অমিতকুমার মুখোপাধ্যায়
মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মৃত যুবকের অঙ্গ দানে নতুন জীবন পেলেন চার জন। সে সঙ্গেই এ শহরে আবার হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন হল।
সপ্তমীর রাতে বাইক চালিয়ে পুজো দেখতে বেরিয়েছিলেন পর্ণশ্রীর বাসিন্দা বছর তেইশের অমিতকুমার মুখোপাধ্যায়। উল্টোডাঙায় ঘটে দুর্ঘটনা। তাঁকে ভর্তি করানো হয় ই এম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। দিন কয়েকের চেষ্টাতেও শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। চিকিৎসকেরা বিভিন্ন পরীক্ষা করে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। অমিতের ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করা হয়। শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন হবে না জানার পরেই অমিতের পরিবার তাঁর অঙ্গদানে সম্মতি জানায়। বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য ভবনে সে কথা জানানো হয় হাসপাতালের তরফে।
ওই বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অমিতের দু’টি কিডনি, লিভার, হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে অস্ত্রোপচার সফল হয়। ওই হাসপাতালেই পাঁচলার অণিমা নস্করের দেহে হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন হয়। এন্টালির বাসিন্দা মনোজ হেলার দেহে লিভার প্রতিস্থাপন হয়েছে। হলদিয়ার বাসিন্দা সনৎলাল যাদবের দেহে কি়ডনি প্রতিস্থাপন হয়। আর একটি কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালে, যাদবপুরের বাসিন্দা সৈকত সাধুখাঁর দেহে। অমিতের ত্বক রাখা হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালের স্কিন ব্যাঙ্কে।
হৃৎপিণ্ড গ্রহিতা অণিমা নস্করের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগেও এ শহরের এক হাসপাতালে অণিমার হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের চেষ্টা হয়েছিল। সব মাপকাঠি ঠিক না থাকায় প্রতিস্থাপন হয়নি। এ বার প্রতিস্থাপন সফল হওয়ায় স্বস্তিতে তাঁর পরিবার। এই নিয়ে শহরে ছ’মাসের মধ্যে চারটি হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন হল। এর আগে আনন্দপুর এবং মুকুন্দপুরের দু’টি বেসরকারি হাসপাতালে তিনটি হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন হয়েছিল। এ বছর ২১ মে প্রথম হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন হয়েছিল ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা দিলচাঁদ সিংহের। এর পরে সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতার বাসিন্দা সমীরণ দত্ত ও হাওড়ার বাসিন্দা রাখি মণ্ডলের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন হয়। অক্টোবরে ফের পাঁচলার প্রৌঢ়ার দেহে হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন হল। তাঁরা সকলেই এখন ভাল আছেন। তবে এই প্রথম হৃৎপিণ্ড দাতাও এ শহরের। এর আগে প্রত্যেক হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে দাতা ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দা ছিলেন। কখনও বিহার, আবার কখনও অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে বিশেষ বিমানে কলকাতায় হৃৎপিণ্ড এসেছে। এ শহরের এক তরুণের পরিবারের অঙ্গদানে রাজি হওয়ার ঘটনায় এ সংক্রান্ত সচেতনতা আরও বাড়াবে বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট দুই হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচারের পরে চার জন রোগীই আপাতত সুস্থ। তবে তাঁদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে, দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ওষুধও। অস্ত্রোপচারের ৭২ ঘণ্টা পেরোলে তবেই বলা যাবে বিপদ পুরোপুরি কেটেছে কি না বলে
জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।