ওয়াই-ফাই ‘মোচ্ছবে’ মত্ত পার্ক স্ট্রিট

ল্যাম্পপোস্টের নীচে তাঁরা যেন এক-এক জন ‘বিদ্যাসাগর’! সাবেক মিউজিক ওয়ার্ল্ড, অধুনা কফিশপের প্রকাণ্ড রোয়াকে বসে পড়েছেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের দুই ছাত্র। অঙ্ক অনার্স প্রথম বর্ষ অনির্বাণ রায়, সুহেল হুসেনরা স্মার্টফোন হাতে প্রায় ধ্যানস্থ। চিচিং ফাঁক করে ওয়াই-ফাইয়ের দরজা ঠেলে নেটে ঢুকতে মরিয়া দু’জনেই। মোবাইলের স্ক্রিনে নিজেদের কলেজের ওয়েবসাইটের ছবি দেখতেই ‘ইউরেকা’ বলে উঠলেন।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:০০
Share:

সে কি এল, সে কি এল না...। পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাথে, শুক্রবার সন্ধ্যায়। ছবি:দেশকল্যাণ চৌধুরী

ল্যাম্পপোস্টের নীচে তাঁরা যেন এক-এক জন ‘বিদ্যাসাগর’!

Advertisement

সাবেক মিউজিক ওয়ার্ল্ড, অধুনা কফিশপের প্রকাণ্ড রোয়াকে বসে পড়েছেন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের দুই ছাত্র। অঙ্ক অনার্স প্রথম বর্ষ অনির্বাণ রায়, সুহেল হুসেনরা স্মার্টফোন হাতে প্রায় ধ্যানস্থ। চিচিং ফাঁক করে ওয়াই-ফাইয়ের দরজা ঠেলে নেটে ঢুকতে মরিয়া দু’জনেই। মোবাইলের স্ক্রিনে নিজেদের কলেজের ওয়েবসাইটের ছবি দেখতেই ‘ইউরেকা’ বলে উঠলেন।

নতুন খেলনা এ ভাবেই মাতিয়ে রেখেছে কলকাতাকে। উদ্বোধনের পরে প্রাথমিক ঠোক্কর শেষে শুক্রবার খানিকটা ধাতস্থ কলকাতার প্রথম ফ্রি ওয়াই-ফাই স্ট্রিট। অনির্বাণ বলছিলেন, দুপুরে কলেজের দিকটায় ওয়াই-ফাইয়ে ঢুকি-ঢুকি করেও ঢুকতে পারছিলাম না। খানিকটা এগিয়ে মিড্লটন রোয়ের মুখে আসতেই কপাল খুলে গেল।

Advertisement

বসার জায়গা যাঁরা পাননি, তাঁদের অধ্যবসায়ও নেহাত কম নয়। দুপুরে অফিস থেকে খেতে বেরোনো তরুণ-তরুণী বা নামী রেস্তোরাঁয় নৈশভোজের টেবিলে প্রতীক্ষায় থাকা জনতা, সবার ধ্যানজ্ঞান শুধু ওয়াই-ফাইয়ে লক্ষ্যভেদ। চিনে রেস্তোরাঁর সামনে ফুটপাথের রেলিংয়ে ঠেস দিয়েই মোবাইলে বুঁদ ঠাকুরপুকুরের প্রত্যয় গুণ। সেল্সের কাজে পার্ক স্ট্রিটে এসে বিকেল থেকে নাগাড়ে চ্যাট করে চলেছেন। জওহরলাল নেহরু রোডের কাছাকাছি দু’দিকের ফুটপাথেই দিনভর মশগুল ওয়াই-ফাই সন্ধানীরা। পশ্চিম দিকের ফুটপাথে একটি কন্টিনেন্টাল রেস্তোরাঁর সামনে বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসা হকার রীতেশ গুপ্ত চেনা-অচেনা লোকেদের কাছে নায়কের মর্যাদা পাচ্ছেন। রেস্তোরাঁর বেয়ারা থেকে অচেনা পথচারী, তাঁর কাছে নাড়া বাঁধছেন সকলে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই রীতেশ জনে-জনে দেখিয়ে দিচ্ছেন কোন পথে নেট-দরজা খুলতে হবে। তিনি নিজেও ব্যস্ত অনলাইন বই কেনার সাইটে।

দরজায় কড়া নেড়ে বা হাল্কা উঁকিঝুঁকি মেরে ঢুকতে না পারার নমুনাও রয়েছে বেশ কিছু। কারও দাবি, ৫০ বারের চেষ্টায় ওয়াই-ফাইয়ের দরজা খুলেছে। তবু একবার ঢুকতে পারলে ফোরজি প্রযুক্তির স্পিড চেখে খুশি অনেকেই।

মধ্য কলকাতার স্কুলপড়ুয়া কৌসিন খানের বাড়ি কাছেই। স্কুলফেরতা পার্ক স্ট্রিটে এসে আধ ঘণ্টার একটু বেশি সময় ধরে ৭২৪ এমবি-র গেম ডাউনলোড করে সে চমৎকৃত। কুইন্স ম্যানসনের একটি অফিসের গাড়ি চালান রাজারহাটের নাজমুল রহমান। ঝরঝরে গতিতে ইউ টিউবে পিকে-র একটি গান ডাউনলোড করার পরে তাঁর আশা, গোটা সিনেমাটাই বুঝি এ বার পাকড়াও করা যাবে। ওই যুবকের কথায়, “আমাদের মতো লোকেদের জন্য নিখরচায় এই সুযোগ পাওয়াটা বড় ব্যাপার!”

পরিষেবা প্রদানকারী রিলায়েন্স জিও-র তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, নিখরচায় এই সুবিধে সাময়িক। রিলায়েন্স কর্তাদের দাবি, নির্দেশ বুঝতে কারও কারও অসুবিধে হয়েছে। কারও বা হ্যান্ডসেটে কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে অনেকেই দ্রুতগতির নেট পরিষেবায় খুশি। রিলায়েন্সের এক কর্তা জানিয়েছেন, পার্ক স্ট্রিটের পরেই এ বার গড়িয়াহাট-গোলপার্কের কপালে শিকে ছিঁড়বে। সল্টলেকেও ওয়াই-ফাই পরিকাঠামো প্রায় তৈরি হয়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন