দিন হোক বা রাত, ট্যাক্সির ‘না’ শুনতেই অভ্যস্ত শহর

ধর্মতলা মোড়ে দাঁড়িয়ে সালকিয়া যাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ট্যাক্সি খুঁজছিলেন এক ব্যক্তি। কোনও ট্যাক্সিই দাঁড়াচ্ছিল না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৪৪
Share:

সন্ধ্যা নামলেই শহর থেকে শহরতলি, ট্যাক্সির প্রত্যাখ্যানের এমন ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতি মুহূর্তে।

—দাদা, বালি যাবেন?

Advertisement

—যেতে পারি। ৫০ টাকা বেশি দেবেন।

—কেন?

Advertisement

—আমাকে তো খালি গাড়ি নিয়ে ফিরতে হবে।

বেশি টাকা দিতে রাজি না হতেই হুশ করে হাওয়া হয়ে গেল হলুদ রঙের ট্যাক্সিটা। যার গায়ে নীল রঙে লেখা ‘নো রিফিউজাল’।

ধর্মতলা চত্বরে ট্যাক্সির প্রত্যাখ্যানের এমন ঘটনা ঘটে চলেছে প্রতি মুহূর্তে। সন্ধ্যা নামলেই শহর থেকে শহরতলি— গন্তব্য যা-ই হোক, অধিকাংশ ট্যাক্সিচালকই বেশি টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ। গাঁটের অতিরিক্ত কড়ি খরচ না করলে ট্যাক্সি মেলাই ভার। অনেকের আবার অভিযোগ, গাঁটের কড়ি বেশি খরচ করেও ট্যাক্সি মিলছে না। সটান ‘যাব না’ বলে দিচ্ছেন চালকেরা। অথচ, প্রতিটি ট্যাক্সির গায়েই জ্বলজ্বল করছে ‘নো রিফিউজাল’।

যাত্রী-প্রত্যাখ্যান নিয়ে সরব হয়েছে ট্যাক্সিমালিক সংগঠনগুলিও। রাজ্য সরকার থেকে পুলিশ-প্রশাসনও এ ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিচ্ছে। কিন্তু ফল যে মিলছে না, সম্প্রতি তারই প্রমাণ মিলল শহরের কিছু জায়গায় চক্কর দিয়ে।

রাত ৮টা, চাঁদনি চক মেট্রো ও ধর্মতলা চত্বর: গন্তব্য বরাহনগর। বেশ কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করার পরে এল একটি হলুদ ট্যাক্সি। হাত দেখাতেই গতি আস্তে করে চালক জানতে চাইলেন, ‘কোথায় যাবেন?’ বরাহনগর শুনেই কোনও উত্তর না দিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন তিনি।

ধর্মতলা মোড়ে দাঁড়িয়ে সালকিয়া যাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ট্যাক্সি খুঁজছিলেন এক ব্যক্তি। কোনও ট্যাক্সিই দাঁড়াচ্ছিল না। শেষে একটি এসে দাঁড়ালেও চালক ভাড়া হাঁকলেন দ্বিগুণ! মুকুল শর্মা নামে ওই ব্যক্তি বললেন, ‘‘চালক এত ভাড়া চাইছেন, যা দু’বার যাতায়াত করলেও লাগে না। কেউই মিটারে যেতে রাজি নন।’’ একই ভাবে যাত্রী প্রত্যাখ্যান দেখা গেল ধর্মতলার একটি হোটেলের সামনেও। সার দিয়ে পার্ক স্ট্রিটের দিকে মুখ করে ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে থাকলেও গন্তব্য ঠিক হচ্ছে চালকের মর্জি মতো। দীপ সরকার নামে এক যাত্রীর অভিযোগ, ‘‘কোনও ট্যাক্সিই ডানকুনি যেতে চাইছে না। সকলেরই যুক্তি, রাত হয়ে গিয়েছে বা খালি ফিরতে হবে।’’

রাত ৯টা, রাসবিহারী মোড়: প্রায় ফাঁকা রাসবিহারী অ্যাভিনিউ। কালীঘাট মেট্রো স্টেশন থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সির খোঁজ শুরু করলেন মধ্যবয়স্কা এক মহিলা। অনেক ক্ষণ পরে একটি ট্যাক্সি এসে দাঁড়াতেই মহিলা জানতে চাইলেন, সোনারপুর যাবেন কি না। চালক যথারীতি প্রচুর ভাড়া হাঁকলেন। মহিলা রাজি হলেন না। কিছু পরে এল আর একটি ট্যাক্সি। এক তরুণী হরিদেবপুর যাবেন। কিন্তু রাজি হলেন না চালক। কারণ, ‘অনেক রাত হয়ে গিয়েছে।’

রাত সাড়ে ৮টা, মহানায়ক উত্তমকুমার মেট্রো স্টেশন: বারবার হাত দেখানোর পরে থামল একটি ট্যাক্সি। উল্টোডাঙা যাওয়ার কথা বলতেই চালক সটান উত্তর দিলেন, ‘ওই দিকে যাব না।’ কিছু ক্ষণ পরে দেখা গেল, মেট্রো স্টেশনের পাশেই দাঁড়িয়ে তিনটি ট্যাক্সি। একটি ট্যাক্সিকে মন্দিরতলা যাওয়ার কথা বলতেই চালক বললেন, ‘‘৩০ টাকা বেশি দিলে যাব। না-হলে যাব না।’’ কিন্তু বেশি কেন দিতে হবে? প্রশ্ন করতেই এগিয়ে এলেন এক যুবক। বললেন, ‘‘মন্দিরতলায় গেলে ওখানকার ইউনিয়ন থেকে দাঁড়াতে দেয় না। আর ভাড়া দিলেও হয়তো আন্দুলের দিকে দিয়ে দেবে। ও দিকে গেলে খুব অসুবিধা হয়।’’

কথার মধ্যেই একটি পরিবার এসে জানতে চাইল, ‘শিয়ালদহ যাবেন?’ আর এক চালক বললেন, ‘পাঁচ জনকে নেওয়া যাবে না। আর যেতে গেলে ২৫০ টাকা দিতে হবে।’ শেষমেশ বাস ধরার জন্য এগিয়ে গেল ওই পরিবারটি।

রাত সওয়া ৯টা, রবীন্দ্র সরোবর: বালি, বরাহনগর বা সালকিয়া যেতে রাজি হলেন না কোনও ট্যাক্সিচালকই। প্রত্যেকেরই যুক্তি, উল্টো দিকে তাঁরা যাবেন না। অথচ, দুই যুবক কবরডাঙা যাওয়ার জন্য ট্যাক্সি খুঁজেও পেলেন না।

অধিকাংশ যাত্রীরই অভিযোগ, শহরের বেশির ভাগ ট্যাক্সিই চলে চালকের মর্জিতে। দুপুর হলেই অজুহাত, ‘এখন খাওয়ার সময়’ কিংবা ‘এখন গ্যারাজ করব’। আর রাত ৮টা বাজলেই শোনা যায়, ‘এখন গাড়ি জমা করতে হবে’ কিংবা ‘রাতে ও দিক থেকে ফেরার যাত্রী পাব না’। এ সব শুনেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন যাত্রীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন