সাধারণ এক ‘ব্যাঙ্ক জালিয়াত’ ভেবেই আদালতে তাকে পেশ করেছিল পুলিশ। কিন্তু আদালতে গিয়ে চমকে গেলেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসারেরা। কারণ, ওই যুবকের জামিনের জন্য সেখানে তার পক্ষ নিয়ে দাঁড়িয়েছেন ন’জন আইনজীবী। তাঁদের জোরালো সওয়ালে জামিনও পেয়ে গেলেন ওই যুবক।
লালবাজারের কর্তারা জানিয়েছেন, এর পরেই জোরদার তদন্ত চালিয়ে দেখা যায়, আসগর আলি নামে ওই যুবক আন্তর্জাতিক টাকা পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত। সম্প্রতি সারদা কেলেঙ্কারির পরে রাজ্য জুড়ে টাকা পাচার চক্রের হদিস খুঁজছে কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। এ বার খাস কলকাতাতেই এমন এক জন ধরা পড়ায় স্বাভাবিক ভাবেই নড়েচড়ে বসেছে লালবাজার। কিন্তু মূল অভিযুক্ত জামিন পেয়ে যাওয়ায় এখনও পর্যন্ত আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
কী ভাবে ধরা পড়েছিলেন আসগর?
পুলিশ সুত্রে জানা গিয়েছে, গত ২১ জুলাই নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে আসা ওই যুবককে দেখেই সন্দেহ হয়েছিল ভবানীপুরের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের কর্মীদের। তাঁকে বসিয়ে রেখেই কম্পিউটারে তথ্য ঘাঁটতে শুরু করেন তাঁরা। দেখা যায়, ওই যুবকই দিন কয়েক আগে অন্য নামে ওই ব্যাঙ্কেরই অন্য একটি শাখায় অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। এর পরেই পুলিশে খবর দেন তাঁরা।
লালবাজার সূত্রের খবর, ভবানীপুর থানার পুলিশ ব্যাঙ্কে গিয়ে ওই যুবককে জেরা করতেই এলোমেলো কথা বলতে থাকেন তিনি। তার কাছ থেকে মেলে একটি ভোটার আইডি কার্ড। তাতে আসগর আলি নামও রয়েছে। যদিও ১৭ জুলাই ওই ব্যাঙ্কেরই হাজরা শাখায় কামাল আলি নামে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন তিনি। সেখানে দাখিল করা ভোটার আইডি কার্ডে কামাল আলি নাম ও ওই যুবকের ছবি ছিল। দুটোতেই এক ঠিকানা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। পুলিশের দাবি, ভবানীপুর শাখায় আসগর যে ভোটার আইডি কার্ড দিয়েছিলেন, তাতে রফিক আলম নাম ছিল। সেখানেও ছবি তাঁর এবং ঠিকানা একই।
তদন্তে পুলিশ জেনেছে, হাজরা ব্যাঙ্কে থাকা আসগরের অ্যাকাউন্ট খোলার দু’দিনের মধ্যেই তাতে ২ লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা জমা পড়েছিল। তা এসেছিল আমেরিকার একটি অ্যাকাউন্ট থেকে। একটি বহুজাতিক ব্যাঙ্কের অনলাইন পরিষেবা মারফত ওই টাকা এসেছিল বলে তদন্তকারীরা জেনেছিল। এর পরে ২১ জুলাই হাজরার ওই ব্যাঙ্কের আলিপুর শাখা থেকে চেকে ২ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়। ৫০ হাজার টাকা তোলা হয়েছিল দু’টি এটিএম থেকে। আসগরকে জেরা করে পুলিশ জেনেছে, একবালপুরের এক মহিলা তাঁকে এই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে বলেছিলেন। তিনিই জাল ভোটার কার্ড ও অন্যান্য নথি জোগাড় করে দিতেন। প্রতি বার টাকা লেনদেন করার জন্য ২ হাজার টাকা করে পেতেন আসগর। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর মতো এমন আরও কয়েক জন যুবক ওই মহিলার হয়ে কাজ করেন।
লালবাজারের গোয়েন্দাদের সন্দেহ, ওই মহিলাই এ শহরে টাকা পাচার চক্রের মূল চাঁই। আসগরেরা নেহাতই তার হাতের পুতুল মাত্র। আসগরের আর্থিক অনটনকে কাজে লাগিয়েই তাঁকে এ পেশায় নিযুক্ত করা হয়েছে। আসগর অবশ্য জানিয়েছেন, একবালপুরে তাঁর দিদি থাকেন। সেই সূত্রেই ওই মহিলার সঙ্গে তাঁর পরিচয়। মহিলার খবর মেলার পরেই একবালপুরে হানা দিয়েছিল পুলিশের একটি দল। কিন্তু মহিলা ফেরার।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, টাকা পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত আসগর নামে ওই যুবক জামিন পেলেন কী করে?
পুলিশের দাবি, আসগরকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আর্জি জানানো হয়েছিল। ওই যুবককে উল্লেখ করা হয়েছিল, ‘দেশের পক্ষে বিপজ্জনক’ হিসেবে। কিন্তু গরিব পরিবারের ছেলে আসগরের হয়ে আলিপুর আদালতে ৯ জন আইনজীবী দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁদের সওয়ালের সামনে পুলিশের আইনজীবীর সওয়াল টেকেনি বলেই পুলিশের দাবি।
তবে পুলিশকর্তাদের দাবি, এই টাকা পাচার চক্রের পিছনে কারা রয়েছে, তার তদন্ত চলছে। বেশ কিছু সূত্র হাতে এসেছে। “আসগর জামিন পেলেও তদন্ত শেষ হয়নি। বরং আরও বিশদে শুরু হয়েছে।”মন্তব্য এক পুলিশকর্তার।