ভালবাসার শহর
নাখোদা মসজিদের তেকোণা ফুটপাথে থইথই ভিড়, তার মধ্যেই রাস্তায় দু’টো ট্রাম পেরিয়ে যাচ্ছে পরস্পরকে। স্ট্র্যান্ড রোডে বোঁচকা মাথায় পুণ্যার্থীরা চলেছেন গঙ্গাসাগর মেলায়। রোববার বিকেলে ময়দানে গোল হয়ে ঘিরে দাঁড়ানো মানুষজন বাঁদরখেলা দেখছে। কত রকমের কলকাতা নিমাই ঘোষের লেন্সে! তাঁর তোলা ছবির ভিতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এ শহরটার নানান চেহারা, মেজাজ ভেসে ওঠে চোখে। হালফিলের কলকাতা থেকে স্মৃতির কলকাতায় টেনে নিয়ে যায়। পেলে এসেছিলেন এক বার এই ফুটবল-পাগল শহরে। স্মিতহাস্যে উপবিষ্ট পণ্ডিত আলি আকবর খান, তাঁর মুখমণ্ডল নির্মাণে নিবিষ্ট ভাস্কর আনন্দকিশোর ধর। আড্ডায় রবিশঙ্করের সঙ্গে সত্যজিত্।
’৬৯-এর কলকাতা, রাসবিহারীর মোড়ে রাস্তা পার হচ্ছেন তরুণ রঞ্জিত মল্লিক, পিছনে সিগারেটের বিজ্ঞাপন-গায়ে দোতলা বাস, অস্টিন গাড়ি মৃণাল সেনের ‘ইন্টারভিউ’ ছবির দৃশ্য (সঙ্গের ছবি)। কত কিছু হারিয়ে গেল কলকাতা থেকে, সে সব লুপ্ত মুহূর্ত জেগে রইল নিমাইবাবুর ছবিতে। অমিতাভ বচ্চন তাঁর জীবনের আদি পর্ব কাটিয়েছিলেন এখানে, সেই শহরটাকে ফের তিনি খঁুজে পেয়েছেন সদ্য প্রকাশিত নিমাইবাবুর কলকাতা (কলিন্স) অ্যালবামটির ভিতর। অ্যালবামের মুখবন্ধে তাঁর ছবি সম্পর্কে লিখেছেন অমিতাভ। শঙ্করলাল ভট্টাচার্যও লিখেছেন অ্যালবামে, দীর্ঘ গদ্য, ‘রিমেমবারিং কলকাতা’। কলকাতার নগরস্থাপত্য, শিল্পসংস্কৃতি বা জীবনযাপন নিয়ে অ্যালবাম করবেন কখনও ভাবেননি নিমাইবাবু, ‘ষাটের দশক থেকে ছবি তুলছি, ছবি তোলার খিদেটা তাড়িয়ে নিয়ে ফিরত, উদ্দেশ্যহীন ভাবে আমার এই ভালবাসার শহরটার ছবি তুলে গিয়েছি। আসলে ছবির বিষয় ছড়ানো থাকে চারপাশে। এ সব শিখেছি আমার আদি গুরু মেজদার (রেনেসাঁস স্টুডিয়োর ভূপেন্দ্রকুমার সান্যাল) কাছে। তার পর শিখেছি ফোটোগ্রাফির ম্যাগাজিনে কার্তিয়ে ব্রেসঁ’র ছবি দেখে। আর আজীবন শিখেছি মানিকদার (সত্যজিত্ রায়) থেকে।’ তাঁর ছবির প্রদর্শনীও শুরু হয়েছে মায়া আর্ট স্পেস-এ অন্য আলোকচিত্রীদের সঙ্গে, ১৯-২৭ অগস্ট।
অন্য উপেন্দ্রকিশোর
শিশুসাহিত্যিক তথা ‘সন্দেশ’ সম্পাদক হিসেবে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী যতটা পরিচিত, ছবি ছাপার কলাকৌশলের উদ্ভাবক হিসেবে তাঁকে আমরা ততটাই কম চিনি। উপযুক্ত পরিকাঠামো ছাড়াই গবেষণা করে তিনি হাফটোন মুদ্রণের নানা পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন, তা নিয়ে লন্ডনের ‘পেনরোজেস অ্যানুয়াল’-এ ১৮৯৭-১৯১২-র মধ্যে ৯টি প্রবন্ধ লেখেন, আর ‘সন্দেশ’-এ ছবি ছাপায় হাতেকলমে প্রয়োগও করেন। এ সব লেখা এ শহরে দুর্লভ ছিল এত দিন। এ বার ব্রিটিশ লাইব্রেরি থেকে সংগ্রহ করে ৯টি লেখাই ছবি সহ হুবহু প্রতিমুদ্রণে নিয়ে এল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় (এসেজ অন হাফ-টোন ফোটোগ্রাফি)। প্রয়াত সিদ্ধার্থ ঘোষ তাঁর একাধিক বইয়ে এই লেখাগুলির দিকে পাঠকের চোখ ফিরিয়েছিলেন, তাঁর একটি লেখা এখানে সংযোজিত হয়েছে। বইটির প্রকাশ ২৯ অগস্ট চারটেয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচ এল রায় সভাগৃহে।
শুভানুধ্যায়ী
আর্থিক কারণে প্রতিভার বিকাশ হয় না এমন মনখারাপ করা বহু দৃষ্টান্ত আছে। এমনই আর এক জন হতে পারত ২০১৩ সালে ধনুর্বিদ্যায় জাতীয় সাবজুনিয়র মিটে সোনাজয়ী অঙ্কিতা ভকত। কিন্তু না, এগিয়ে চলার বাধা জয়ের পথে প্রকৃত শুভানুধ্যায়ী পেয়ে গেছে সেই মেয়ে। অর্থাভাবে দামি ফাইবারের ধনুক কেনার সাধ্য ছিল না, আর তা ছাড়া আরও বড় প্রতিযোগিতায় সফল হওয়ার কোনও আশাও করতে পারত না অঙ্কিতা।
এ খবর জানতে পেরে বাগবাজার মাল্টিপারপাস গার্লস স্কুলের ২০১৪ সালের মাধ্যমিক উত্তীর্ণ অঙ্কিতার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তারই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রীদের সংগঠন। রাখিপূর্ণিমার দিন বাগবাজার রিডিং লাইব্রেরিতে এই কিশোরী প্রতিভার হাতে এক লক্ষ ছ’হাজার একান্ন টাকার চেক তুলে দিলেন প্রাক্তনীরা। সংগঠনের প্রথম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান উজ্জ্বল হয়ে থাকল এই শুভ প্রচেষ্টায়। টাটা অ্যাকাডেমিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ ও নিজের স্কুলের প্রাক্তনীদের এমন আন্তরিক উদ্যোগ অঙ্কিতাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
পুনঃসৃজন
দাদুর আমলের কালো তোরঙ্গ কার না মনে আছে। কিন্তু কালো কেন? ৪ বিপিন পাল রোডে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে শিল্প-ইতিহাসবিদ তপতী গুহঠাকুরতা জানালেন, এর পিছনেও ইতিহাস আছে। ১৯০১-এ ভিক্টোরিয়ার মৃত্যুর পর এক বছর ধরে কালো ছাড়া অন্য রঙের আসবাব তৈরি হয়নি। তপতী আরও জানালেন, দক্ষিণ কলকাতার এই সব বাড়িতেও আছে হরেক ইতিহাস। তিন তলা এই বাড়িটি যেমন! ১৯৩২-এ ল্যান্ড ডিড হয়, এক তলা ১৯৩৫-এ। ঢাকা থেকে এসে বাড়ির মালিক পাকাপাকি থাকতে শুরু করেন ১৯৪২ নাগাদ। ইতিমধ্যে বাড়ি ক্রমে তিন তলা, এক তলা সদ্যোজাত তীর্থপতি ইনস্টিটিউশনকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ভাড়ার টাকায় বাড়ি তিন তলা করায় সেই আমলের অধ্যাপকের আর্থিক জীবন পরিষ্কার। ছত্রপতি দত্তের নেতৃত্বে শিল্পীরাও পুনঃসৃজন করেছিলেন ইতিহাস। চল্লিশ দশকের রেডিয়ো সেট, বাড়ির ফ্লোর প্ল্যান, ইনস্টলেশনে জাতীয়তাবাদী দৃষ্টি। এই বাড়িতে ‘খোঁঁজ কলকাতা’-র উদ্যোগে সম্প্রতি তপতী ও ছত্রপতিরা যে ভাবে ঐতিহ্যের পুনঃসৃজন করলেন, সেটি প্রতি মুহূর্তে মনে পড়িয়ে দিচ্ছিল বাড়ির প্রয়াত স্রষ্টাকে... ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদার!
