সার্ধশতবর্ষে চারুকলা শিক্ষা
কলকাতার প্রথম চারুকলা সমিতি ছিল ‘ব্রাশ ক্লাব’, (১৮৩০/’৩১) লিখেছেন কমল সরকার। অল্প দিন টিকলেও তারাই প্রথম এ শহরে চিত্র-প্রদর্শনী শুরু করে। তার দু’দশক পরে রাজা প্রতাপচন্দ্র সিংহ ও ঈশ্বরচন্দ্র সিংহের দান করা গরানহাটার বাড়িটা যে একদিন বিশ্বখ্যাত এক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিভূমি হয়ে উঠবে তা কে জানত! কর্নেল গুডউইনের বক্তৃতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্যবহারিক শিল্পশিক্ষা দিতেই এই সংস্থার পরিকল্পনা। সভাপতি গুডউইন, সম্পাদক হজসন প্র্যাট ও রাজেন্দ্রলাল মিত্র। ১৮৫৪-র ১৬ অগস্ট ২৮ জন ছাত্রকে নিয়ে চালু হল সেই ‘স্কুল অফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্ট’।
১৮৬৪-তে স্কুলের আর্থিক দায়িত্ব সরকার নেওয়ায় নাম হয় ‘গভর্নমেন্ট স্কুল অফ আর্ট’, শিক্ষকতায় আসেন শ্যামাচরণ শ্রীমানী, অন্নদাপ্রসাদ বাগচী। কলুটোলা, বউবাজার হয়ে ১৮৯২-এ পাকাপাকি আস্তানা ২৮ জওহরলাল নেহরু রোড, ভারতীয় জাদুঘরের লাগোয়া বাড়িতে। ১৮৯৬ থেকে ছাত্রদের কাজ নিয়ে বার্ষিক প্রদর্শনী শুরু হয়। প্রথম ভারতীয় উপাধ্যক্ষ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯০৫-’১৫)। ১৯০৬-’০৮ তিনি অস্থায়ী ভাবে অধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেন। রবীন্দ্রনাথ নিজে এই বাড়িতে থেকে ছবি এঁকেছিলেন, তখন অধ্যক্ষ ছিলেন মুকুল দে। তার পর এখানেই রবীন্দ্রনাথের ছবির প্রদর্শনী হয় ১৯৩২-এ। ১৯৩৯-এ সহশিক্ষা শুরু, ছাত্রীদের মধ্যে করুণা সাহা, মৈত্রেয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্তোষ রোহতগি মৈত্র, শানু লাহিড়ী, উমা সিদ্ধান্ত-সহ অনেকেই বিশিষ্ট। ‘গভর্নমেন্ট কলেজ অফ আর্ট অ্যান্ড ক্রাফট’ নাম নিয়ে ১৯৫১-য় এটি পূর্ণাঙ্গ কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। পিএইচ ডি চালু হল ২০০৩-এ। আর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন আসে ২০০৭-এ। হেনরি হোভার লক, পার্সি ব্রাউন, ই বি হ্যাভেল, গিলার্ডি, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রমেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, মুকুল দে, চিন্তামণি কর-- আরও বহু বিশিষ্ট শিল্পী ও ভাস্করের নাম জড়িয়ে রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এ বছর এই প্রতিষ্ঠানের সার্ধশতবর্ষ পূর্ণ হচ্ছে। এই উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছে নানা অনুষ্ঠান। এরই সূচনা হল গত ২৮ জুন। এ দিন সকালে একটি প্রস্তরফলক (উপরের ছবি) উন্মোচন করেন পদ্মশ্রী শিল্পী বিমানবিহারী দাস। ছিল একটি সম্মিলিত প্রদর্শনী এবং প্রাক্তনী ও মডেলদের সংবর্ধনা, সন্ধেয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সঙ্গের ছবিতে (বাঁ দিকে) কলেজের প্রবেশপথ, (মাঝে) কলেজের প্রতীক।
কমলকুমার ১০০
‘আমার কিছু নাই শুধু দারিদ্র্য আছে; ইহাকে সামাল দিতে প্রাণ অন্ত... ক্রমশঃ বয়স হইতেছে, ক্রমে অথর্ব হইতেছি, একদা আমার মত একজনকে দেখিয়া কপিলাবস্তু নগরের এক যুবরাজ অশ্রু সম্বরণ করিতে পারে নাই...’ মৃত্যুর আট বছর আগে কবি সুব্রত চক্রবর্তীকে একটি চিঠিতে এ কথা লিখেছিলেন কমলকুমার মজুমদার (১৯১৪-’৭৯)। জন্মশতবর্ষের সূচনা অনুষ্ঠানটি হয়েছিল তাঁর জন্মদিনে, গত ১৮ নভেম্বর, ‘প্রতিবিম্ব’ পত্রিকার উদ্যোগে। এ বার প্রকাশিত হচ্ছে প্রশান্ত মাজি সম্পাদিত ‘প্রতিবিম্ব’ পত্রিকার ‘কমলকুমার মজুমদার বিশেষ সংখ্যা’, আজ সন্ধ্যা ৬টায়, জীবনানন্দ সভাঘরে। এই সংখ্যায় থাকছে তাঁর এযাবত্ অগ্রন্থিত গল্প, উপন্যাস, শব্দকোষ, চিঠি, ডায়েরি, নিবন্ধ, সঙ্গে তাঁর নেওয়া শরত্চন্দ্রের সাক্ষাত্কার। থাকছে তাঁর অশীতিপর সহধর্মিণীর সাক্ষাত্কার-ভিত্তিক রচনা। তাঁর আঁকা ছবি, স্কেচ দিয়ে অলঙ্করণ। এখানে যুক্ত হয়েছে দুটি ক্রোড়পত্র। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কমলকুমার নিয়ে যাবতীয় লেখার সংকলন ‘আমার কমলকুমার’, আর এক সহযোগী ইন্দ্রনাথ মজুমদারের অগ্রন্থিত কিছু লেখা আর স্মৃতিচারণ। সংখ্যাটি প্রকাশ করবেন গৌতম ঘোষ। স্মৃতিচারণে ঘনিষ্ঠজনেরা। গানে ঋতুপর্ণা মতিলাল, সোনিয়া চট্টোপাধ্যায়।
মেঘদূত সন্ধ্যা
‘এই এলো বর্ষা, এইবার ঘরে ফেরার সময় হল প্রবাসী পুরুষের। আকাশে যখন তোমার উদয় হয়, বলো মেঘ, কে-ই বা বিরহিণী পত্নীকে ভুলে থাকে? দূরে থাকে?’ রাজা ভট্টাচার্যের গদ্যানুবাদ কালিদাসের মেঘদূতম্ থেকে, বহু বার বিশিষ্ট কবিদের হাতে অনূদিত হয়েছে এই দূতকাব্য, তবু প্রয়োজন ছিল আবৃত্তিযোগ্য এমন সহজ এক গদ্যানুবাদের। রোদে-পোড়া বঙ্গদেশে মনকেমনকরা আষাঢ়-দিনে আজও মেঘদূত চিরনবীন। তাই অহর্নিশ-এর আয়োজন: ‘আষাঢ় দিনে মেঘদূত সন্ধ্যা’। ১২ জুলাই শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় রোটারি সদনে। পুরাণবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর প্রণোদনায় নিজের অনুবাদে সুরারোপ করে গাইবেনও রাজা। পাঠ করবেন সোমা মুখোপাধ্যায় চক্রবর্তী। আবহনির্মাণে অরিজিত্ সেনগুপ্ত। প্রবেশকথন জয় গোস্বামীর, আর পরে নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর আলোচনা: ‘দশার্ণ থেকে কলকাতা’।
রতিচক্রব্যূহ
১০২ মিনিটের কাহিনিচিত্র। একটি মাত্র শট-এ। ‘রতিচক্রব্যূহ’ নামে নিরীক্ষামূলক এই ছবির পরিচালক আশিস অভিকুন্তক। রোড আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক জন্মগত ভাবে মরাঠি হলেও তরতরিয়ে বাংলা বলেন। বড় হয়েছেন কলকাতায়। ছবিও করেন বাংলাতেই। সাবেকি প্রেক্ষাগৃহ বা মাল্টিপ্লেক্স নয়, আশিস এই ছবি দেখাতে বেছে নিয়েছেন এক বিকল্প পরিসর, গ্যালারি। কলকাতার এক্সপেরিমেন্টার গ্যালারিতে (২/১ হিন্দুস্তান রোড) রোজ তিনটি করে শো। চলবে ১৮ জুলাই পর্যন্ত। স্বতন্ত্র চলচ্চিত্রের প্রসারে অভিনব উদ্যোগ, সন্দেহ নেই।
যোগসূত্র
মানুষ হিসেবে দুজনেই ছিলেন অন্তরঙ্গ, যদিও কর্মসূত্রে দুজনেই এক সময় দূরে চলে গিয়েছিলেন, কিন্তু কোথায় যেন একটা যোগসূত্র রয়েই গিয়েছিল। এক জন শাহিদ সুরাবর্দি, অন্য জন দিলীপকুমার রায়। এই দুই ব্যক্তিত্বকে নিয়ে বলছিলেন মফিদুল হক (‘দিলীপকুমার রায় ও শাহিদ সুরাবর্দি : দুই ভুবনের বাসিন্দা’)। সম্প্রতি গোলপার্কে রামকৃষ্ণ মিশনের শিবানন্দ হলে আয়োজিত হয়েছিল অষ্টম দিলীপকুমার রায় স্মারক বক্তৃতা, পুনের হরি কৃষ্ণ মন্দির ট্রাস্ট ও কলকাতার অরবিন্দ ইনস্টিটিউট অফ কালচারের যৌথ উদ্যোগে। মফিদুল হক ঢাকা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সদস্য সচিব, যেখানে সংগৃহীত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বহু আকর: চিঠি, নথি, দলিল, আলোকচিত্র এবং মৌখিক উপাদান। স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে সংগ্রহের কাজ এখনও চলছে। আগামী বছরেই এই নতুন সংগ্রহশালার দরজা খুলে যাবে, জানালেন মফিদুল।
বিজ্ঞানসাহিত্য
ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক গৌরীপ্রসাদ ঘোষের রবীন্দ্রকাব্যের শিল্পরূপ পড়ে অভিভূত মাস্টারমশাই শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় প্রিয় ছাত্রের বইটির ভূমিকা লিখে দিয়েছিলেন। শেক্সপিয়রের ওপর গৌরীপ্রসাদের লেখা পড়ে অক্সফোর্ড থেকে সহমর্মী হেলেন গার্ডনার তাঁকে ‘আনরিপেন্টান্ট হিউম্যানিস্ট’ আখ্যা দিয়েছিলেন। তাঁর সম্পাদনায় এভরিম্যান্স ডিকশনারি ইংরেজি-বাংলা অভিধানজগতে নতুন এক অধ্যায় সৃষ্টি করেছে। সেই তিনিই বিশ্বতত্ত্ব বা কসমোলজি নিয়ে লেখেন মহাবিশ্বে মহাকাশে ও নক্ষত্র-নীহারিকার রোমাঞ্চলোকে। ভিন্নতর তত্ত্বাবধানে সেই বইয়ের দ্বিতীয় ও পরিবর্ধিত সংস্করণ বেরোল মহাকাশ-রহস্যের রোমাঞ্চলোকে (সূত্রধর) নামে। ছিয়াশি বছর বয়সি গৌরীপ্রসাদ ঘোষের এই অভিনব উপহার বাংলা বিজ্ঞানসাহিত্যে বিশিষ্ট সংযোজন।
সন্দেশে চ্যাপলিন
‘সিনেমার ইতিহাসে এমন আর কেউ নেই যিনি ছেলে বুড়ো সকলের মন এমন ভাবে জয় করতে পেরেছিলেন। আমি এই সেদিনও চ্যাপলিনের ছবি দেখেছি। আর দেখে বুঝেছি যে চ্যাপলিন পুরোনো হবার নয়।’ সত্যজিত্ রায় সন্দেশ-এ লিখেছিলেন চার্লি-র (১৮৮৯-১৯৭৭) শতবর্ষে, লেখাটির নাম ‘অমর চার্লি’। এ বার চ্যাপলিনের ১২৫তম বর্ষে সন্দেশ (জুন ২০১৪, সম্পাদক: সন্দীপ রায়) ফের সেজে উঠেছে তাঁকে নিয়ে এক বিশেষ ক্রোড়পত্রে। সত্যজিতের শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি তো তাতে পুনর্মুদ্রিত হয়েছেই, আছে তাঁর আঁকা সঙ্গের স্কেচটিও। সঙ্গে অন্যান্য নতুন রচনা গদ্য আর ছড়া। চ্যাপলিনের কর্ম ও ব্যক্তিজীবনের দুর্লভ সব ছবি, বইয়ের প্রচ্ছদ, ফিল্মের স্টিল, বিজ্ঞাপন, পোস্টার, এমনকী তাঁকে নিয়ে সংবাদপত্রে বেরনো কমিক্স্ও। প্রচ্ছদে ক্যামেরা-সহ তরুণ চ্যাপলিন। সংগ্রহে রাখার মতো!
অগ্রগতির প্রেরণা
‘মহাযোগী অনির্বাণের জাগৃতিসাধনা তথা চিন্তাধ্যানকর্মভক্তিসাধনী প্রতিভার কথা মনে রেখে আমি অগ্রগতির প্রেরণাই পেয়েছি বেশি... এ-অশ্রদ্ধার যুগেও জগতে শ্রীরামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, রমণ মহর্ষি, রামদাস প্রমুখ মহাপুরুষদের অভ্যুদয় হয়েছে যাঁদের সাধনপতাকাবাহী হয়ে অনির্বাণ এসেছিলেন প্রজ্ঞানের বহ্নিবাণী লালন করতে...।’ লিখেছেন দিলীপকুমার রায় তাঁর স্মৃতিচারণে মহাযোগী অনির্বাণ-এ। এ গ্রন্থটি-সহ মহাযোগী অনির্বাণের নিজস্ব দু’টি গ্রন্থ সাহিত্যপ্রসঙ্গ আর আত্মকথা ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে (পরি: বাঙলার মুখ প্রকাশন)। ৯ জুলাই মহাবোধি সোসাইটিতে সন্ধ্যা ৬টায় শ্রীমত্ অনির্বাণের শুভ জন্মোত্সব পালিত হবে, শ্রীঅনির্বাণ বিশ্ব সারস্বত সমাজ-এর উদ্যোগে। সমাজের নতুন দ্বিভাষিক ষাণ্মাষিক পত্রিকা হৈমবতী ও ননীগোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঋগ্বেদ রহস্য বইটি প্রকাশিত হবে এবং মহাযোগী অনির্বাণের সংকল্পে ব্রতী-বন্ধুরা সম্মিলিত হবেন সে সন্ধ্যায়।
বিনোদিনী সমগ্র
বঙ্গরঙ্গমঞ্চে নটী বিনোদিনী নামে চিনত সকলে তাঁকে। সেই বিনোদিনী দাসী মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে ইতি টেনেছিলেন নিজের অভিনয়-জীবনের। অথচ এই প্রতিভাময়ী, স্নেহধন্যা ছাত্রী ছিলেন যাঁর, সেই গিরিশচন্দ্র ঘোষ বলেছিলেন ‘আমি মুক্তকণ্ঠে বলিতেছি যে, রঙ্গালয়ে বিনোদিনীর উত্কর্ষ আমার শিক্ষা অপেক্ষা তাহার নিজগুণে অধিক।’
এ হেন বিনোদিনীর সকল রচনা, তাঁর মঞ্চজীবন, প্রসঙ্গকথা, চমকপ্রদ তথ্য, দুষ্প্রাপ্য ছবি, আঁকা পোর্ট্রেট একত্র করে বেরোচ্ছে বিনোদিনী রচনাসমগ্র (পত্র ভারতী), সম্পাদনায় শিল্পী-গবেষক দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়। বইয়ের সঙ্গে বাড়তি পাওনা একটি গানের সিডি: ‘বিনোদিনী-গাথা’। ৯ জুলাই বুধবার সন্ধে ৬টায় সাউথ সিটি-র স্টারমার্ক-এ বইটি উদ্বোধন করবেন মাধবী মুখোপাধ্যায়, প্রধান অতিথি নবনীতা দেবসেন। কথায় ও গানে: দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় ও ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়।
নতুন ভূমিকায়
এ বার নতুন ভূমিকায় স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত। ৫৩টি রবীন্দ্রসঙ্গীতের ইংরেজি অনুবাদ করেছেন তিনি। সে সব গান, সঙ্গে শিল্পীরই আঁকা ৪১টি সাদা-কালো ছবি নিয়ে বেরোবে তাঁর বই গ্যালাক্সি। শিল্পী জানালেন, প্রতিটি ছবি তৈরি হয়েছে এক-একটি গানের ভাবকে ঘিরে। তাঁর করা রবীন্দ্রসঙ্গীতের ইংরেজি অনুবাদের পাশাপাশি ওই সব ছবি তুলে ধরবে গানের মূল বক্তব্য। এই মাসেই বইটি প্রকাশ করবেন নবনীতা দেব সেন।
সীমান্তরেখা
প্রথম প্রামাণ্যচিত্র ‘স্মৃতি ’৭১’, বা সুদীর্ঘ প্রামাণ্যচিত্র ‘১৯৭১’ তৈরির সময় দেশভাগ নিয়ে ছবি করার তাগিদটা ঘাই মেরে যেত তাঁর অনুভূতিতে। বলছিলেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার তানভীর মোকাম্মেল। এ বার কলকাতায় এসেছেন সেই কাজেই। ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করতে করতে বারবার মনে হয়েছে এ সমস্ত কিছুর পিছনে ১৯৪৭-এর দেশভাগ। বঙ্গদেশের এত দিনের ইতিহাসে এত বড় ঘটনা কখনও ঘটেনি। এত যন্ত্রণা, এত বিচ্ছিন্নতা, তারকাঁটার বেড়া, শিকড় উপড়ে ফেলার উপলব্ধি আমাকে তাড়া করে ফিরেছে আশৈশব।’ তানভীরের (জন্ম ১৯৫৫) এই নির্মীয়মাণ ছবির নাম ‘সীমান্তরেখা’। ‘এই সীমান্তরেখাটা কোথায়, ভারত-বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মধ্যে, হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে, পূর্ববঙ্গ-পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে, নাকি আমাদের মনের মধ্যে এই জিজ্ঞাসাটাই আমি তুলে আনার চেষ্টা করছি নানান স্মৃতি-সাক্ষাত্কার-তথ্যের ভিতর দিয়ে।’ তানভীরের সাম্প্রতিক কাহিনিচিত্র ‘জীবনঢুলি’ আর তথ্যচিত্র ‘স্বপ্নভূমি’ ১৩ জুলাই দেখানো হচ্ছে নন্দনে, সেদিন বিকেল সাড়ে ৫টায় দর্শকের মুখোমুখি হবেন তিনি। ‘তানভীরকে সম্মান জানাতেই এ আয়োজন। আর ১১-১২-য় প্রমথেশ বড়ুয়ার ‘অধিকার’ ও ‘রজত জয়ন্তী’ দেখানো হবে ছবি দু’টির ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে।’ জানালেন অধিকর্তা যাদব মণ্ডল। ১৯-২০ জুলাইও তানভীরের তিনটি কাহিনিচিত্র ‘লালসালু’ ‘রাবেয়া’ ‘জীবনঢুলি’ দেখানো হবে রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবনে, উদ্যোক্তা সল্টলেক ফিল্মোত্সব কমিটি। আর ১২ জুলাই বনগাঁয় অন্যকথা পত্রিকার উদ্যোগে ‘সমর মুখোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা’ দিচ্ছেন তানভীর, সাহিত্য ও চলচ্চিত্রের আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।
সম্মানিত
অর্ধশতকের কাছাকাছি তিনি আমেরিকা-প্রবাসী। শিল্প-ঐতিহাসিক হিসেবে আশি- ছোঁয়া মানুষটির বিশ্বজোড়া খ্যাতি, বিশেষত ভারত, নেপাল তিব্বতের প্রাচীন শিল্প-সংস্কৃতি চর্চায়। শুধু আমেরিকা নয়, ইউরোপ ও এশিয়াতেও দক্ষিণ এশিয়ার শিল্পকলার চর্চা ও প্রসারের সঙ্গে আজ তাঁর নাম ওতপ্রোত। ১৯৩৫-এ শ্রীহট্টে জন্ম প্রতাপাদিত্য পালের, কলকাতা আর দিল্লিতে পড়াশোনা। তাঁর ঝুলিতে সম্পদ বড় কম নেই। কলকাতা আর কেম্ব্রিজের দুটি পিএইচ ডি তো সেই ছাত্রজীবনের অর্জন, তার পর বস্টন মিউজিয়মে ভারতীয় সংগ্রহের কিপার (যে পদে ছিলেন আনন্দ কুমারস্বামী); লস অ্যাঞ্জেলস কাউন্টি মিউজিয়মে কিউরেটর হিসেবে অসামান্য এক ভারতীয় সংগ্রহ গড়ে তোলায় আড়াই দশক জড়িয়ে থাকা, ১৯৯৫-এ অবসরের পরও পাসাডেনায় নর্টন সাইমন মিউজিয়াম ও আর্ট ইনস্টিটিউট অব শিকাগোয় নানা দায়িত্ব পালন, নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা, মুম্বইয়ের বিখ্যাত মার্গ ফাউন্ডেশনে প্রায় দু’ দশক জেনারেল এডিটর। নিজের লেখা ও সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা ষাট ছাড়িয়েছে, বিভিন্ন প্রথম সারির সংগ্রহশালায় গোটা বাইশ আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী তাঁর হাতে আয়োজিত, পেয়েছেন ‘পদ্মশ্রী’ সহ নানা সম্মান। নিয়মিত লিখছেন এখনও। তবে সাম্প্রতিক এক সম্মান তাঁকে বোধহয় সব থেকে আনন্দ দিয়েছে। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে (সোয়াস) এ বার তাঁর নামে তৈরি হল অধ্যাপক-পদ (সিনিয়র লেকচারার ইন কিউরেটিং অ্যান্ড মিউজিয়োলজি অব এশিয়ান আর্ট)। শিকাগো-র আলফাউড ফাউন্ডেশনের দু’ কোটি পাউন্ড দানে সোয়াস-এ নানা উন্নয়নের সঙ্গে এমন মোট তিনটি পদ তৈরি হল, যা চালু হবে আগামী সেপ্টেম্বরে। গর্বিত আমরাও।