নিরাপত্তার ফস্কা গেরোয় ফেঁসে গেল প্রচারের ঢোল

শহরের ট্রাফিক-বিধি ভাঙার তালিকায় শুধু সাধারণ মানুষই নন, রয়েছে পুলিশও। সোমবার থেকে শহরে শুরু হল কলকাতা পুলিশের ‘পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ’। সাধারণ মানুষের মধ্যে ট্রাফিক সচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেন পুলিশের বড় কর্তারা। কিন্তু পথ নিরাপত্তা সপ্তাহে ‘শহরের সচেতনতা’ দেখতে বেরিয়ে অভিজ্ঞতা হল খানিকটা অন্য রকম। দেখা গেল, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বহু ক্ষেত্রে ট্রাফিক নিয়ম মানছে না খোদ পুলিশই।

Advertisement

অভীক বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:১৪
Share:

শহরের ট্রাফিক-বিধি ভাঙার তালিকায় শুধু সাধারণ মানুষই নন, রয়েছে পুলিশও। সোমবার থেকে শহরে শুরু হল কলকাতা পুলিশের ‘পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ’। সাধারণ মানুষের মধ্যে ট্রাফিক সচেতনতা বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেন পুলিশের বড় কর্তারা। কিন্তু পথ নিরাপত্তা সপ্তাহে ‘শহরের সচেতনতা’ দেখতে বেরিয়ে অভিজ্ঞতা হল খানিকটা অন্য রকম। দেখা গেল, সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বহু ক্ষেত্রে ট্রাফিক নিয়ম মানছে না খোদ পুলিশই।

Advertisement

দুপুর ১২টা ৩০ মিনিট: পার্ক স্ট্রিট মোড়। রাস্তা পারাপারের সময়ে মোবাইল ব্যবহার না করার প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে দুই স্কুলছাত্রী। তাদের সামনে দিয়েই মোবাইল কানে কথা বলতে বলতে রাস্তা পেরোলেন এক ব্যক্তি। কিছুক্ষণ পরে মোবাইল কানে ট্যাক্সির সামনে দিয়ে পেরোতে দেখা গেল এক স্কুলছাত্রীকেই।

দুপুর ২টো ৩০ মিনিট: ধর্মতলা মোড়। মোটরবাইকে বিনা হেলমেটে বেরিয়ে গেলেন দুই পুলিশকর্মী। দ্রুত গাড়ি চলছে, তার মধ্যেই দু’টি ট্যাক্সির মাঝখান দিয়ে কার্যত লাফিয়ে রাস্তা পেরোলেন দুই যুবক।

Advertisement

দুপুর ৩টে ৪১ মিনিট: সায়েন্স সিটি-পরমা আইল্যান্ড মোড়। পুলিশের মোটরবাইকের সামনে হেলমেট পরে এবং পিছনে হনুমান টুপি পরে বসে আছেন দুই পুলিশকর্মী। সায়েন্স সিটি থেকে রুবি হাসপাতালগামী রাস্তার উল্টো দিকে বিপজ্জনক ভাবে চলছে তাঁদের মোটরবাইক।

দুপুর ৪টে ৪৩ মিনিট: পার্ক সার্কাসে কানে মোবাইল গুঁজে কথা বলতে বলতে বাইক চালাচ্ছেন এক পুলিশকর্মী। আবার রেড রোডে দেখা গেল পুলিশেরই বাইকে সামনের জনের মাথায় হেলমেট থাকলেও পিছনে জলপাই রঙের পোশাকে বিনা হেলমেটে বসে এক যুবক।

পুলিশ জানিয়েছে, পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ উপলক্ষে শহরের ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থলে পুলিশকর্মীদের সঙ্গে বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও এক সপ্তাহ ধরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করবে। ১০টি জায়গায় দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ি রেখে তা মানুষের নজরে আনা হবে।

সেই সঙ্গে শহরের অটোচালক ও ট্যাক্সিচালকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে।

এ দিন পুলিশকর্তাদের একাংশ দাবি করেন, দেশের অন্য শহরের তুলনায় এ শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থা ভাল এবং দুর্ঘটনার পরিমাণ অনেকটাই কম। তবে সাধারণের মধ্যে সচেতনতা না এলে বছরে মাত্র এক বার পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ পালন করে যে কোনও লাভ হবে না, তা মেনে নিয়েছেন অনেকেই। সচেতনতার পাশাপাশি ক্রমাগত প্রচার এবং প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজন বলেই মত অধিকাংশ পুলিশকর্তাদের।

সাধারণ মানুষ ট্রাফিক নিয়ম ভাঙলে পুলিশ তাঁদের জরিমানা করে বা শাস্তি দেয়। সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ কি নিয়ম ভাঙতে পারে? কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “জরুরি প্রয়োজনে পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশের ক্ষেত্রে সমস্ত নিয়মে ছাড় আছে। কিন্তু অকারণে আইন লঙ্ঘন করে ধরা পড়লে বিভাগীয় তদন্তের পরে পুলিশেরও শাস্তি হতে পারে।”

ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী ও সুদীপ্ত ভৌমিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন