আগুনে আতঙ্ক শিশু হাসপাতালে, অক্ষত রোগীরা

অন্য দিনের মতোই ভি়ড় ছিল জরুরি বিভাগের সামনে। ব্যস্ত পায়ে ঘোরাফেরা করছিলেন রোগীর আত্মীয়েরা। হঠাৎই শ্যামলাল রুইয়া মেমোরিয়াল ভবন থেকে সদ্যোজাতদের বুকে আঁকড়ে ছুটে বেরোতে দেখা যায় নার্স ও চিকিৎসকদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৪
Share:

ভস্মী‌ভূত হয়ে যাওয়া সেই বিভাগ। রবিবার।— বিশ্বনাথ বণিক।

অন্য দিনের মতোই ভি়ড় ছিল জরুরি বিভাগের সামনে। ব্যস্ত পায়ে ঘোরাফেরা করছিলেন রোগীর আত্মীয়েরা। হঠাৎই শ্যামলাল রুইয়া মেমোরিয়াল ভবন থেকে সদ্যোজাতদের বুকে আঁকড়ে ছুটে বেরোতে দেখা যায় নার্স ও চিকিৎসকদের। ততক্ষণে হাসপাতালের তিনতলার জানলা দিয়ে গলগলিয়ে বেরোচ্ছে কালো ধোঁয়া। পোড়া গন্ধের সঙ্গেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে গোটা চত্বরে। অপেক্ষমাণ পরিজনেরা তখনও জানেন না, বাড়ির শিশুটি কী অবস্থায়। রবিবার বিকেলে এমনই এক দৃশ্যের সাক্ষী রইল পার্ক সার্কাসের একটি শিশু হাসপাতাল।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রে খবর, এ দিন বিকেল সওয়া চারটে নাগাদ ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের শ্যামলাল রুইয়া ভবনের তিনতলায় নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (এনআইসিইউ) ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। সেখানে তখন চিকিৎসা চলছিল ১৮ জন সদ্যোজাত শিশুর। মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। শিশুদের বাঁচাতে তৎপর হয়ে ওঠেন ডাক্তার ও নার্সরা। ততক্ষণে ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে নীচে নামার সিঁড়িটি। তার মধ্যে দিয়েই চিকিৎসক ও নার্সরা দু’জন করে শিশুকে বুকে চেপে নামেন। তাদের পাশের ভবনের পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তরিত করা হয়।

২০১১-র ডিসেম্বরে ঢাকুরিয়ার আমরি হাসপাতালে আগুন লেগে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৯০ জন। তার পরে হাসপাতালগুলির অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে কিছু দিন সক্রিয় হয়েছিল দমকল। গড়া হয়েছিল কমিটিও। কিছু দিন সেই কমিটি তৎপরতা দেখালেও পরে তা থিতিয়ে যায়। এ দিনের ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষে অবশ্য দাবি, অগ্নি-সুরক্ষায় গলদ ছিল না। এটি নিছকই দুর্ঘটনা। অগ্নি-নির্বাপক ব্যবস্থা যথাযথ ছিল বলেই তাঁরা দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছেন।

Advertisement

এ দিন ঘটনার সময়ে হাসপাতালের ক্যান্টিনে ঘুমোচ্ছিলেন ক্যান্টিনকর্মী আকাশ দাস। তাঁর কথায়, ‘‘হঠাৎ মায়ের চিৎকারে ঘুম ভাঙে। দেখি, তিনতলার জানালা দিয়ে গলগল করে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। আপৎকালীন সিঁড়ি দিয়ে উঠে জল ঢালতে শুরু করি।’’ আকাশ জানান, ততক্ষণে শিশুদের স্থানান্তরিত করা হয়েছে। জড়ো হয়ে গিয়েছেন স্থানীয়েরাও। কিছুক্ষণেই দমকলের চারটি ইঞ্জিন পৌঁছয়। কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। দমকলের অনুমান, বাতানুকূল যন্ত্রে শর্ট সার্কিট থেকেই এই আগুন।

শিশুরা নিরাপদে থাকলেও পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে এনআইসিইউ-র বহু মূল্যবান সরঞ্জাম। হাসপাতালের সিওও দেবপ্রসাদ সরকার বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগেই ওই ভবনের অগ্নি-নিরোধক যন্ত্রের পরীক্ষানিরীক্ষা হয়েছিল। তবু এমন বিপদ ঘটে গেল!’’

এ দিন হাসপাতাল চত্বরেই অপেক্ষা করছিলেন শিশুদের বাড়ির লোকেরা। আগুন ছড়াতেই তাঁরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। দুই শিশুর অভিভাবক আজমল শেখ এবং বৃন্দাবন মান্না জানান, এনআইসিইউ-এ আগুন লেগেছে শুনে তাঁরা ভেবেছিলেন, সব শেষ হয়ে গেল। কিন্তু চিকিৎসক-নার্সদের তৎপরতায় শিশুরা উদ্ধার হয়েছে। তাই কৃতজ্ঞতার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা।

হাসপাতালের অধিকর্তা অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘আতঙ্ক ছড়ায় খুবই। কিন্তু আমরা যে শিশুদের অক্ষত অবস্থায় বার করতে পেরেছি, সেটাই স্বস্তির। বিদ্যুতের সংযোগ দিন কয়েক আগেই পরীক্ষা করা হয়ে। ফের তা করার ব্যবস্থা হবে। আমরা সতর্ক ছিলাম, থাকবও।’’

আপাতত দিন কয়েক ভবনটি বন্ধ থাকবে। ওই ভবনে ব্লাড ব্যাঙ্কও রয়েছে। সেটি অস্থায়ী ভাবে কোথায় স্থানান্তরিত করা হবে, তার ভাবনাচিন্তা চলছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন