এ বার হোম ডেলিভারিতেও বিল মেটান ডেবিট কার্ডে

সন্ধ্যা সাতটা। হঠাত্‌ কলিং বেল বাজল দত্তবাবুর ফ্ল্যাটে। দরজা খুলতেই ঢুকলেন এক যুবক। এক হাতে মুদি দোকানের থলে। দত্ত-গিন্নি নিজের ডেবিট কার্ডটা এগিয়ে দিলেন। সেই যুবক ব্যাগ থেকে বার করলেন একটি ওয়্যারলেস কার্ড সোয়াইপ যন্ত্র।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৪ ০১:৩৭
Share:

সন্ধ্যা সাতটা। হঠাত্‌ কলিং বেল বাজল দত্তবাবুর ফ্ল্যাটে। দরজা খুলতেই ঢুকলেন এক যুবক। এক হাতে মুদি দোকানের থলে। দত্ত-গিন্নি নিজের ডেবিট কার্ডটা এগিয়ে দিলেন। সেই যুবক ব্যাগ থেকে বার করলেন একটি ওয়্যারলেস কার্ড সোয়াইপ যন্ত্র। সেই যন্ত্রেই কার্ড ঘষে নিয়ে যুবক বিল ধরিয়ে দিলেন দত্ত-গিন্নির হাতে!

Advertisement

নগর-জীবন বদলাচ্ছে বহু দিন ধরেই। নিত্যনতুন গজিয়ে ওঠা ফ্ল্যাটবাড়িতে বাড়ছে ছোট ছোট পরিবারের সংখ্যা। সেগুলির কোনওটিতে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই চাকুরে। কোনও পরিবারে আবার বৃদ্ধ-বৃদ্ধা একা থাকেন। ছেলেমেয়ে কর্মসূত্রে বাইরে। এঁরা কেউই রোজ রোজ দোকান-বাজারে যেতে পারেন না। অনেক পরিবারে রয়েছেন প্রতিবন্ধীরাও। তাঁদেরও একই সমস্যা। সেই কারণেই বাড়ছে হোম ডেলিভারির চাহিদা। আর বদলে যাওয়া এই সময়ে হোম ডেলিভারি পরিষেবাকে আরও কিছুটা উন্নত করতেই আমদানি করা হয়েছে এই ওয়্যারলেস কার্ড সোয়াইপ যন্ত্র, জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

দোকানে অনেকেই এখন আর নগদ টাকা নিয়ে যান না। জিনিস কেনার পরে কার্ড এগিয়ে দেন। কিন্তু হোম ডেলিভারির ক্ষেত্রে সেটা একটু সমস্যার ছিল। কারণ, কার্ড সোয়াইপ যন্ত্রগুলির সঙ্গে তারের সংযোগ থাকত। ফলে সেগুলি যেখানে সেখানে নিয়ে যাওয়া যেত না। কিন্তু হোম ডেলিভারির ক্ষেত্রে আবার খুচরো থাকা-না থাকা নিয়েও সমস্যায় পড়তে হয়। সেখানেই এই ওয়্যারলেস কার্ড সোয়াইপ যন্ত্রের উপযোগিতা।

Advertisement

ব্যাঙ্কগুলি জানিয়েছে, সাধারণ কার্ড সোয়াইপ যন্ত্রগুলির সঙ্গে ফোন বা ইন্টারনেটের তারের সংযোগ থাকে। কিন্তু নতুন এই যন্ত্রগুলিতে একটি জিপিআরএস প্রযুক্তি সহায়ক সিম কার্ড লাগানো থাকে। অনেকটা মোবাইল ফোনের মতোই। তবে এই সিম দিয়ে ফোন করা যায় না। শুধুই ইন্টারনেটের তথ্য আদানপ্রদান করা যায়। এর ফলে এই মেশিনে যে কোনও জায়গা থেকে কার্ড ব্যবহার করা যায়। এই ব্যবস্থা দোকানে রাখা কার্ড সোয়াইপ মেশিনের ব্যবস্থার মতোই নিরাপদ। পুলিশ অবশ্য জানাচ্ছে, দোকানে কার্ড ব্যবহার করার সময়ে গ্রাহককে যতটা সতর্ক থাকতে হয়, এখানে তার থেকেও সতর্কতা কিছুটা বেশি প্রয়োজন। তবে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের জনসংযোগ কর্তা বলছেন, “এখানে দোকানকর্মীরা সাধারণত পরিচিত হন। ফলে তাঁরা হঠাত্‌ অপরাধ করবেন না। তবে অসতর্ক হওয়া মোটেই কাম্য নয়।”

হোম ডেলিভারির এমন নতুন কায়দা নিয়ে আগ্রহও বেড়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। কসবার একটি দোকানের মালিক সঞ্জয় চক্রবর্তী বলছেন, “হঠাত্‌ করে দোকানে আসতে পারেন না এমন বয়স্ক ক্রেতাদের মধ্যে তো এই ব্যবস্থা জনপ্রিয় হচ্ছেই। অল্পবয়স্ক চাকুরেরাও বাড়িতে বসেই অর্ডার দিয়ে মালপত্র নিচ্ছেন।”

এমনই এক ক্রেতা রাজডাঙার সুমনা নন্দী। তিনি জানান, ছেলে-পুত্রবধূ দু’জনেই চাকরি করে। বাড়িতে নাতিকে নিয়ে থাকেন তিনি। ইচ্ছে করলেই যখন-তখন দোকানে যেতে পারেন না। হাতে নগদ টাকাও খুূব বেশি রাখেন না। বললেন, “ছেলে একটা ডেবিট কার্ড দিয়েছে। বাড়িতে জিনিসপত্র লাগলেই ফোন করি। ওই কার্ড দিয়েই বিল মেটাই।”

এক বেসরকারি ব্যাঙ্কের ‘প্রোডাক্ট অ্যান্ড পেমেন্ট প্রোডাক্টস্‌’ বিভাগের প্রধান মহেশ রাজারমনও জানিয়েছেন, গোটা দেশেই এ ধরনের ওয়্যারলেস কার্ড সোয়াইপ যন্ত্রের চাহিদা বাড়ছে। শুধু কলকাতাতেই মহেশের ব্যাঙ্কের ২০০০ যন্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। গোটা দেশের নিরিখে সংখ্যাটা প্রায় ৩০০০০। শুধু তাই নয়, নতুন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে এই যন্ত্রের চাহিদা প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন