টালা ট্যাঙ্ক মেরামতির কাজে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সহায়তা মিলবে কি?
কলকাতা পুরসভা ও রাজ্য সরকার আপাতত এ নিয়ে ধন্দে। ১০৪ বছরের পুরনো ওই ট্যাঙ্ক সারাইয়ে প্রায় ৫৮ কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারেরা। খরচের বহর দেখে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য। জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের আর্থিক সহায়তায় তা সারানো হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল কেন্দ্রও। সেই মর্মে প্রাথমিক কাজও শুরু করে দেয় পুর-প্রশাসন। সম্প্রতি বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে জানায়, ওই প্রকল্পে অর্থ সহায়তা আপাতত দেওয়া যাবে না। আর তা জেনেই কলকাতা শহরে পানীয় জল সরবরাহের ক্ষেত্রে সব চেয়ে বড় ভরসার আয়ু নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে রাজ্য সরকার। পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম শনিবার বলেন, “নতুন সরকারের কাছে ফের দরবার করা হবে। ওরা রাজি না হলে শহরবাসীর স্বার্থে রাজ্য সরকারকেই টাকার ব্যবস্থা করতে হবে।”
কেন্দ্রীয় সহায়তা না মেলার খবরে হতাশ কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “ঐতিহ্যবাহী ওই জলাধারের সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। সহায়তার আশ্বাস দিয়েও যে ভাবে তা বাতিল করা হল তা অন্যায়, অগণতান্ত্রিক।”
জল সরবরাহ দফতরের এক আধিকারিক জানান, ৯০ লক্ষ গ্যালন জল ধারণের ক্ষমতাসম্পন্ন টালা ট্যাঙ্ক এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে কাজ করে চলেছে। এই সময়ের মধ্যে টালা ট্যাঙ্কে বড় ধরনের কোনও মেরামতির প্রয়োজন হয়নি। পুরসভা সূত্রের খবর, বছরখানেক আগেই গোটা পাঁচেক ফুটো ধরা পড়ে টালা ট্যাঙ্কে। ওই সব ফুটো দিয়ে কম পরিমাণ হলেও জল বেরিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে ওই ট্যাঙ্কের নানা অংশ পুরনো হয়ে ক্ষয়ে গিয়েছে। টালা ট্যাঙ্ক সারাতে জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের আর্থিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছিল রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। প্রকল্প-কর্তাদের সবুজ সঙ্কেত পেয়ে তা সারাইয়ের ব্যাপারে খড়্গপুর আইআইটি, শিবপুর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাইট্স-এর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এক কমিটি তৈরি হয়। শতবর্ষের ওই ট্যাঙ্ক কতটা সুরক্ষিত রয়েছে, তা নিয়ে সমীক্ষা করেন তাঁরা। আইআইটি-র এক বিশেষজ্ঞ জানান, ১০০ বছর আগে যে ইস্পাত দিয়ে টালা ট্যাঙ্ক তৈরি হয়েছিল, সেই ইস্পাত দিয়েই গড়া হয়েছিল টাইটানিক জাহাজ।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে গত বছরই কলকাতা পুরসভা প্রকল্প-রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি করে। পরে তা পাঠানো হয় দিল্লিতে জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের প্রধান দফতরে। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, সেই প্রকল্প কেন্দ্রীয় অনুমোদনও পেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে, আপাতত ওই প্রকল্পে টাকা দেওয়া হবে না। আর তাতেই বিপাকে পড়ে পুরসভা ও সরকার।
এ দিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেএনএনইউআরএম প্রকল্পটাই এ বছর থেকে উঠে যাচ্ছে। ২০১২ সাল অবধি ওই প্রকল্পের মেয়াদ ছিল। পরে তা আরও দু’বছরের জন্য বাড়ানো হয়। তার পরিবর্তে যে নতুন প্রকল্প আসবে, সেখানে ফের আবেদন করতে বলা হয়েছে। এ দিন পুরমন্ত্রী বলেন, “গত মার্চের মধ্যেই প্রকল্পটি ছাড়পত্র পায়। ভোটের কারণে কাজ শুরু করা যায়নি। এখন ওই স্কিম নেই বলে ফের আবেদন করানোর কোনও যুক্তি নেই।” তিনি জানান, আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে না বলে কেন্দ্র যে চিঠি দিয়েছে, তার উত্তরে রাজ্যও একটি চিঠি পাঠিয়েছে। তাঁর কথায়, “কেন্দ্রীয় সরকারকে লিখেছি, সহযোগিতার হাত বাড়ান। উন্নয়নে রাজনীতির রং দেখবেন না।” তিনি জানান, নতুন করে ফের আবেদন করে অনুমোদন পেতে আরও ছয় থেকে আট মাস লেগে যাবে। তাতে টালা ট্যাঙ্কের আরও ক্ষতি হবে। সেটা হতে দেওয়া যাবে না।