নব রূপে বঙ্কিম
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষে তাঁর রচনাবলি প্রকাশে উদ্যোগী হয়েছিল বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষত্। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাশের সম্পাদনায়, বঙ্কিমের জীবত্কালের শেষ সংস্করণের পাঠ ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল সেই বঙ্কিম গ্রন্থাবলী। পরে প্রকাশিত হয় বঙ্কিম রচনাবলী (সাহিত্য সংসদ, জীবনী ও রচনা-পরিচয়: যোগেশচন্দ্র বাগল)। এ বার বঙ্কিমচন্দ্র রচনাবলী-র ১৭৫তম জন্মবার্ষিকী সংস্করণ প্রকাশে উদ্যোগী পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি।
মুখ্য উপদেষ্টা অলোক রায়ের নেতৃত্বে এক সম্পাদকমণ্ডলীর তত্ত্বাবধানে এই রচনাবলী ছয়টি খণ্ডে প্রকাশিত হবে। ভূমিকা, গ্রন্থপরিচয়, প্রাসঙ্গিক আলোকচিত্র এবং বিভিন্ন মুদ্রণ ও আখ্যাপত্রের প্রতিলিপি-সহ বিষয়ভিত্তিতে বিন্যস্ত হবে প্রতিটি খণ্ড। সমাপ্তি খণ্ডে থাকবে গ্রন্থপরিচয়, পাঠভেদ ও পাঠান্তর। রচনাবলী-র প্রথম খণ্ডের দাম ৫০০ টাকা ও ছয় খণ্ডের এককালীন গ্রাহকমূল্য ২০০০ টাকা। প্রথম খণ্ডে সংকলিত হয়েছে দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী, বিষবৃক্ষ, ইন্দিরা, যুগলাঙ্গুরীয়, চন্দ্রশেখর এবং রজনী। বঙ্কিমচন্দ্রের জন্মদিন ২৬ জুন আকাদেমি সভাঘরে এক অনুষ্ঠানে গ্রাহকভুক্তির আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন আকাদেমির সভাপতি শাঁওলী মিত্র।
১৮৬৫ সালে প্রথম প্রকাশিত দুর্গেশনন্দিনী-র ইংরেজি অনুবাদ হয় ১৮৮০-তে, আর তার পরের বছরই থ্যাকার স্পিংক থেকে প্রকাশিত হয় রোমান হরফে মুদ্রিত একটি সংস্করণ, হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর উদ্যোগে। অনামা শিল্পীর আঁকা দুটি ছবি ছিল সেই সংস্করণে, একটি ‘এই বন্দী আমার প্রাণেশ্বর’ (সঙ্গে বাঁ দিকে), আর অন্যটি ‘কতলু খাঁ-র জন্মদিন’ (তারই একাংশ মাঝে)। দুর্লভ ছবি দুটি রচনাবলিতে সংযুক্ত হয়েছে।
বিশ্বকাপে
‘ব্রাজিলে এলে একটা জিনিসই আপনাকে ভালোবাসতে হবে, তা হল ফুটবল। পা আর বলের সম্পর্কটা জন্ম থেকেই যেন বুঝতে শুরু করে ব্রাজিলিয়ান শিশুরা। পছন্দের ফুটবল তারকার স্টাইলে চুল কাটতে শুরু করেও ছেলেবেলা থেকেই।
যেমন রোনাল্ডোর অন্ধভক্ত নেইমার ১১ বছর বয়সে রোনাল্ডোর মতোই শুধুমাত্র মাথার সামনের দিকে এক গাছা চুল রেখে ভোল পালটে ফেলেছিলেন।’ এমন সরস গদ্যেই গোটা বইটা লিখে ফেলেছেন সুমন দে, বিশ্বযুদ্ধের ব্রাজিলে (কারিগর)। এ বারের বিশ্বকাপে তাঁর এই ব্রাজিল বেড়ানোর বৃত্তান্তের সঙ্গে আছে পাতায়-পাতায় ছবি। রয়েছে তথ্যনথিও, ১৯৩০-এ উরুগুয়েতে শুরুর বিশ্বকাপ থেকে ২০১০-এ দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ পর্যন্ত বিবরণ। এমনই আর একটি বই কাশীনাথ ভট্টাচার্যের বিশ্বকাপ আনন্দযজ্ঞে (রূপালী)। ইতিহাসের আলোয় বিশ্বকাপের বর্তমানকে বিচার করতে ফুটবল-পাগল বাঙালির কাজে লাগবে।
যাত্রাচিত্রী
বেলগাছিয়া মেট্রো স্টেশনের কাছে ধূর্জটি ধাম সংলগ্ন একটি গলি। গলির শেষের একটি ঘরে ‘দিনের চিন্তা, রাতের স্বপ্নকে ঘিরে বেঁচে আছেন যাত্রাপ্রাণ যাত্রাশিল্পী রবি দাস’। আলোকচিত্রী রবি দাসের যাত্রাজগতের ছবি তোলার পঞ্চাশ বছরের নানা কাহিনি ও স্থিরচিত্র ঠাঁই পেয়েছে গৌতম বাগচির গবেষণায়। ৭ জুলাই উল্টোরথের দিনটিতে পারুল থেকে প্রকাশ পেল গৌতম বাগচি রচিত যাত্রাচিত্রী রবিদাস। গ্রামে-গ্রামে পালাগানের ইতিবৃত্তের সঙ্গে বইটিতে উঠে এসেছে তথ্যনথি, মানবজীবনের ধারাবাহিক বেঁচে থাকার গল্পও। বাঙালির ঐতিহ্যময় লোকসাংস্কৃতিক পরিচয়ের এ এক অনন্য অভিজ্ঞান। সঙ্গে তারই প্রচ্ছদ।
স্বদেশি গান
সঙ্গীতের মাধ্যমে ‘গণচেতনা’র সূচনা নীল বিদ্রোহের সময়। এর পর বিভিন্ন আন্দোলনে বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ, অতুলপ্রসাদ, রজনীকান্ত, নজরুল প্রমুখের গান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিত। ১৯৩৫-এ কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘গণনাট্য সংঘ’। এই সংস্থার হাত ধরেই ‘গণসঙ্গীত’-এর সূচনা। সে সব গান নিয়ে ১৭ জুলাই স্বামী বিবেকানন্দের পৈতৃক আবাস ও সংস্কৃতি কেন্দ্রে দেবাশিস দত্তের কণ্ঠে শোনা যাবে গণসঙ্গীতের অনুষ্ঠান ‘ভারত আমার ভারতবর্ষ’। সঙ্গে থাকবে স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কিত গান। অন্য দিকে ১৬ জুলাই সন্ধে ছ’টায় রবীন্দ্রসদনে সংশোধনাগারের আবাসিকদের দল ‘মুক্তবেড়ি’ ও মা-দলের এক সঙ্গে লোকগানের অনুষ্ঠান ‘প্রাণের টানে মাটির গানে’।
দোলনচাঁপা
‘কাজী নজরুল ইসলামের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থের নামে আমরা আমাদের পত্রিকার নামকরণ করেছি। মনে সাধ, নজরুলের প্রিয় মিষ্টি-মধুর এই শব্দটি পাঠকদের মুখে মুখে ফিরবে...।’ লিখছেন নজরুল চর্চায় দীর্ঘ দিন নিবেদিত মীরাতুন নাহার। ১৬ জুলাই বিকেল ৫টায় বাংলা আকাদেমিতে তাঁরই সম্পাদিত ত্রৈমাসিক দোলনচাঁপা-র আত্মপ্রকাশ। পত্রিকার মূল বিভাগ দু’টি নজরুল চর্চা এবং শিশু-কিশোরদের নিজেদের ও তাদের জন্যে রচিত সাহিত্য। পত্রিকা-প্রকাশ অনুষ্ঠানে থাকবে নজরুলের কবিতা ও গান পরিবেশন। আসবেন বিশিষ্ট বঙ্গজনেরা। অন্য দিকে কবির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য: ‘অন্য নজরুল’। কিউরেটর: সুজয়প্রসাদ ঘোষ। প্রিয়া এন্টারটেনমেন্টস-এর উদ্যোগে গায়ক মনোময় ভট্টাচার্যের শিল্প-পরিবেশন। কবির নাতনি অনিন্দিতা কাজী পড়বেন কবির তিনটি রোমান্টিক চিঠি, আর পুত্রবধূ কল্যাণী কাজীকে সংবর্ধিত করা হবে। ১৭ জুলাই সন্ধে ৭টা ১৫-য়, তাম-এ (প্রিয়া-র পাশেই)।
শিক্ষাবিদ
বাংলা সাহিত্যের অধ্যয়ন ও অধ্যাপনায় দীর্ঘ জীবন কাটিয়েছেন অরুণকুমার মুখোপাধ্যায়। বাংলা ছন্দ চর্চার অন্যতম পথিকৃত্ অমূল্যধন মুখোপাধ্যায়ের পুত্র অরুণকুমার ছিলেন খুবই মেধাবী ছাত্র। প্রথম জীবনে প্রেসিডেন্সি কলেজে এবং পরে ২৭ বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন অরুণবাবু। বহু ছাত্র তাঁর তত্ত্বাবধানে গবেষণা করেছেন। নিজেও গবেষণা ভিত্তিক বেশ কিছু বই লেখেন। সম্প্রতি চুরাশি বছর বয়সে প্রয়াত হলেন এই শিক্ষাবিদ।
শিক্ষার প্রসারে
১৮৩০ সালের মে মাসে কলকাতায় পা দিয়েছিলেন স্কটিশ মিশনারি আলেকজান্ডার ডাফ (১৮০৬-৭৮)। তাঁর বুঝতে দেরি হয়নি, স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষাদান জরুরি। অবিলম্বে তৈরি হল নতুন স্কুল, তা থেকে জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন। ১৯৩৯-এ তৈরি হল নিজস্ব বাড়ি, আজও জোড়াবাগান থানার সামনে সেই বাড়ি কোনও রকমে টিকে আছে। ১৮৪৩-এ চার্চে মতভেদ, ডাফ আবার নতুন করে গড়লেন ফ্রি চার্চ ইনস্টিটিউশন। ১৯০৮-এ ডাফের দুই প্রতিষ্ঠান মিলে হল স্কটিশ চার্চেস কলেজ, আর ১৯২৯-এ চার্চ অফ স্কটল্যান্ড ফের এক হওয়ার পর শেষ বারের নামবদল: স্কটিশ চার্চ কলেজ। আজ সকাল ১১টায় কলেজের ১৮৫তম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপন। প্রধান অতিথি প্রসার ভারতীর সিইও জহর সরকার, প্রতিষ্ঠা দিবসের ভাষণে তুলে ধরতে চান ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে মেকলের প্রতিতুলনায় ডাফের গুরুত্ব।
সমসাময়িক
ইচ্ছে ছিল মহাকাশবিজ্ঞানী হবার, হয়ে গেলাম লেখক, বলছিলেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। গত শনিবার গড়িয়া সোনার বাংলা মার্কেট কমপ্লেক্সে তিনি উদ্বোধন করলেন আনন্দ-র নতুন একটি গ্রন্থবিপণি। তারপর এলেন বাঘাযতীন আনন্দ’য়, ওদের ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে। সেখানেই তাঁর ছোট-বড় পাঠকরা মেতে উঠল তাঁকে পেয়ে। নানা প্রশ্নের উত্তর দিলেন, বললেন, এক সময় সারা রাত জেগে বই পড়েছেন, এখন সময়ের অভাব তাঁকে দুঃখ দেয়। ‘এখনকার পাঠক কিন্তু অনেক স্মার্ট, অনেক বেশি বোঝে। ‘... হ্যারি পটার নিয়ে অনেকে অনেক কিছু বলে, আমি কিন্তু তাঁর বিরোধী নই, রাওলিং একটা আলাদা জগত্ তৈরি করেছে।’ ভূত প্রসঙ্গে বললেন ‘আমি ভূতে ভয় পাই, যে যাই বলুক’। অঙ্ক সম্পর্কে তাঁর ভয়ঙ্কর ভীতি থাকলেও সর্বনেশে ভুল অঙ্ক কিন্তু সেই অঙ্ক নিয়েই লেখা, কারণ তাঁর কথায় গোটা পৃথিবীতেই সারাক্ষণ একটা অঙ্কের স্রোত বয়ে চলেছে। তবে ‘আমার বয়স হচ্ছে বুঝতে পারি, কিন্তু আমি ভীষণ সমসাময়িক, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারি।’
একসঙ্গে
এক জনের জন্ম পুরুলিয়া শহর, অন্য জনের কলকাতা। দুই জনেই এক সঙ্গে আঁকা শিখতে শুরু করেছিলেন ‘কলেজ অব ভিসুয়াল আর্টস’-এ। সেখানেই পরিচয়, ভালবাসা, শেষে সংসার। সিদ্ধার্থ সেনগুপ্তের ছবিতে ফুটে ওঠে শ্রীকৃষ্ণ (সঙ্গে তারই একটি), একের পর এক সিরিজ। শিবানীর ছবিতে ‘আরণ্যক’। এই প্রথম দম্পতির এক সঙ্গে প্রদর্শনী, অকাদেমি অব ফাইন আর্টস-এ ১৫-২১ জুলাই। উদ্বোধনের দিন আছে মীরা গোপালকৃষ্ণনের রবীন্দ্রসঙ্গীত।
এ দিকে ছবিতে সম্পর্কের উষ্ণতাকে খুঁজেছেন আশিস রেহমান। ভালবাসার সম্পর্ক হারিয়ে যাচ্ছে। সন্তানকে স্নেহ-মমতায় বড় করার পরও বাবা-মায়ের শেষ জীবন কাটে বৃদ্ধাশ্রমে। একা নয় একসঙ্গে এই বিষয়টি তুলে ধরেছেন আর্ট কলেজের প্রাক্তনী আশিস। ১৫ জুলাই সন্ধে সাড়ে ছ’টায় আইটিসি সোনার-এর ‘দি আর্ট গ্যালারি’-তে শুরু হচ্ছে তাঁর ৩০টি তৈলচিত্রের প্রদর্শনী ‘অ্যাফিনিটি’। ২০ জুলাই (১১-৭) পর্যন্ত। সঙ্গে তারই একটি ছবি।
নাটক থেকে নাট্য
কী ভাবে নাটক হয়ে ওঠে একটি লেখা? কী ভাবে বিভিন্ন স্তরে বিবর্তনের পথে হেঁটে পৌঁছয় মঞ্চে? তা নিয়েই আলোচনায় রতন থিয়াম, মনোজ মিত্র, বিভাস চক্রবর্তী, শাঁওলি মিত্র, ওয়ামন কেন্দ্রে, ত্রিপুরারি শর্মা, অতুল পেঠে, চন্দন সেন, দীপন শিবরামন, মনীশ মিত্র, অনুপ হাজরিকা এবং অর্পিতা ঘোষ। মিনার্ভা নাট্যসংস্কৃতি চর্চাকেন্দ্রের আয়োজনে ১৬-২০ জুলাই পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের প্রবীণ-নবীন নাট্য নির্দেশকদের এই আলোচনাচক্র অনুষ্ঠিত হবে শিশির মঞ্চ এবং রবীন্দ্র সদনে। উপস্থিত থাকবেন পর্যটনমন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। থাকছে তিনটি নাটক ‘দেবী সর্পমস্তা’, ‘নাথবতী অনাথবত্’ এবং ‘সিনেমার মতো’র বিশেষ প্রদর্শনও।
রবির কিরণে
তোমাদের নেত্রকোণায় আমার জন্মদিনের উত্সব যেমন পরিপূর্ণ মাত্রায় সম্পন্ন হয়েছে এমন আর কোথাও হয়নি।... এই উপলক্ষে বত্সরে বত্সরে তুমি আমার গানের অর্ঘ্য পৌঁছিয়ে দিচ্ছ তোমাদের পল্লী মন্দিরে।’ রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন শৈলজারঞ্জন মজুমদারকে (১৯০০-১৯৯২)। রবীন্দ্রগানের এই আচার্যের জন্ম ময়মনসিংহের নেত্রকোণায়। বিশ্বভারতীতে যোগ দেন ১৯৩২-এ, কবির সান্নিধ্যে সঙ্গীত চর্চার শুরু, সঙ্গীত ভবনের অধ্যক্ষ হন ১৯৩৯-এ, ‘দেশিকোত্তম’ হন ১৯৮৫-তে। তাঁর কাজ ও জীবন নিয়ে ছবি করছেন বাংলাদেশের এস বি বিপ্লব, চয়নিকা-র প্রযোজনায় ‘রবির কিরণে শৈলজারঞ্জন’। ‘তাঁকে দেখার সৌভাগ্য না হলেও তাঁর জন্মস্থান থেকে অল্প দূরে হাওর এলাকায় আমার জন্ম। নেত্রকোণার ইতিহাস নিয়ে ছবি করতে গিয়ে আমার জন্মভূমির গৌরব এই মানুষটিকে নিয়ে ছবি করতে আগ্রহী হয়ে উঠি।’ জানালেন বিপ্লব। বাংলাদেশ তো বটেই, শান্তিনিকেতন কলকাতাতেও শুটিং করেছেন তিনি। সঙ্গীতাচার্যের জীবনতথ্য সংগ্রহ থেকে শুটিং অবধি গবেষণাভিত্তিক এই প্রামাণ্যচিত্রটি তৈরি করতে প্রায় দশ বছর লেগে গেল তাঁর, ‘আশা করছি বাকিটুকু শেষ করে এ বছরের শেষ বা পরের বছরের শুরুতে ঢাকায় প্রিমিয়ার করতে পারব, তারপর কলকাতায় দেখাব।’ এর অংশবিশেষ গত এপ্রিলে আইসিসিআর-এ দেখানো হয়েছে। সেটি এ বার জোড়াসাঁকোয় দেখানো হবে চয়নিকা-র নিবেদনে, রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির হল-এ, তাদেরই সহযোগিতায়। সঙ্গে আলোচনায় দুই বাংলার বিশিষ্ট জন। শৈলজারঞ্জনের জন্মদিন ১৯ জুলাই ৩টেয়। সঙ্গে বিপ্লবের ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।
শতবর্ষে বিপ্লবী
কুমিল্লা জেলার ফৈজন্নেসা গার্লস স্কুলে পড়তে পড়তেই মেয়েটির স্বদেশি আন্দোলনের প্রতি ঝোঁক গড়ে ওঠে। তার থেকে বিপ্লবী দলে নাম লেখানো। ছাত্র সমিতির মারফত মাত্র পনেরো বছর বয়সে অনুশীলন সমিতির কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয় প্রতিভা ভদ্রর। তাঁর ওপর ভার পড়ে পাড়ায় পাড়ায় ছোট ছোট সংঘ তৈরির। সেখান থেকেই দেওয়া হত প্রশিক্ষণ, লাঠিখেলা, ছোরা খেলার। মেয়েদেরও বৈপ্লবিক কাজকর্মে উত্সাহ দিতে থাকেন। পাশাপাশি চলত ফেরার বিপ্লবীদের আশ্রয় দেওয়া, অর্থ সংগ্রহ, অস্ত্র লুকিয়ে রাখা। ১৯৩২-’৩৬ হিজলি জেলে বন্দি ছিলেন, পরে স্বগৃহে আরও দুই বছর অন্তরিন থাকেন। কারাবাসের সময়ও গোপনে কাজ করে গেছেন প্রতিভা। ১৯৩৮-এ তাঁর নেতৃত্বে ছাত্রীকমিটি তৈরি হয়। ১৯৩৯-এ সুভাষচন্দ্র যখন মূল কংগ্রেস থেকে সরে গিয়ে আলাদা ভাবে দল পরিচালনা শুরু করলেন, প্রতিভা বিপিসিসি-র মহিলা উপসমিতির সম্পাদিকা হন। প্রতিভা ভদ্রর জন্ম ১৯১৪-র ১৬ জুলাই কুমিল্লা শহরে। ১৯৪০-এ বিয়ে হয় হরিকুমার রায়চৌধুরীর সঙ্গে। হরিকুমার কোনও দিনই প্রতিভার কাজে বাধা দেননি। ছাত্রীসংগঠনের তরফে ১৯৪২-এর আন্দোলনে যোগ দেন। সে বছরই সেপ্টেম্বর মাসে গ্রেফতার হন। ১৯৪৫-এর অগস্ট মাসে ছাড়া পেয়ে ত্রিপুরায় দাঙ্গার রিলিফে যোগ দেন। প্রতিভা ‘অঙ্গনা’ মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন দশ বছর। বিস্মৃতপ্রায় এই বিপ্লবীর এ বছর জন্মশতবর্ষ। সেই উপলক্ষে ১৬ জুলাই বাগুইআটির দেশবন্ধুনগরের বাড়ি ‘চন্দ্রাতপ’-এ একটি অনুষ্ঠানে প্রতিভাদেবীর স্মৃতিচারণ করবেন কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও সহযোদ্ধা সুষমা চক্রবর্তী। ছবি: শ্যামল রায়চৌধুরীর সৌজন্যে।