পরম্পরা
পুরাকালে ছাতিমতলায় শিষ্যকে পাঠদান করতেন গুরু। আর এ যুগে ইটের দেওয়ালের মধ্যে চলে সেই অধ্যয়ন। সময় বদলালেও রীতি বদলায়নি। তাই গুরু-শিষ্যের পরম্পরা চলে আসছে আজও। ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র ‘কাব্যায়ন’। সাড়ে পাঁচশো ছাত্রছাত্রী নিয়ে তার ছ’টি শাখায় গুরুর তত্ত্বাবধানে চলছে শিক্ষাদান। ১৬ জন সেরা শিষ্যকে নিয়েই ২৮ অগস্ট শিশির মঞ্চে সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠান ‘পরম্পরা’। সেখানে আবৃত্তির জগতে গুরুর হাত ধরে পদার্পণ করবেন শিষ্যরা। এই অনুষ্ঠানে ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবার নামাঙ্কিত ‘মঞ্জুলকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়’ স্মৃতি সম্মান প্রদান করা হবে ঊর্মিমালা বসু ও জগন্নাথ বসুকে।
আশিতে ‘সীতা’
‘চিত্রপঞ্জী’-তে (মাঘ, ১৩৩৮) দেবকীকুমার বসু তাঁর ‘মূক ও মুখর’ নিবন্ধে লিখছেন: ‘চলচ্চিত্র ব্যবসায়ে আমাদের দাঁড়াতে হবে আমেরিকা ও ইউরোপের প্রতিযোগিতায়। দাঁড়াব না বললে উপায় নেই, কারণ না দাঁড়ালে তাদের পায়ের তলায় শুয়ে পড়তে হবে।’ বাংলা ছবির এই প্রবাদপ্রতিম পরিচালক (১৮৯৮-১৯৭১, সঙ্গের ছবি) আশি বছর আগেই ‘সীতা’কে আন্তর্জাতিক সম্মান এনে দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। এই উপলক্ষে তাঁর অন্য ছবিগুলি রত্নদীপ, কবি, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য এবং স্বল্পদৈর্ঘ্যের চারটি হিন্দি ছবি দেখানোর আয়োজন নন্দনে ২৭-২৮ অগস্ট। সঙ্গে তাঁকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও। উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। থাকবেন অমর পাল, পূরবী মুখোপাধ্যায় এবং পরিচালক-পুত্র দেবকুমার বসু। নন্দন আর ফিল্মস ডিভিশনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তপন সিংহ ফাউন্ডেশন।
বিশ্বের আঙিনায়
কলকাতা থেকে সাহিত্যিক বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এ বার যাচ্ছেন আয়ওয়া শহরে। যে শহরে গিয়ে শঙ্খ ঘোষ লিখেছিলেন ঘুমিয়ে পড়া অ্যালবাম ও আয়ওয়ার ডায়েরি, আর সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়/ নীললোহিতের কলম থেকে বেরিয়েছিল সুদূর ঝর্নার জলে। ’৬৭-তে শুরু, আয়ওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রাম’-এর ৪৭তম অধিবেশনে এ বার আমন্ত্রিত হয়েছেন বিনায়ক। পল এঙ্গেলের শুরু-করা এই ‘লিখন কর্মশালা’ সর্বার্থেই অভূতপূর্ব। সারা দুনিয়ার লেখকদের নিয়ে দশ সপ্তাহের এই কর্মশিবির চলবে ২৩ অগস্ট থেকে ১১ নভেম্বর।
শরত্চন্দ্র বসু ১২৫
শুধুমাত্র নেতাজিকে দিয়ে তো আমরা চিনি না বসু পরিবারকে, শরত্চন্দ্র বসু আজও বাঙালির স্মৃতিতে উজ্জ্বল। ব্যারিস্টার শরত্চন্দ্র নিরন্তর লড়াই চালিয়েছেন ব্রিটিশরাজের বিরুদ্ধে। সমাজ-রাজনীতির ঋদ্ধ ঐতিহ্য বহনকারী বসু পরিবারে শরত্চন্দ্র ছিলেন নেতাজি-সহ অন্য বিপ্লবীদেরও অভিভাবক স্বরূপ। তাঁর সুযোগ্য পুত্র শিশিরকুমার বসু (১৯২০-২০০০) তাঁকে নিয়ে যে গ্রন্থ রচনা করেন, শরত্চন্দ্র বোস/ রিমেমবারিং মাই ফাদার, তাঁর ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তা প্রকাশ করছে নেতাজি রিসার্চ ব্যুরো ও নিয়োগী বুকস। বহু দুর্লভ ছবি, চিঠিপত্র, ডায়েরি, তথ্যনথি ঠাঁই পেয়েছে বইটিতে। নেতাজি ভবনে (এলগিন রোড) ২৮ অগস্ট সন্ধে সাড়ে ৬টায় বইটি প্রকাশ করবেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। প্রমিতা মল্লিক গাইবেন উদ্বোধনী গান। আর সুগত ও সুমন্ত্র বসু বলবেন শরত্চন্দ্র ও শিশিরকুমারকে নিয়ে।
উত্সবে বিজন
শম্ভু মিত্রের ছায়ায় কি ঢাকা পড়ে গেলেন বিজন ভট্টাচার্য? গত জুলাইয়ে তাঁর জন্মশতবর্ষে পদার্পণ পেরিয়ে গিয়েছে, কিন্তু তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। তবে এ বার যত্কিঞ্চিত্ উদ্যোগ দেখা যাবে পূর্বপশ্চিম নাট্যোত্সবে। ২৭ অগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর ওই উত্সবে অ্যাকাডেমিতে থাকছে বিজন ভট্টাচার্যকে নিয়ে কমল সাহা পরিকল্পিত প্রদর্শনী। ২৭ তারিখ রবীন্দ্রসদনে উত্সবের সূচনা করবেন রতন থিয়াম। থাকবেন নানা বিশিষ্টজন। রমাপ্রসাদ বণিক স্মারক পুরস্কার অর্পিত হবে ব্রাত্য বসুকে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নাট্যপাঠে গার্গী রায়চৌধুরী। থাকছে মণিপুরের কলাক্ষেত্র-র দ্রৌপদী, ওড়িশার নাট্যচেতনার ফুলা-সহ শহরের নানা দলের নাটক, আর শেষ দিনে বাংলা আকাদেমিতে সেমিনার।
চার দশক
সত্তর দশকের সাংস্কৃতিক স্রোতের মধ্যেই জন্ম অশনি নাট্যমের। গড়িয়ায়, ১৯৭৪-এ। পেরিয়ে গেল চল্লিশটি বছর, সদ্য শেষ হল তারই বর্ষব্যাপী উদ্যাপন। গত এক বছর ওরা নিয়মিত আয়োজন করেছে নাটক নিয়ে আলোচনাসভা, কর্মশিবির, কবি সম্মেলন, তথ্য ও কাহিনিচিত্র প্রদর্শন, শিশু-কিশোর ও লোকসংস্কৃতি উত্সব, গান-আবৃত্তি, চিত্র-ভাস্কর্য প্রদর্শনী। পূর্ণাঙ্গ প্রযোজনা ‘প্রবহমান’ প্রদর্শিত হল ১৫ অগস্ট সুজাতা সদনে। সম্মান জানানো হল মুক্তাঙ্গন রঙ্গালয়কে। মুক্তাঙ্গন থেকেই রওনা হয় নাট্যকর্মীদের বর্ণাঢ্য পদযাত্রা (সঙ্গের ছবি)। উষা গঙ্গোপাধ্যায় প্রকাশ করলেন স্মারকগ্রন্থ চড়াই উতরাই পেরিয়ে...।
নৃত্যশিল্পী
পঞ্চাশের দশক। নতুন আঙ্গিকে রবীন্দ্রনাথকে দেখতে-ভাবতে শিখল কলকাতা। জর্জ বিশ্বাসের গানের সঙ্গে বেড়া ভাঙার নাচ নেচে কলকাতাকে চমকে দেন মঞ্জুশ্রী চাকি। নৃতত্ত্ববিদ এই শিল্পী ছিলেন সমকালীন নৃত্যভাষার অন্যতম পুরোধা। জন্ম মুর্শিদাবাদে, তবু তিনি ও পার বাংলার মেয়ে। শৈশব থেকে পাবনার ‘মদ্দা খুকু’ ডানপিটে, তর্কপ্রিয় আর স্বাধীনচেতা। দেশ ভাগের পর কলকাতায় চলে আসা। জর্জ বিশ্বাসের সঙ্গে কোমর বেঁধে তার ‘নতুন নাচ’ এর শুরুটা তখনই। আল্লারাখার বোল, দেবব্রতর কণ্ঠের নাটকীয়তা, আর মঞ্জুশ্রীর দৃপ্ত নৃত্যভাষা রীতিমত ছাপ ফেলেছিল। বিয়ের পর আফ্রিকা আর আমেরিকায় থাকার জন্য আন্তর্দেশিকতার ছাপ পড়ে বাঙালিনির নাচে। আশির দশকে কলকাতায় ফিরে নিজের প্রতিষ্ঠান ড্যান্সার্স গিল্ড-কে সঙ্গে নিয়ে ‘তোমারি মাটির কন্যা,’ ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘কোন নূতনের ডাক’ এক নতুন নৃত্যভাষার সূচনা করেন। মণিপুরি, কথাকলি, ছো, কালারি, সব মিলে এক অন্য রসায়ন। সঙ্গে নৃত্যশিল্পী কন্যা রঞ্জাবতী। ছাত্রী ঐশিকা চক্রবর্তীর স্মৃতিতে, মঞ্জুশ্রী সব সময়ই বলতেন, ভঙ্গিমা যা-ই হোক, মেরুদণ্ড সোজা রাখবে। ২৮ অগস্ট মঞ্জুশ্রীর আশিতম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর সব পুরনো গল্পের পাতা উল্টে পড়া হবে আইসিসিআর-এ। সে দিন সকালে ‘ড্যান্স মেকার্স অব কনটেম্পোরারি বেঙ্গল: রোল অব উওম্যান পারফরমার্স’ বিষয়ে আলোচনা, আয়োজনে ড্যান্সাসর্র্ গিল্ড। সহায়তায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবীবিদ্যা চর্চা কেন্দ্র ও আইসিসিআর।
কান্তকবি
কলকাতায় এসে অক্ষয়কুমার সরকারের মেসে গান বাঁধতে বসলেন রজনীকান্ত। গানের স্থায়ী ও অন্তরাটুকু রচনা করেই তাঁরা এলেন ‘বসুমতী’ অফিসে জলধর সেনের কাছে। জলধর জিজ্ঞাসা করলেন ‘আর কৈ রজনী?’ রজনীকান্ত বললেন, ‘এইটুকু কম্পোজ করিতে দাও, ইহারই মধ্যে বাকিটুকু হইয়া যাইবে।’ হলও তাই। কম্পোজ আরম্ভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গান রচনা সম্পূর্ণ! এমনই ছিলেন কান্তকবি। গানে সুর দিতেন, নিজেও সুগায়ক ছিলেন। কোনও আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না, ছিল অসাধারণ প্রতিভা। পাবনার সিরাজগঞ্জে জন্ম, সাব জজ পিতা গুরুপ্রসাদ সেনও ব্রজবুলিতে বৈষ্ণব এবং শিবদুর্গা পদাবলি রচনা করে সুর দিয়েছিলেন। সেই সুর তুলে আত্মহারা হয়ে যেতেন রজনীকান্ত। একটি ফ্লুট বাঁশিতেই চলত তাঁর সঙ্গীত-চর্চা। স্বদেশি আন্দোলনের যুগের কবি ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়’ গানটির মাধ্যমে ঢুকে গিয়েছিলেন বাঙালির ঘরে ঘরে। ১৯০২-এ কবির প্রথম বই বাণী ও ১৯০৫-এ কল্যাণী প্রকাশিত হয়। অকালমৃত্যুর আগে তিনটি ও পরে পাঁচটি বই প্রকাশিত হয়। ৪৫ বছরের জীবনে তিনি প্রায় তিনশো গান রচনা করেন। কবির সার্ধশতজন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ৬ সেপ্টেম্বর সন্ধে ছ’টায় সাধারণ ব্রাহ্মসমাজে অনুষ্ঠান, পাতাবাহার-সূত্রধর-সুতানুটি বইমেলা কমিটি-র উদ্যোগে। প্রকাশ পাবে অশোককুমার রায় সম্পাদিত কান্তকবি রজনীকান্ত, নানা দুর্লভ লেখা ও ছবির সঙ্গে সেখানে থাকছে তাঁর গ্রন্থপরিচয়, তাঁকে নিয়ে আলোচনার পঞ্জি। পৌরোহিত্যে দিলীপকুমার রায়, সুধীর চক্রবর্তী বলবেন রজনীকান্তকে নিয়ে।