উৎপলবাবুর দেশলাই বাক্সের সংগ্রহ। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।
তাঁর সঙ্গে থাকেন স্বাধীনতা সংগ্রামী থেকে শুরু করে ফুটবল ও ত্রিকেটের খেলোয়াড়েরা, পুরনো দিনের গায়িকা, চলচ্চিত্র-তারকারা। থাকেন চিত্তরঞ্জন দাশ-সুভাষচন্দ্র বসু-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পেলে-গাওস্কর-সুব্রত ভট্টাচার্য। গহরজানের পাশাপাশি সেখানে জায়গা পেয়েছেন দিলীপকুমার-সত্যজিৎ রায়-অমিতাভ বচ্চন-মুনমুন সেন এমনকী হালের প্রিয়ঙ্কা চোপড়া। জায়গা হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন নামী তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা, যেমন আইবিএম, অ্যাপল ইত্যাদিরও।
বিশ্বাস হচ্ছে না? আসলে এঁরা সকলেই আছেন দেশলাই বাক্সের মাধ্যমে। শুধু দেশি নয়, জার্মানি, বেলজিয়াম, রাশিয়া, ফ্রান্স, সুইডেন-সহ পৃথিবীর নানা দেশ ঘুরে আনা সেই দেশলাই বাক্সের তালিকায় আপনি দেখতে পাবেন ব্রিটিশ আমলে কেমন ছিল চন্দননগর। পাওয়া যাবে ক্যানসারের মতো মারণ রোগের বিরুদ্ধে, ধূমপানের বিরুদ্ধে সচেতনতার বার্তাও। এখানেই শেষ নয়। চক্ষুদান, রক্তদান পাল্স পোলিও-র মতো কাজে আরও বেশি মানুষকে সামিল করতেও পথ দেখাবে এই তালিকা। এমনকী, তালিকায় রয়েছে জাপানের ত্রিমাত্রিক দেশলাই বাক্সও। পরিবেশ রক্ষার কাজেও যে সামান্য দেশলাই বাক্স এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে, তা-ও জানতে পারবেন সাধারণ মানুষ।
কলকাতার ক্যানসার গবেষক, চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের প্রাক্তন বরিষ্ঠ সহ-অধিকর্তা উৎপল সান্যাল গত ৪০ বছর ধরে, সেই ১৯৭৪ সাল থেকে সংগ্রহ করে চলেছেন এমনই বিচিত্র সব দেশলাই বাক্স ও লেবেল। তাঁর সেই বিপুল সংগ্রহ নিয়ে আজ, শুক্রবার গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় শুরু হচ্ছে এক প্রদর্শনী। উৎপলবাবু জানালেন, তাঁর সংগ্রহে রয়েছে প্রায় ২৮ হাজার দেশলাই বাক্স ও লেবেল। সে থেকে বাছাই করা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার দেশলাই বাক্স ও লেবেল দেখা যাবে এই প্রদর্শনীতে। থাকবে বাড়ির আকারের, অধুনা কলকাতায় কার্যত হারিয়ে যাওয়া দোতলা বাসের আকারের দেশলাই বাক্স। ফ্রান্সে
তৈরি এগারো ফুট লম্বা দেশলাই বাক্সও দেখবেন দর্শকেরা। একটি দেশলাই বাক্সের লেবেলে আবার দেখা যাবে পেলে-সুব্রত ভট্টাচার্যের মুখোমুখি লড়াই। উৎপলবাবু আরও জানালেন, একটি দেশলাই বাক্সের গায়ে লেখা থাকবে ‘মোমবাতি জ্বালাও, সিগারেট নয়’। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা ‘মোনালিসা’ তো অনেকেরই চেনা। তিনিও উঠে আসবেন দেশলাই বাক্সের লেবেলে। সেই লেবেলে সিগারেটের ছবির
পাশে স্মিত হাসিতে নয়, ভ্রূ কুঁচকে থাকবেন মোনালিসা।
উৎপলবাবুর কথায়, “কলকাতায় এমন প্রদর্শনী এই প্রথম। অনেকেই মনে করেন, দেশলাই বাক্স জমানো ছোটদের বিনোদন মাত্র। কিন্তু এর মাধ্যমে মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এবং পাশাপাশি, সামাজিক সচেতনতারও যে বার্তা পৌঁছে দেওয়া যায়, আমি সেই চেষ্টাই করেছি।” এই প্রদর্শনী তাই সংগ্রাহকদের পাশাপাশি আপামর জনসাধারণের কাছেও অর্থবহ হবে, এমনটাই মনে করছেন বিশিষ্ট এই ক্যানসার গবেষক।