কামদুনি, মধ্যমগ্রামের পরে দমদম। আবার গণধর্ষণের অভিযোগ। আবার নির্যাতিতার আত্মহননের চেষ্টা। স্থানীয় বাসিন্দাদের চেষ্টায় রক্ষা পেয়েছেন দমদমের প্রমোদনগরের ওই তরুণী। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে গণধর্ষণের অভিযোগে দমদম থানার পুলিশ তিন যুবককে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশি সূত্রের খবর, গত ২৭ এপ্রিল প্রমোদনগরের এক পরিচিত যুবকের সঙ্গে বেড়াতে বেরিয়েছিলেন ওই তরুণী। সেই সময় যুবকটির কয়েক জন সঙ্গীও ছিল। অভিযোগ, ওই যুবক এবং তার তিন সঙ্গী প্রমোদনগরের ঝিলপাড়ের রাতে মাঠে তরুণীকে ধর্ষণ করে। মোবাইলে সেই অত্যাচারের ছবিও তুলে রাখে। কাউকে কিছু বললে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয় ওই যুবকেরা। তার পরেও তাঁকে ক্রমাগত উত্ত্যক্ত করছিল তারা। ফের ধর্ষণের চেষ্টাও করছিল। কিন্তু হুমকির মুখে তরুণীটি কাউকে কিছু জানাতে পারছিলেন না।
পরিস্থিতি দুর্বিষহ হয়ে ওঠায় মঙ্গলবার রাতে নির্যাতিতা তরুণী দমদম ক্যান্টনমেন্টের রেললাইনে আত্মহত্যা করতে উদ্যত হন। স্থানীয় লোকজন দেখতে পেয়ে তাঁকে নিরস্ত করেন এবং থানায় নিয়ে যান। দমদম থানায় গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন তরুণী। পুলিশ রাতেই এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে ওই এলাকা থেকে তিন যুবককে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, ধৃতদের নাম রাজা কর্মা, রঞ্জিত সরকার ও রাজদীপ সাহা। ব্যারকপুর কমিশনারেটের এডিসি সুরেশ চাডভি বলেন, “মেয়েটি অভিযোগ করার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ দ্রুত সক্রিয় হয়ে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। ছেলেগুলো প্রমোদনগর এলাকাতেই থাকে। মেয়েটির গোপন জবানবন্দিও নেওয়া হয়েছে।”
তরুণী ওই দুষ্কৃতীদের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন কেন? পুলিশের কাছে ওই তরুণী জানান, তিনি বিভিন্ন বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন। মায়ের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন প্রমোদনগরের একটি বাড়িতে। যে-যুবকের সঙ্গে সে-দিন তিনি বেড়াতে বেরিয়েছিলেন, তার সঙ্গে অল্প কিছু দিন আগে তাঁর পরিচয় হয়। সে তাঁকে ২৭ তারিখ রাতে ঝিলপাড়ে গল্প করতে ডাকে। তিনি ঝিলপাড়ে যেতেই ওই যুবক এবং তার দুই বন্ধু তাঁকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।
প্রশ্ন উঠেছে, ঘটনার এক মাস পরে তরুণী অভিযোগ করলেন কেন?
নির্যাতিতার পরিবার জানায়, লাগাতার প্রাণনাশের হুমকির মুখে ওই তরুণী থানায় অভিযোগ গায়ের করার সাহসই পাননি। আত্মীয়দের অভিযোগ, গণধর্ষণের ঘটনার পরেও ওই দুষ্কৃতীরা মেয়েটিকে নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করছিল। অতিষ্ঠ হয়েই তরুণী মঙ্গলবার বিকেলে ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিতে গিয়েছিলেন। এলাকার লোকজন তাঁকে উদ্ধার করেন। মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুরো বিষয়টি জানতে পারে পুলিশ। রাতেই প্রমোদনগরে তল্লাশি চালিয়ে তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। বুধবার অভিযুক্তদের ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের সাত দিন পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ওই তরুণী এখন বারাসতে তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়িতে আছেন বলে পরিচিতেরা জানান।
কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে কামদুনিতে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় রাজ্য জুড়ে তোলপাড় চলে দীর্ঘদিন। তার পরে মধ্যমগ্রামে এক কিশোরীকে দফায় দফায় ধর্ষণ করা হয়। তার পরেও অত্যাচার চলতে থাকায় গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করে সেই কিশোরী। একই ভাবে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যের মুখে দমদমের তরুণীটিও ট্রেনে গলা দিয়ে জ্বালা জুড়োতে চেয়েছিলেন। এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।