আন্তর্জাতিক জঙ্গি-যোগের বদলে কলকাতার জাল নোটে উঠে আসছে জালিয়াতির ষড়যন্ত্রই। প্রাথমিক তদন্তে এমনই দাবি করছে লালবাজারের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, জাল নোট চক্রের চাঁই চন্দ্রশেখর ওরফে পাপ্পু জায়সবালের সঙ্গে এখনও কোনও জঙ্গি সংগঠনের যোগ মেলেনি। বরং জেরায় পাপ্পু জানায়, কেনাকাটার জন্যই জাল টাকা ছাপায় সে।
২৭ ফেব্রুয়ারি লোহা কারবারি পাপ্পুকে ধরে এসটিএফ। ২৮ ফেব্রুয়ারি তার মানিকতলার বাড়ি ও ডোমজুড়ের গুদামে হানা দিয়ে চারশো বস্তা জাল টাকা ও টাকা ছাপানোর সরঞ্জাম-যন্ত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়। জেরায় পাপ্পু পুলিশকে জানায়, কিছু দিন ধরে তার ব্যবসায় মন্দা চলছিল। মাস দুই আগে কয়েক হাজার টাকার জাল নোট তার হাতে আসে। তার দাবি, ওই নোটগুলি সহজেই সে আসল টাকা হিসেবে চালিয়েছিল। এর পরে পাপ্পু ঠিক করে জাল নোট ছাপিয়ে তা দিয়ে ব্যবসা করবে। গোয়েন্দাদের অনুমান, জাল নোট ছাপাতে আসল টাকা স্ক্যান করে একটি সফট্ওয়্যার ব্যবহার করেছিল পাপ্পু। তবে এসটিএফের দাবি, আসল টাকার কুচি কিনলেও জাল নোটে সিকিওরিটি থ্রেড বসাতে পারেনি পাপ্পু।
এই সূত্রে কলকাতার একটি ছাপাখানার যোগাযোগও উঠে এসেছে বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। তদন্তকারীরা বলছেন, শু্যটিংয়ে ব্যবহার করা হবে বলে ওই ছাপাখানা থেকে জাল নোট ছাপানো হয়। পাপ্পুর কাছে যে জাল নোট মিলেছে তাতে ইউরো, পাউন্ড, লিরার মতো বিদেশি মুদ্রাও রয়েছে। এক জন ব্যবসায়ী শুধুমাত্র জিনিস কিনতে কেন এত জাল টাকা ছাপাবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে পুলিশের একাংশ।
এসটিএফ সূত্রের দাবি, বিদেশি নোট মেলায় একাধিক কেন্দ্রীয় সংস্থাকেও জানানো হয়। গোয়েন্দারা জানান, বিদেশি নোটের মধ্যে প্রচুর ‘খেলনা’ টাকা লেখা রয়েছে। যা ছাপানোর ছাঁচ মুম্বই থেকে পাপ্পু জোগাড় করেছিল।
সোমবারও এনআইএ-র একটি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন এসটিএফ-এর কর্তারা। লালবাজার সূত্রের দাবি, ২০১২ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে একটি টাকা ছাপানোর ছাঁচ চুরি যায়। সেই ছাঁচ বৃত্তান্ত জানানোর পাশাপাশি পাপ্পুর জাল টাকা নিয়েও আরবিআই-এর মত জানতে চাওয়া হয়েছে। সোমবার রাত পর্যন্ত অবশ্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তাদের মতামত জানায়নি।