিয়েছিল।’’ তদন্তে জানা গিয়েছে, নৌকাগুলির পাটাতনের প্লাইউডও নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। নৌকা ফুটো হয়ে যাওয়ায় জল ঢুকে নৌকা ডুবিয়ে দিচ্ছে। ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে কেএমডিএর নজরদারি নিয়েও।

মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের অভিযোগ, ‘‘কেএমডিএ নৌকাগুলি তৈরি করে বাজারের হকারদের হস্তান্তর করে। তাঁদেরই এই নৌকা মেরামতি করার কথা ছিল। বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে শর্তানুযায়ী রাজ্য সরকার শুধু এক বারই নৌকা মেরামতি এবং নতুন নৌকা তৈরি করে দেবে। বারবার তা করা সম্ভব নয়।’’

সূত্রের খবর, কেএমডিএ ওই সংস্থাকে শক্ত কাঠের পরিবর্তে প্লাইউড ব্যবহার করে পাটাতন তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল। পাতলা প্লাইউড যে নৌকার জন্য উপযুক্ত নয়, তা বোঝা যায়নি। তবে সেটিই নৌকাডুবির কারণ হিসেবে মানতে নারাজ কেএমডিএ। কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছেন যে, কেএমডিএ-র নৌকা তৈরির অভিজ্ঞতা নেই। তাই নজরদারির দায়িত্ব বিক্রেতাদেরই

নিতে হবে।

অন্য দিকে বাজারের বিক্রেতাদের বক্তব্য, নৌকাগুলি মেরামতির যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা না থাকায় তাঁরা মেরামতি করতে পারেননি। তাঁদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষকে বলা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা হয়নি। উন্নয়ন সংস্থার যুক্ত সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রাণবন্ধু নাগ বলেন, ‘‘ভাসমান বাজার কলকাতার একটি আন্তর্জাতিক মানের প্রকল্প। এই প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণ কী করে হবে, তা কর্তৃপক্ষকেই ঠিক করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনার বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’

কেএমডিএ জানিয়েছে, আপাতত ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসেবে দু’টি নৌকা সারাই করে মেরামতির খরচ আন্দাজ করা হবে। তবে নৌকা নির্মাণকারী সংস্থাকেই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হবে।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন