শীতের দুপুরে গরম ভাতে সসেজ কারি। অ্যাংলো পাড়ার অলিগলিতে ঢুকে এই গন্ধে যেন মনটা আনচান।
অ্যাংলো গিন্নিদের হাতে তৈরি পর্ক সসেজ মন টেনেছে অনেকেরই। সর্ষের তেলে হাল্কা ভাজা পেঁয়াজ, রসুন, জিরে গুঁড়োয় নাড়াচাড়া করা সেই মাংস। সঙ্গে গেরস্থালি তুকতাক। ইলিশ ভাজা তেলে মাখা ভাতের সঙ্গেই যেন একমাত্র তুলনা হয় সেই স্বাদ-গন্ধের। কালো মেমের হেঁসেলে উঁকি দেওয়ার সুযোগ না থাকলেও বর্ষশেষের সাহেবি আমেজের উদ্যাপনে এ বার তা চেখে দেখা যায় রেস্তোরাঁয় বসেই।
বাঙালি সাহেবদের ক্রিসমাস ইভের নৈশভোজে ক্র্যানবেরি সসের জায়গায় আমসত্ত্বের চাটনি দিয়ে টার্কি রোস্টও প্রচলিত। ঘরোয়া বাঙালি স্বাদের সাহেবি ব্যবহার, আর কী। এ শহরের খাদ্য-সংস্কৃতিতে বাঙালি-সাহেবি ফিউশন তো আর আজকের কথা নয়। ফিউশন তালিকায় মিষ্টি কুমড়ো, চিংড়ির ভিন্ডালু, রোস্ট মটন ভুনিও কম যায় না উৎসব মরসুম জমিয়ে তোলার ক্ষমতায়। বাইপাসের কাছের কে কে’জ ফিউশন এ ভাবেই শীত উৎসবের থিমটা বেধে দিয়েছে ঘরোয়া-সাহেবি মেজাজে। শীত পাবর্ণের মেনু কার্ডেও যেন এই ঐতিহাসিক ফিউশনের গন্ধ।
শীতের সঙ্গে সাহেব-প্রীতিও যে বাড়তে পারে, সে খেয়ালও রাখে রেস্তোরাঁ মহল। ফিউশনের পাশাপাশি সনাতনীর ব্যবস্থাও রাখে শহর। কোনও কোনও অঞ্চলে মিটলোফ ছাড়া ভাবাই যায় না বর্ষশেষের ছুটি। তেমন কোনও পশ্চিমী দেশ ঘুরে আসা বাঙালির উৎসব আলুনি থাকবে নাকি? বিফ বা পর্কের নরম লোফ অনায়াসেই হাজির করা যায় পাতে। বিশুদ্ধ সাহেবি কায়দায় ভোজ জমাতে সঙ্গে ক্রিম ব্রকোলি, রোস্টেড ডাক, কফি চকোলেট কাস্টার্ডের চার কোর্স মিল সাজিয়ে বসা যায় পার্ক স্ট্রিট বা শরৎ বসু রোডের মার্কো পোলোয়।
বড়দিনের মরসুমে আয়ারল্যান্ডে নাকি এখনও ফিশ অ্যান্ড চিপসের বিশেষ কদর। তার সঙ্গে যত্নে বানানো লেমন সস্। সে দেশে কখনও বড়দিন কাটিয়ে আসারা এখনও খুঁজে বেড়ান মনভোলানো সেই সস্। শহরে নতুন তৈরি আইরিশ খাবারের ঠিকানাটি ঘুরে আসা যায় সেই সন্ধানের ছুঁতোয়। গ্রিলড্ ফিশের সঙ্গে লেমন বাটার সস্ অথবা বিয়ার ব্যাটার্ড ফিশ ফ্রাই জিভে গলে গিয়ে অন্য স্বাদ জোগাতে পারে কলকাতার শীতে। শেষপাতে প্লাম পুডিং অথবা অ্যাপ্ল আপসাইড ডাউন কেক মনে করাতে পারে কোনও আইরিশ গিন্নির যত্নের ক্রিসমাস ডেজার্ট। আয়ারল্যান্ডের পাব কালচারও বিশেষ আকর্ষণীয়। সেই সংস্কৃতির ছোঁয়াও মিলতে পারে পার্ক সার্কাস অঞ্চলের শপিং মলে উপরের আইরিশ হাউসে।
সাহেবি গ্রিল হোক বা সি ফুড, অথবা ট্র্যাডিশন মেনে টার্কির রোস্ট। পাঁচতারা মেজাজে উৎসব জমাতেও পিছিয়ে নেই কলকাতা। তাজ বেঙ্গলের বিভিন্ন রেস্তোরাঁ কোমর বেঁধে প্রস্তুত এই শীতকে স্মরণীয় করে তুলতে। নতুন বছরে শ্যাম্পেন ব্রাঞ্চের রোম্যান্টিকতাতেও মাতা যায় এই হোটেলে বসে।
ল্যাম্ব-টার্কি-পর্ক রিবে সাহেবিয়ানা উদ্যাপন করা যায় হোটেল হিন্দুস্থান ইন্টারন্যাশনালেও। সঙ্গীর মন বুঝে থাকুক মানানসই মিউজিক। লাইভ গজল থেকে মেটাল সঙ্গীত থাকছে সবই।
সিজলার সম্ভার সাজিয়ে বসতে আবার ঢুঁ মারা যায় গেটওয়ে হোটেলে। বিশ্বায়নের যুগে বহু দিনই হল মিলেমিশে গিয়েছে নানা অঞ্চলের গ্রিলড্-আহার। ঠিক কোন পদটি দেশি, কোনটি ততটা আপন নয়, গুলিয়ে ফেলতে বসছেন বহু অভিজ্ঞ শেফও। সনাতনী সাহেবি স্টেকের পাশাপাশি ফিউশন রান্না, থাকছে সবই। রাজস্থানী কায়দায় পনীরের সিজলার তার অন্যতম।
চনমনে মেজাজে শীত-শহরে ফুর্তি জমাতে আসর বসতে পারে নতুন কোনও ঠিকানাতেও। পার্ক স্ট্রিটের এম বার কিচেন হোক বা পণ্ডিতিয়া রোডের বুদ্ধ বাইটস্, পানীয় সহযোগে ফিঙ্গার ফুড হুল্লোড়ের মরসুমে এক্কেবারে মানানসই।
বড়দিন কেটে গেলেও ডেজার্ট অথবা প্রাতরাশে কেক-পেস্ট্রির বায়না কাটেনি। দ্য ললিত গ্রেট ইস্টার্নের অরেঞ্জ-রোজমেরি মাফিন, স্টোলেন ব্রেড তৈরি হয়েছে তেমনই কোনও দিনে আহারে বিশেষ আহ্লাদ দিতে। বছর শেষের সপ্তাহটায় মিষ্টিসুখে মজতে মামা মিয়ায় বিকোচ্ছে রকমারি কেক-পুডিং-ব্রেড। আর রাজকীয় মেজাজে নতুন বছর বরণ করতে তাজ বেঙ্গলে তৈরি হচ্ছে জমকালো চেহারার রেড ভেলভেট কেক!