অস্ত্রোপচারে কাটা পড়ল নার্ভই, হাত অসাড় যুবকের

বিহার থেকে কলকাতায় এসেছিলেন চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হবেন বলে। কিন্তু সুস্থ হওয়া তো দূরের কথা, একটা হাতই সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গিয়েছে বিহারের মজফ্ফরপুর জেলার মধুচাপড়া গ্রামের বাসিন্দা রাজন শর্মার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:১০
Share:

রাজন শর্মার সেই হাত। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র।

বিহার থেকে কলকাতায় এসেছিলেন চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হবেন বলে। কিন্তু সুস্থ হওয়া তো দূরের কথা, একটা হাতই সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গিয়েছে বিহারের মজফ্ফরপুর জেলার মধুচাপড়া গ্রামের বাসিন্দা রাজন শর্মার। ২১ বছরের এই তরুণ এখন কলকাতার বিভিন্ন ডাক্তারের চেম্বারে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সমস্যার সুরাহার আশায়। যদিও এখনও পর্যন্ত কেউই তাঁকে কোনও রকম দিশা দেখাতে পারেননি।

Advertisement

রাজনের অভিযোগ, যে অর্থোপেডিক তাঁর অস্ত্রোপচার করেছিলেন, তাঁকে তিনি সমস্যার কথা সবিস্তার জানিয়েছিলেন। রাজনের কথায়, ‘‘ডাক্তারবাবুকে আমার সমস্যার কথা বলতেই তিনি জানান, কনুইয়ের মধ্যে প্লেট বসানো থাকায় সপ্তাহখানেক সমস্যা হবে। ফিজিওথেরাপি করলে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যাবে।’’ সেই মতো কলকাতা থেকে বিহার ফিরে যান রাজন। কিন্তু বাড়িতে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি করার পরেও হাতের ব্যথা ক্রমশ বাড়তে থাকায় আবার কলকাতায় ফিরে আসেন তিনি।

রাজন বলেন, ‘‘গত ৭ এপ্রিল ওই চিকিৎসক আমাকে কিছু ওষুধ লিখে দেন। আমি পরের দিন ফের বিহারে বাড়ি ফিরে যাই। কিন্তু ওষুধ খাওয়ার ১৫ দিন পরে আমার বাঁ হাতের অসাড় হয়ে যাওয়া আঙুলগুলিতে বড় বড় ক্ষতচিহ্নের সৃষ্টি হয়। তখন আতঙ্কে আমি চিকিৎসার জন্য ফের কলকাতায় ফিরে আসি।’’

Advertisement

কলকাতায় আসার পরে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ছুটিতে থাকায় রাজন ওই হাসপাতালেরই আর এক সার্জন আর বারাসিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। চিকিৎসক আর বারাসিয়া শনিবার আনন্দবাজারকে টেলিফোনে বলেন, ‘‘রাজন মে মাসে আমার কাছে এসেছিলেন। তখন ওঁর বাঁ হাতের আলনার নার্ভের অংশ কাটা ছিল। আমি নিউরোসার্জনের পরামর্শ নিতে বলেছিলাম।’’ এর পরে রাজন ওই হাসপাতালেরই এক জন নিউরোসার্জনকে দেখিয়েছেন। রাজনের দাবি, তিনিও ওই নার্ভটির অংশ বাদ যাওয়ার কথাই বলেন।

ছুটি থেকে ফিরে কাজে যোগ দিয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক অবশ্য সে কথা স্বীকার করেননি বলে রাজনের দাবি। অভিযোগ, ওই চিকিৎসক তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এর কয়েক দিন পরে দ্বিতীয় বার অস্ত্রোপচার হয় রাজনের। কিন্তু তাতেও সমস্যার সুরাহা হয়নি। তখন কনুই থেকে ধাতব প্লেট বার করে দেন ওই চিকিৎসক। কিন্তু তার পরে হাতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। তখন আর সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক কোনও দায়িত্ব নিতে চাননি বলে অভিযোগ। পরে অন্য এক জায়গায় এমআরআই করিয়ে নার্ভ বাদ যাওয়ার কথা জানতে পারেন তিনি।

ছোট থেকেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন ছিল রাজনের। ২০১৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করার পরে সেনাবাহিনীর পরীক্ষায় যোগ দেওয়ার জন্য শরীরচর্চা শুরু করেন তিনি। গত ১ জানুয়ারি নিজের গ্রামে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময়ে মাটিতে পড়ে যান রাজন। তাঁর বাঁ হাতের কনুইয়ের হাড় ভেঙে যায়। তার পরেই চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আসেন। কলকাতার মাড়োয়ারি রিলিফ সোসাইটি হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। তার পরেই তাঁর হাত অসাড় হতে শুরু করে। ভুল অস্ত্রোপচারের অভিযোগ তুলে চিকিৎসকের কঠোর শাস্তির দাবিতে পুলিশ কমিশনার, ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন ও পোস্তা থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি।

রাজনের বক্তব্য, অস্ত্রোপচারের আগে তাঁর হাতের আঙুলে কোনও সমস্যাই ছিল না। অস্ত্রোপচারের সময়েই কোনও ভাবে ওই নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সম্ভাবনার কথা মেনে নিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ। তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘এ ছাড়া ওই সমস্যার আর কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যখন ওই রোগী হাত অসাড় হওয়ার কথা বললেন, তখনও কেন ওই চিকিৎসক এমআরআই করাতে বলেননি, সেটা ভেবেও আশ্চর্য হচ্ছি। এমআরআই করালে আগেই এটা ধরা পড়ত।’’

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে একাধিক বার ফোন করা হয়েছিল। এসএমএসও করা হয়েছিল। তিনি ফোন ধরেননি, এসএমএসেরও জবাব দেননি।

এর পরে কি কোনও ভাবে রাজনের পক্ষে সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, তার আশা খুবই ক্ষীণ। ওই নার্ভ বাদ গেলে সাড় ফেরার আশা থাকে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন