দুর্ঘটনার পরে গাড়িটি। শনিবার রাতে। নিজস্ব চিত্র
মাঝরাতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে অভিনেত্রী-মডেল সোনিকা সিংহ চৌহানের মৃত্যুর ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি। ঘটনায় জামিন হলেও তদন্ত এখনও চলছে অভিনেতা বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু তার পরেও কলকাতার রাস্তায় রাতে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর বিরাম নেই। যার জেরে ফের দুর্ঘটনা। এ বারের দুর্ঘটনাস্থল এজেসি বসু রোড এবং থিয়েটার রোডের মোড়। কারও মৃত্যু না হলেও দুর্ঘটনা ঘটানো গাড়িটির অবস্থা দেখে চিন্তিত পুলিশই!
শনিবার রাত দেড়টা নাগাদ দুর্ঘটনায় পড়ে একটি গাড়ি। অভিযোগ, অন্য একটি গাড়ি সেটিকে সামনে থেকে এমন ধাক্কা মারে যে প্রথম গাড়িটির সামনের অংশ পুরোপুরি দুমড়ে যায়। ঠিক সময়ে এয়ারব্যাগ খোলায় চালক এবং দুই আরোহী প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু গাড়ির সামনের অংশ ভেঙে উল্টো দিকের ফুটপাথে ছিটকে গিয়েছিল। আরোহী দুই যাত্রীকে মিন্টো পার্ক সংলগ্ন একটি হাসপাতালে চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও দুর্ঘটনা ঘটানো গাড়িটির খোঁজ মেলেনি।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই রাতে একটি গাড়ি শিয়ালদহ থেকে এজেসি বসু রোড হয়ে শেক্সপিয়র সরণির দিকে ঘুরছিল। সে সময়ে এক্সাইডের দিক থেকে অন্য একটি গাড়ি এসে ওই গাড়িটিতে সজোরে ধাক্কা মারে। ধাক্কার চোটে দুমড়ে মুচড়ে যায় প্রথম গাড়িটি। রাতে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এজেসি বসু রোড এবং থিয়েটার রোড সংযোগস্থলের ১০ মিটারের মধ্যে রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি। কিন্তু ভিতরে কোনও যাত্রী নেই। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, গাড়িটির গতি অতিরিক্ত বেশি ছিল। চালকের আসন এবং তার পাশের আসনের সামনে দু’টি এয়ারব্যাগ খোলা অবস্থায় পড়ে। চালকের পাশের আসনে এবং দরজায় রক্তের দাগ।
মিন্টো পার্ক সংলগ্ন ওই হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, আহত এক আরোহীর কপাল ও মাথায় চোট ছিল। তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও তাঁর সঙ্গী চিকিৎসা না করিয়েই বেরিয়ে যান। ওই দুই আরোহী মদ্যপ ছিলেন বলেও হাসপাতাল থেকে জানানো হয়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, গাড়ির দুই আরোহী কোনও নাইট ক্লাব থেকে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা গাড়িটির তথ্য দিতে না পারায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।
এই ঘটনার পরে ফের মাথাচাড়া দিয়েছে সেই একই প্রশ্ন— মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বন্ধ করা সম্ভব কি না। কারণ, দুর্ঘটনার পরেও পার্ক স্ট্রিট, শেক্সপিয়র সরণি, এজেসি বসু রোড-সহ বিভিন্ন রাস্তা থেকে বেপরোয়া গতিতে একাধিক গাড়িকে বেরোতে দেখা গিয়েছে। ওই দুর্ঘটনার পর পরই দুর্ঘটনাস্থলের পাশ দিয়েই এক যুবক গাড়ি চালিয়ে এমন গতিতে বেরিয়ে যান যে একটি লরির মুখোমুখি হয়েও কোনওক্রমে সেটি বেঁচে যায়। ফলে ঢাকঢোল পিটিয়ে এত প্রচার করা সত্ত্বেও চালকদের একাংশ যে তাকে আমলই দিচ্ছেন না, তার একাধিক ছবি ধরা পড়েছে শনিবার রাতেই।