একবালপুর-কাণ্ডে ধৃত আরও এক, উদ্ধার খুনের অস্ত্র

একবালপুর হত্যাকাণ্ডে বৃহস্পতিবার আরও এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম শেখ ওয়াহিদ ওরফে আব্দুল ওয়াহিদ। বাড়ি ওই এলাকাতেই। ওয়াহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, খুনের পরে দেহ লোপাটে জড়িত ছিল সে এবং পুরো বিষয়টি জানা সত্ত্বেও এত দিন পুলিশের কাছে তা চেপে গিয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৪ ০১:১৫
Share:

পুষ্পাদেবীর বাবার সঙ্গে পুরমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

একবালপুর হত্যাকাণ্ডে বৃহস্পতিবার আরও এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ধৃতের নাম শেখ ওয়াহিদ ওরফে আব্দুল ওয়াহিদ। বাড়ি ওই এলাকাতেই। ওয়াহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, খুনের পরে দেহ লোপাটে জড়িত ছিল সে এবং পুরো বিষয়টি জানা সত্ত্বেও এত দিন পুলিশের কাছে তা চেপে গিয়েছিল। এ দিন ভোরেই হেস্টিংসের কাছে আদিগঙ্গা থেকে একবালপুরের মা ও দুই মেয়ের খুনে ব্যবহৃত হাতুড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। সিকন্দরের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার হয়েছে নিহত পুষ্পা সিংহের গয়না ও ব্যাঙ্কের নথিপত্রও। এর পাশাপাশি, একবালপুর-কাণ্ডে আরও এক জনের জড়িত থাকার খবর মিলেছে। তার খোঁজ করছে পুলিশ।

Advertisement

একবালপুরের সুধীর বসু রোডের একটি ফ্ল্যাট থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন পুষ্পাদেবী ও তাঁর দুই মেয়ে। গত রবিবার সুধীর বসু রোডেরই একটি দোকানের মেঝে খুঁড়ে তাঁদের দেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের দাবি, ওই দোকানের মালিক সিকন্দর ও তাঁর তিন সঙ্গীই মা ও দুই মেয়েকে খুন করে দেহ পুঁতে রাখে। এই ঘটনায় প্রথম থেকেই একবালপুর থানার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। প্রশ্ন উঠেছিল, জনবহুল এলাকায় দোকানের মেঝে খোঁড়া হলেও থানা তার কোনও প্রত্যক্ষদর্শী পেল না কেন?

লালবাজার সূত্রের খবর, গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নেমেই স্থানীয় যুবক ওয়াহিদের খোঁজ পায়। এ দিন দুপুরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য লালবাজারে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদের পরে নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই ওয়াহিদকে ধরা হয়। ধৃতের বিরুদ্ধে একবালপুর ও ওয়াটগঞ্জ থানায় আরও অভিযোগ রয়েছে।” পুলিশ সূত্রে খবর, দেহ উদ্ধারের পরে এলাকায় সিকন্দর-বিরোধী বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিচ্ছিল ওয়াহিদ।

Advertisement

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, খুনের পরে দোকানের মেঝে খোঁড়া এবং কংক্রিট করার ঘটনাটি দেখেছিল ওয়াহিদ। মেঝে প্লাস্টার করার ক্ষেত্রে সে জড়িতও ছিল। এমনকী, খুনের ঘটনা পুলিশের কাছে ফাঁস না করার শর্তে সিকন্দরের কাছ থেকে ওয়াহিদ পাঁচ হাজার টাকাও নিয়েছিল বলে পুলিশের দাবি।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাস্থলে যান বন্দর এলাকার বিধায়ক ও রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কথা বলেন পুষ্পাদেবীর বাবা পরেশনাথ সিংহের সঙ্গে। পুরমন্ত্রী বলেন, “এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খুব ব্যথিত। নির্বাচন চলছে বলে পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে পারছি না। তবে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইব।”

পুলিশ সূত্রের খবর, খুনের পরে পুষ্পাদেবীর বাড়ির আলমারি থেকে জীবনবিমার নথি, ব্যাঙ্কের কাগজপত্র ও গয়না খোয়া গিয়েছিল। জেরার মুখে সিকন্দর সেগুলি হাতানোর কথা স্বীকার করে। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই বুধবার রাতে সিকন্দরকে নিয়ে তার একবালপুরের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালায় পুলিশ। পল্লববাবু বলেন, “পুষ্পাদেবীর এটিএম কার্ড, দু’টি সোনার দুল, বালা এবং ব্যাঙ্কের কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে ওই ফ্ল্যাট থেকে।” গোয়েন্দাদের একাংশ বলছেন, শুধু ফ্ল্যাট দখলই নয়, পুষ্পাদেবীর টাকা-গয়না হাতানোর উদ্দেশ্যও ছিল সিকন্দরের। রাতভর তল্লাশির পর এ দিন ভোরে সিকন্দরকে আদিগঙ্গার কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। ডুবুরি নামিয়ে একটি নাইলনের ব্যাগ উদ্ধার হয়। পুলিশ জানায়, তার ভিতরে একটি মাঝারি মাপের হাতুড়ি, ফুট তিনেক লম্বা শিকল ও দড়ি মিলেছে।

ঘটনার পর থেকে একবালপুর থানার পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ করেছিলেন নিহতদের পরিজনেরা। এ দিন পুষ্পাদেবীর বাবা-মাকে লালবাজারে ডেকে কথা বলেন কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। পুলিশ সূত্রের খবর, একবালপুর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশের সব থানার ওসিদের কাছে বিশেষ নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, থানায় কোনও নিখোঁজ ডায়েরি হলে তা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। নাবালক ও মহিলা হলে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করতে হবে। অভিযোগকারীদের সঙ্গে ভদ্র ব্যবহারও করতে হবে। থানার ওসিকে নিজে ঘটনার তত্ত্বাবধান করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ডেপুটি কমিশনারকে নিয়মিত রিপোর্ট পাঠাতে হবে। লালবাজারের এক কর্তা বলেন, “থানার অন্যান্য কর্মী-অফিসারকেও এই বার্তা পৌঁছে দিতে বলা হয়েছে।”

এ দিকে, একবালপুর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এ দিন এলাকার মহিলারা পুষ্পাদেবী এবং তাঁর দুই মেয়ের ছবি ও ব্যানার নিয়ে মিছিল করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন