মেট্রো

গাফিলতি কবুল, নিদান রোজ রেক পরীক্ষার

বিপর্যয়ের পরে নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। নির্দেশ দেওয়া হল, যাত্রার আগে পরীক্ষা করতে হবে প্রতিটি রেক। শনিবারের দুর্ঘটনার তদন্তেও উঠে এসেছে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের কথা। যা সে দিনের বিপর্যয়ের কারণ। তবে গাফিলতির দায় কার, এখনও তা স্পষ্ট নয় কর্তৃপক্ষের কাছে। সোমবার তাই ঘটনার তদন্তের জন্য চার উচ্চপদস্থ অফিসারকে নিয়ে একটি কমিটি গড়া হয়েছে। তাঁরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবেন।

Advertisement

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:৩০
Share:

বিপর্যয়ের পরে নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। নির্দেশ দেওয়া হল, যাত্রার আগে পরীক্ষা করতে হবে প্রতিটি রেক। শনিবারের দুর্ঘটনার তদন্তেও উঠে এসেছে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের কথা। যা সে দিনের বিপর্যয়ের কারণ। তবে গাফিলতির দায় কার, এখনও তা স্পষ্ট নয় কর্তৃপক্ষের কাছে। সোমবার তাই ঘটনার তদন্তের জন্য চার উচ্চপদস্থ অফিসারকে নিয়ে একটি কমিটি গড়া হয়েছে। তাঁরা বিষয়টি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবেন।

Advertisement

মেট্রো সূত্রে খবর, সুড়ঙ্গের ‘ডেঞ্জার জোনে’ ট্রেন থমকে যাওয়ার পরে পরিদর্শনের যান মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার রাধেশ্যাম। সব দিক খতিয়ে দেখে সোমবার তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, যাত্রী নিয়ে রওনা হওয়ার আগে বিশেষ ভাবে পরীক্ষা করতে হবে চালকের সঙ্গে কন্ট্রোলের সংযোগকারী ব্যবস্থা। জিএম আরও নির্দেশ দেন, এ বার থেকে সুড়ঙ্গে ট্রেন আটকালে যাত্রীদের আর হাঁটিয়ে আনা হবে না। ব্রেক খুলে খারাপ রেকটি আনা হবে নিকটতম স্টেশনে, যাতে দুর্ভোগ না পোয়াতে হয় যাত্রীদের।

প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পরে তদন্তকারীরা দেখেন, শনিবার রেকের বিদ্যুৎ গ্রহণের অসুবিধের সঙ্গে অতিরিক্ত সমস্যা ছিল ইউপিএস-এর ব্যাটারিতেও। ওই ব্যাটারিই পুড়ে কটু গন্ধের ধোঁয়া বেরিয়ে আসে কামরার মধ্যে। আর তাতেই শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় যাত্রীদের। ওই দিন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলেই কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য রাখা জিএসএম মোবাইলেও সমস্যা তৈরি হয়। তাতেই দেরি হয়য় কন্ট্রোলে খবর পৌঁছতে। কিন্তু তিন দিনেও মেট্রো প্রশাসন চিহ্নিত করতে পারেনি, ঠিক কাদের গাফিলতিতে এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটল।

Advertisement

তদন্তে এ সব তথ্য বেরোনোর পরে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে মেট্রোরকর্তাদের মধ্যে। যে সব বিভাগের কর্মী অফিসারদের হাতে (ইলেকট্রিক্যাল, সিগন্যাল এবং টেলিকমিউনিকেশন) ওই বিষয়গুলি দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে, কেন তাঁরা এর দায়ভার নেবেন না প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও। মেট্রোকর্তাদের একাংশের দাবি, অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, তদন্ত-রিপোর্ট খতিয়ে দেখে তবেই সিদ্ধান্ত হবে কেউ শাস্তি পাবেন কি না।

ঠিক কী জন্য সুড়ঙ্গের ওই ‘ডেঞ্জার জোনে’ থেমে গিয়েছিল বাতানুকূল ট্রেনটি? মেট্রো সূত্রের খবর, রেকটিতে বিদ্যুতের ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমে আগে থেকেই গোলমাল ছিল। বেলগাছিয়া পার করে সুড়ঙ্গের ডেঞ্জার জোনের মাঝপথে ওই গোলমাল ফের চাগাড় দেওয়ায় থার্ড রেল থেকে বিদ্যুৎ টানতে না পেরে আচমকা দাঁড়িয়ে পড়ে রেকটি। রেকের সব ক’টি কামরাও অন্ধকার হয়ে যায়। বাতানুকূল রেক হওয়ায় তার এয়ার ভেন্টিলেশন সিস্টেমও বন্ধ হয়ে যায়।

ওই সময়ে চালক চেষ্টা করেন রেকে থাকা ব্যাটারি ব্যাকআপ পাওয়ার সাপলাই থেকে বিদ্যুৎ নিতে। কিন্তু দু’টি স্যুইচের দ্বিতীয়টি দেওয়া মাত্রই একটি আলো জ্বলে শব্দ করে তা বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় সঙ্গেসঙ্গেই বেরোতে শুরু করে পোড়া গন্ধ। ধোঁওয়া ঢুকে যায় কামরাগুলিতে। বিদ্যুতের অভাবে একেই দমবন্ধ করা পরিবেশ, তার পরে ওই কটু ধোঁওয়ায় যাত্রীদের শ্বাস কষ্ট শুরু হয়ে যায়।

এত সবের মধ্যেই চালক চেষ্টা করেন কন্ট্রোলে বিষয়টি জানাতে। কিন্তু সেই ইমার্জেন্সি ফোনও অচল হয়ে যায় বিদ্যুতের অভাবে। ফলে সেখানেও হয় বিপত্তি। ক্রমশ দেরি হতে শুরু করে। এর পরে কোনও মতে জিএসএম সিস্টেমটি চালু করে চালক খবর পাঠান কন্ট্রোলে। ততক্ষণে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে।

মেট্রোকর্তাদের একাংশ বলছেন, পরপর ঘটনাগুলি পর্যবেক্ষণ করে এটা পরিষ্কার যে, ওই ত্রুটিগুলি মেট্রোরই। এ ভাবে একের পর এক ঘটনা ঘটছে, কিন্তু মেট্রো কর্তৃপক্ষ নির্বিকার। কোনও কর্মী-অফিসারের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আর তাতেই কাজের পরিবেশ সম্পূর্ণ উবে গিয়েছে মেট্রো থেকে। কর্তা থেকে কর্মী, সকলেই চলছেন গায়ে হাওয়া দিয়ে। অন্য দুই জোনের কর্তারা বলছেন, অবিলম্বে অন্য জোনগুলির মতো এই জোন থেকেও কর্মী ও অফিসারদের বদলির পক্রিয়া চালু করা হোক। তা না হলে কাজের কাজ কিছুই হবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন