কুকুরের সঙ্গে খেলতে গিয়ে গলায় বল, মৃত্যু

নিজের ঘরে বসে সাত মাসের পোষা কুকুরের সঙ্গে ছোট একটি রাবারের বল নিয়ে খেলছিলেন তিনি। কুকুর যেমন মুখে বল নিয়ে মাথা ঝাঁকাতে থাকে, ঠিক সে ভাবে নিজেও বলটিকে দু’পাটি দাঁতের মাঝখানে আটকে মাথা ঝাঁকাচ্ছিলেন ওই যুবক। তা দেখে অতি উৎসাহে হঠাৎ সেই কুকুর লাফিয়ে পড়ে তাঁর উপরে। আর কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই ধাক্কায় ওই যুবকের দাঁতে ধরা বলটি পিছলে ঢুকে যায় তাঁর গলার ভিতরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৫ ০০:৩১
Share:

পোষ্য কুকুর কোলে অর্নেশ। (ইনসেটে) সেই বল। — নিজস্ব চিত্র

নিজের ঘরে বসে সাত মাসের পোষা কুকুরের সঙ্গে ছোট একটি রাবারের বল নিয়ে খেলছিলেন তিনি। কুকুর যেমন মুখে বল নিয়ে মাথা ঝাঁকাতে থাকে, ঠিক সে ভাবে নিজেও বলটিকে দু’পাটি দাঁতের মাঝখানে আটকে মাথা ঝাঁকাচ্ছিলেন ওই যুবক। তা দেখে অতি উৎসাহে হঠাৎ সেই কুকুর লাফিয়ে পড়ে তাঁর উপরে। আর কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেই ধাক্কায় ওই যুবকের দাঁতে ধরা বলটি পিছলে ঢুকে যায় তাঁর গলার ভিতরে। বমি করে, গলায় আঙুল দিয়ে টেনেও কোনও ভাবেই বলটি বার করতে পারেননি তিনি। শেষে ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে লেক গার্ডেন্স এলাকার একটি ফ্ল্যাটবাড়ির চারতলায়। সেখানেই বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন অর্নেশ সিংহানিয়া (২৭) নামে ওই যুবক। বছর তিনেক আগে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পাশ করার পরে বাবা প্রবীর সিংহানিয়ার ব্যবসায় সাহায্য করতেন তিনি।
প্রবীরবাবু শনিবার জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই বহুতলের নিরাপত্তারক্ষী তাঁকে ফোন করে সব জানান এবং দ্রুত বাড়ি চলে আসতে বলেন। বাড়ি ফিরে তিনি দেখেন, তাঁর ছেলেকে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে আনছেন তাঁর স্ত্রী, শ্যালিকা ও প্রতিবেশীরা। স্ত্রী তাঁকে জানান, সন্ধ্যা সা়ড়ে ছ’টা নাগাদ নিজের কুকুর স্কুবি-র সঙ্গে বল নিয়ে খেলছিলেন অর্নেশ। তিনি তাঁর বোনের সঙ্গে ছিলেন অন্য ঘরে। হঠাৎ গোঙানির শব্দ শুনে তিনি দেখেন, অর্নেশ বারান্দার বেসিনে মাথা ঝুঁকিয়ে বমি করার চেষ্টা করছেন আর গলায় আঙুল ঢুকিয়ে কিছু একটা বার করতে চাইছেন। হাতের ইশারায় অর্নেশ তাঁর মাকে জানান, আচমকা স্কুবি লাফিয়ে পড়ায় বল ঢুকে আটকে গিয়েছে তাঁর গলায়। মিনিট দশেক ধরে অনেক চেষ্টাতেও তা বার করতে না পেরে আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়েন অর্নেশ। তাঁর মা-ই খবর দেন প্রতিবেশীদের। ছুটে আসেন নিরাপত্তারক্ষীও। পুলিশ জানায়, একটি গাড়িতে তুলে অর্নেশকে নিয়ে যাওয়া হয় ল্যান্সডাউন রোডের এক বেসরকারি হাসপাতালে। ওই বহুতলের নিরাপত্তারক্ষী শিবনাথ বেছড়া বলেন, ‘‘গলায় বল আটকে যাওয়ায় শুক্রবার রাতে ছেলেটি ছটফট করছিল। সেই অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে শুনলাম সে মারা গিয়েছে।’’

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রে খবর, শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ অর্নেশকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসকেরাও দেখেন, তাঁর গলায় একটি বল আটকে আছে। কিন্তু কোনও রকম চিকিৎসার আগেই ওই যুবকের মৃত্যু হয়। প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসকদের অনুমান, গলায় বলটি আটকে যাওয়ায় শ্বাসরোধ হয়েই মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের। চিকিৎসকদের একাংশের ধারণা, রাবারের বলটি ছোট হলেও খাঁজ কাটা ছিল। ফলে তা চট করে বার করা সম্ভব হয়নি।

শনিবার হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে প্রবীরবাবু জানান, স্কুবি তাঁদের বাড়ির তৃতীয় কুকুর। সাত-আট বছর আগে বাড়ির দ্বিতীয় কুকুরের মৃত্যুর পরে তিনি ঠিক করেছিলেন, আর কুকুর পুষবেন না। কিন্তু অর্নেশ কুকুর ছাড়া থাকতে পারছিলেন না। তাই জানুয়ারি মাসে অর্নেশের জন্মদিনে তাঁর মা-বাবা তাঁকে পমেরানিয়ান প্রজাতির স্কুবিকে উপহার দেন। অর্নেশ কুকুর ছাড়া অন্য পশুপাখিও ভালবাসতেন। টিভিতে জীবজগতের নানা অনুষ্ঠান দেখতেন।

Advertisement

প্রবীরবাবু আরও জানান, শুক্রবার রাত থেকে অর্নেশকে আর দেখতে না পেয়ে একেবারে মনমরা হয়ে পড়েছে কুকুরটি। নাওয়া-খাওয়া বন্ধ। অর্নেশের মৃত্যুর খবরে তাঁদের বাড়িতে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীরা আসছেন। স্কুবি যাতে অত লোকজন দেখে অস্বাভাবিক আচরণ না করে, তাই তাকে একটি খাঁচায় রাখা হয়েছে।

অর্নেশের পরিবার সূত্রে খবর, শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ অর্নেশ প্রবীরবাবুকে ফোন করে তাঁর জন্য খাবার নিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরতে বলেন। প্রবীরবাবু জানান, ছেলেকে তিনি বলেছিলেন, তাঁর শরীরটা ভাল নেই। অফিসের কাছে এলগিন রোডে এক চিকিৎসককে দেখিয়ে তার পরে খাবার কিনে বাড়ি ফিরবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন