অনলাইন জালিয়াতি, ‘ঝাড়খণ্ড গ্যাং’-এর ৭ জন ধৃত

চিকিৎসা দূর অস্ৎ। বিপদকে ঠেকানোই বড় কথা। এই আপ্তবাক্য শিরোধার্য করা ছাড়া গতি নেই। এ রাজ্যে সক্রিয় অনলাইন ব্যাঙ্ক জালিয়াতির নয়া চক্র ‘ঝাড়খণ্ড গ্যাং’-এর ক’জন পাণ্ডা ধরা পড়ার পরে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে গেল। অনলাইন জালিয়াতি রুখতে আগেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছে কলকাতা পুলিশ। জালিয়াতির পাণ্ডাদের ক’জনের হদিস মেলায় দেখা গেল, জালিয়াতি আগাম ঠেকাতে না-পারলে লোপাট হওয়া টাকা উদ্ধার কার্যত অসম্ভব।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০৪:১২
Share:

চিকিৎসা দূর অস্ৎ। বিপদকে ঠেকানোই বড় কথা। এই আপ্তবাক্য শিরোধার্য করা ছাড়া গতি নেই। এ রাজ্যে সক্রিয় অনলাইন ব্যাঙ্ক জালিয়াতির নয়া চক্র ‘ঝাড়খণ্ড গ্যাং’-এর ক’জন পাণ্ডা ধরা পড়ার পরে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে গেল।

Advertisement

অনলাইন জালিয়াতি রুখতে আগেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েছে কলকাতা পুলিশ। জালিয়াতির পাণ্ডাদের ক’জনের হদিস মেলায় দেখা গেল, জালিয়াতি আগাম ঠেকাতে না-পারলে লোপাট হওয়া টাকা উদ্ধার কার্যত অসম্ভব। আপাতত বোকারো, দেওঘর, জামতাড়ার বাসিন্দা সাত অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়। দেখা যাচ্ছে, প্রি-পেড মোবাইলের রিচার্জ পয়েন্টের সঙ্গে যোগসাজশে ঝাড়খণ্ডের এই চক্রটি জালিয়াতির টাকা সরিয়ে ফেলছে। লালবাজারের এক গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, “চুরির টাকা কখনও রিচার্জ পয়েন্টের অনলাইন ওয়ালেটে ফেলা হচ্ছে, কখনও বা অনলাইন কেনাবেচার অন্য কয়েকটি ওয়ালেটে ভাগ করে রাখা হচ্ছে। কী ভাবে টাকা ব্যবহার হচ্ছে, জানা জটিল।”

এ যাবৎ, হরিদেবপুর ও পর্ণশ্রীর দু’টি অভিযোগের তদন্তে নেমেই সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ। কিন্তু অভিযোগ পেয়েই পুলিশ বুঝেছিল, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা ছাড়া এমন সমস্যা ঠেকানো যাবে না। পুলিশ জানতে পারে, ব্যাঙ্কের লোক সেজে ফোন করে গ্রাহককে তাঁর কার্ডের পিন ব্লক হওয়া বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ হওয়ার ভয় দেখিয়ে কার্ডের তথ্য জেনে নিচ্ছে জালিয়াতেরা। তার পরে স্মার্টফোন মারফত মুহূর্তে সেই অ্যাকাউন্টের টাকা সরানো হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে জালিয়াতি বন্ধ করতে কলকাতা পুলিশের তরফে কিছু প্রস্তাব এখন বিবেচনা করেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। ব্যাঙ্কেই পুলিশের প্রস্তাব, কেউ অনলাইনে টাকা সরানোর সঙ্গে সঙ্গে তা অন্য ওয়ালেটে স্থানান্তরিত হবে না। কয়েক ঘণ্টার জন্য ব্যাঙ্কের জিম্মায় অন্য কোনও একটি ওয়ালেটে টাকা আটকে থাকবে। ইতিমধ্যে টাকা সরানোর এসএমএস চলে যাবে গ্রাহকের কাছে। টাকাটা তখনই জালিয়াতের হস্তগত না হলে, উদ্ধারের উপায় থাকবে।

Advertisement

‘ঝাড়খণ্ড গ্যাং’-এর পাণ্ডাদের ক’জন ধরা পড়ায় দেখা যাচ্ছে, রীতিমতো আঁটঘাট বেঁধেই টাকাটা সরিয়েছে প্রতারকেরা। হরিদেবপুরে কল্যাণী দাসশর্মার অ্যাকাউন্ট থেকে এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা ও পর্ণশ্রীর পারমিতা সরকারের ৬৫ হাজার টাকা সরানোর অভিযোগ পেয়েছিল পুলিশ। গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ভুয়ো ফোন নম্বর দিয়ে অজস্র ই-মেল আইডি বানানো আছে। সেগুলিই এই কাজে ব্যবহার হয়েছে। অনলাইনে কেনাবেচার ওয়ালেট মোবিকুইক মারফত টাকাটা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে সরানো হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে জালিয়াতেরা টাকাটা কোনও মোবাইল রিচার্জ পয়েন্টের অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছে। রিচার্জ পয়েন্ট কর্তাদের লোভ দেখাতে হয়তো এক লক্ষ টাকার রিচার্জ মূল্য বিক্রি করেছে ৮০-৯০ হাজার টাকার বিনিময়ে। এর পরে শ’য়ে-শ’য়ে গ্রাহক সেই অ্যাকউান্টে মোবাইল রিচার্জ করিয়েছেন।

পুলিশ জানায়, ধৃতদের মধ্যে আছে বোকারো ইস্পাতনগরীর বাসিন্দা অজয় কুমার ও অজিত কুমার। তারা রিচার্জ পয়েন্ট চালায়। বোকারোর বাসিন্দা শ্যামসুন্দর, জামতাড়ার রাজা চন্দ্র, সৌরেন বল ও বিক্রমকুমার মণ্ডল, দেওঘরের ইন্দ্রজিৎকুমার বল ফোন করে লোক ঠকায়। বিভিন্ন রিচার্জ পয়েন্টের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ আছে। ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখার ওসি সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার সহযোগীদের মাধ্যমে আরবিআই-এর সঙ্গে সমন্বয় রেখে চলছে লালবাজার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন