পোস্টারে এমনই দশা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বাসস্টপের।— নিজস্ব চিত্র
ফুটপাথ থেকে পার্ক— শহর জুড়ে সৌন্দর্যায়নের নানা কাজ চলছে। কিন্তু শহরের যত্রতত্র পোস্টার লাগানো আজও চলেছে। কোথাও উড়ালপুলের স্তম্ভের গায়ে স্তরে স্তরে জমছে পোস্টার। কোথাও আবার ফুটপাথের পাশের দেওয়ালগুলিতে বিসদৃশ ভাবে পোস্টার সাঁটা হয়েছে। সরকারি অফিস থেকে ব্যক্তিগত বাড়ির দেওয়াল, পোস্টারের দখলদারি থেকে বাদ যায়নি কিছুই। আধছেঁড়া পোস্টারের উপরে জমছে ধুলো ও নোংরা। তার উপরে
পড়েছে পানের পিকের দাগ। নোংরা হওয়ার পাশাপাশি এর জেরে দৃশ্যদূষণও ঘটছে বলে অভিযোগ। শহরবাসীর একাংশের দাবি, এর জন্য দায়ী সচেতনতার অভাব।
শহরের অন্যতম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নন্দন চত্বর। রবীন্দ্রসদন থেকে
এক্সাইড মোড়ের দিকে যেতে উড়ালপুলের স্তম্ভের গায়ে এমনই অজস্র ছেঁড়া পোস্টার লাগানো রয়েছে। বেশির ভাগই সিনেমা, নাটকের পোস্টার। তবে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ও রাজনৈতিক পোস্টারও রয়েছে। একটির উপরেই লাগানো হয়েছে অন্যটি। পথচলতি মানুষ
তার উপরেই পিক ফেলছেন। পোস্টারের জন্য কোথাও আবার স্তম্ভের রং-ই বিবর্ণ হয়েছে। সাঁতরাগাছির বাসিন্দা অরিজিৎ কোলে বলেন, ‘‘মাঝে মধ্যে এখানে আসি। কিন্তু নন্দনের সামনের স্তম্ভগুলি
খুবই নোংরা।’’
শুধু নন্দনই নয়, পোস্টারের আধিক্যে শহরে সৌন্দর্যায়নই ব্রাত্য হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ শহরবাসীর একাংশের। টালিগঞ্জে রেলস্টেশন বা মেট্রো থেকে বেরিয়েই চোখে পড়ে ফুটপাথের নীল-সাদা রঙের পাশেই বিভিন্ন সিনেমার পোস্টার। এত পোস্টার সাঁটা
হয়েছে যে দেওয়ালে কোন রং
তা দেখে বোঝার উপায় নেই। ফুটপাথের পাশে কোথাও ছিঁড়ে
পড়ে রয়েছে পোস্টারের অংশ! টালিগঞ্জের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘দেওয়ালে সাঁটা পোস্টার দেখতে খারাপ তো লাগেই। কখনও
আবার পথচারীরা তা ছিঁড়ে নিয়ে চলে যান। এর ফলে এলাকাও
নোংরা হয়।’’
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছের বাসস্টপ তো প্রায় পোস্টারের দখলেই চলে গিয়েছে।
ব্যতিক্রম নয় উত্তর এবং মধ্য কলকাতাও। ডালহৌসি চত্বর থেকে
শুরু করে বড়বাজার, শিয়ালদহ, হাতিবাগান, শ্যামবাজার— সর্বত্রই যত্রতত্র পোস্টার সাঁটা। এতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিল্পীরাও ক্ষুব্ধ। যেমন, ভবতোষ সুতার বলেন, ‘‘নন্দন-সহ কলকাতার অনেক জায়গায় ওই ভাবে স্তরে স্তরে পোস্টার জমে রয়েছে। কোথাও বা অর্ধেক ছিঁড়ে
পড়ে। সচেতনতার অভাবে এই অবস্থা হয়। প্রশাসনিক স্তরে পদক্ষেপ করা উচিত। এগুলি অবশ্যই সৌন্দর্যায়নের পথে বাধা।’’
এ বিষয়ে নির্দিষ্ট আইন রয়েছে বলে কলকাতা পুরসভা সূত্রের
খবর। পুরসভার এক আধিকারিক জানান, নিয়ম অনুযায়ী কোনও ব্যক্তির বাড়ির বা সরকারি অফিসের দেওয়ালে পোস্টার লাগালে ব্যক্তি বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের থেকে
অনুমতি নিতে হয়। না হলে
পুলিশে অভিযোগ করা যেতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এ বিষয়ে অভিযোগ হয় না। কারণ, সেই সচেতনতার অভাবই বলে জানান
ওই আধিকারিক।
মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার জানান, পুরসভার তরফ থেকে ইতিমধ্যেই কলকাতার বেশ কিছু অংশ নো-অ্যাড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া হোর্ডিং খোলার জন্য পুরসভা থেকে অভিযানও চালানো
হয়। মেয়র পারিষদ বলেন, ‘‘এ বার আরও জোরালো ভাবে শহরের পোস্টার সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’