দমদমে শিল্পী দম্পতি পার্থ ঘোষ-গৌরী ঘোষের বাড়িতে হামলায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তার সঙ্গে এই ঘটনায় অভিযুক্ত আরও দুই যুবককে ধরা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই ভাঙচুরের ঘটনায় ধৃতের সংখ্যা দাঁড়াল আট।
পুলিশ জানিয়েছে, পার্থবাবুর ছেলে অয়ন যাকে আসল অভিযুক্ত বলে দাবি করেছিলেন সেই রঞ্জিত সাউ ওরফে বান্না ধরা পড়েছে। ব্যরাকাপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান অজয় ঠাকুর বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বলে আরও কয়েক জনের নাম উঠে এসেছে। তাদেরও খোঁজ চলছে।” তবে গত দু’দিন ধরে যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা সকলে এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত কি না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।
শনিবার ধৃত তিন জনকে শনাক্ত করার জন্য অয়নকে দমদম থানায় ডেকে পাঠানো হয়। অয়ন দমদম থানায় গিয়ে লম্বা চুলের যুবক বান্না ওরফে রঞ্জিত সাউকে শনাক্ত করলেও তাঁর দাবি, বাকি দুই ধৃতকে তিনি ঘটনার দিন দেখেননি। তখন প্রশ্ন ওঠে, গত দু’দিন ধরে পুলিশের জালে ধরা পড়া সকলে আদৌ এই ঘটনায় যুক্ত কি না। কারণ, এর আগে ধৃতদের শনাক্ত করতে অয়নকে ডাকেনি পুলিশ। অয়ন বলেন, “পাড়ার লোকেরা আমাদের বাড়িতে এসে বারবার বলছেন, যাদের ধরা হচ্ছে তারা কেউ ঘটনার দিন ছিলই না। এই সংশয় কাটাতে কেন পুলিশ আমায় ডাকল না ধৃতদের শনাক্তকরণের জন্য?” অয়নের দাবি, পুলিশ অতিসক্রিয় হয়ে কয়েক জন নির্দোষকেও গ্রেফতার করেছে বলে তাঁকে জানিয়েছেন পড়শিরা।
ঘটনার দিন হামলার সময়ে ৩০-৩৫ জন ছেলে ছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছেন অয়ন। তিনিই আরও জানান যে, অভিযুক্তেরা সকলে ওই পাড়া অথবা পাশের পাড়ার ছেলে।
কিন্তু অয়ন কি সকলের মুখ মনে রেখে ৩৫ জনকে শনাক্ত করতে পারবেন? পুলিশের দাবি, যথেষ্ট প্রমাণ সহযোগেই অভিযুক্তদের ধরা হয়েছে। যারা ওই সরস্বতী পুজোর সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং ওই রাতের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাদেরকেই ধরা হচ্ছে। গোয়েন্দা প্রধান বলেন, “তবু প্রয়োজন হলে তাদেরকে শনাক্ত করতে টি আই প্যারেড করা হবে।”
পুলিশ জানিয়েছে, রঞ্জিতকে কাঁকিনাড়া থেকে শুক্রবার গভীর রাতে গ্রেফতার করে দমদম থানার পুলিশ। বাকি ধৃতদের নাম সনু সাউ ও অমন শর্মা। এদের ছ’দিনের জেল হেফাজত দেয় আদালত। শুক্রবার যে পাঁচ অভিযুক্তকে ব্যারাকপুর কোর্টে তোলা হয়, তাদেরও সাত দিনের জেল হেফাজত দিয়েছিল আদালত। শুক্রবার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৪৩, ৩৪১, ৪৫০, ৪২৭, ৫০৬ এবং ৩৪ ধারায় মামলা করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৪৫০ ধারাটি জামিন অযোগ্য ধারা। শনিবারও ধৃতদের একই ধারায় মামলা করা হয়েছে।
দমদমের বরফকল এলাকার ডক্টর এস পি মুখার্জি রোডের একটি আবাসনে থাকেন পার্থবাবু, গৌরীদেবী ও অয়ন। অভিযোগ, সরস্বতী পুজোর বিসর্জনকে কেন্দ্র করে বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত মাইক ও ডিজে গানের তাণ্ডব চলছিল পাড়ায়। রাত পৌনে একটা নাগাদ গৌরীদেবী অসুস্থ জানিয়ে তারস্বরে মাইক বাজানোর প্রতিবাদ করেন অয়ন। অভিযোগ, তখনই তাঁদের বাড়িতে ইট-বৃষ্টি শুরু হয়। ইটের আঘাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পান গৌরীদেবী ও পার্থবাবু।
অয়নের অভিযোগ, তাঁদের মারতে ইট হাতে দেওয়াল টপকে রেলিং বেয়ে উঠে পড়ে এক লম্বা চুলের যুবক। এমনকী, এলোপাথাড়ি লাথি চালিয়ে বাড়ির দরজা ভাঙারও চেষ্টা হয়। তাঁর দাবি, লম্বা চুলের ওই যুবকই এই ঘটনার মূলে। তাকে দেখলে চিনতে পারবেন বলেও পুলিশকে জানিয়েছিলেন অয়ন।