পুরুষাঙ্গ ও শিরা কেটে আত্মহত্যাই করে সেই খুনি

পরিকল্পনা মতো সবাইকে খুন করার পরে আত্মহত্যাই করেছিল হরিনাভির প্রোমোটার শঙ্কর কর্মকার। দেহগুলির ময়না-তদন্তের পরে এমনটাই ধারণা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা বলছেন, পুরুষাঙ্গটিও নিজেই কেটেছিল শঙ্কর! পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার গরফার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া শঙ্কর কর্মকার, রোহিণী চক্রবর্তী এবং তিন বছরের ইয়াশির দেহের ক্ষতচিহ্ন দেখে এই ঘটনাকে খুন ও আত্মহত্যার ‘যুগলবন্দি’ বলেই ব্যাখ্যা করছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০৫
Share:

মর্গে দেহ শনাক্ত করছেন নিহত রোহিণীর ভাই। —নিজস্ব চিত্র

পরিকল্পনা মতো সবাইকে খুন করার পরে আত্মহত্যাই করেছিল হরিনাভির প্রোমোটার শঙ্কর কর্মকার। দেহগুলির ময়না-তদন্তের পরে এমনটাই ধারণা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের। শুধু তা-ই নয়, তাঁরা বলছেন, পুরুষাঙ্গটিও নিজেই কেটেছিল শঙ্কর!

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার গরফার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া শঙ্কর কর্মকার, রোহিণী চক্রবর্তী এবং তিন বছরের ইয়াশির দেহের ক্ষতচিহ্ন দেখে এই ঘটনাকে খুন ও আত্মহত্যার ‘যুগলবন্দি’ বলেই ব্যাখ্যা করছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা।

পুলিশ জানায়, শঙ্কর বুুধবার রাতে স্ত্রী পৌলমী এবং ছেলে অরিত্রকে হরিনাভির ফ্ল্যাটে খুন করে। তার পরে রাতেই সে চলে আসে গরফার ফ্ল্যাটে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই ফ্ল্যাটেই তিন জনের দেহ উদ্ধার মেলে। সে সময়ে শঙ্করের পুরুষাঙ্গটি তার দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মিলেছিল। রোহিণী ও শঙ্কর, দু’জনের দেহেই একাধিক ক্ষতচিহ্ন ছিল। তদন্তকারীদের একাংশ অনুমান করেছিলেন, রোহিণীকে খুন করার সময়ে দু’জনের ধস্তাধস্তি হয়। তখনই কোনও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রোহিণী শঙ্করের পুরুষাঙ্গটি কেটে দিয়েছিলেন। তবে এ দিন ময়না-তদন্তের পরে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা রোহিণী নয়, শঙ্কর নিজেই তার যৌনাঙ্গ কেটেছিল। একে একটি বিশেষ মানসিক রোগ (ভ্যান গখ সিন্ড্রোম) বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

Advertisement

কী ভাবে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা?

তাঁদের মতে, এ ক্ষেত্রে অন্য মহিলাদের সঙ্গে শঙ্করের মেলামেশার কথা জেনে রোহিণী যদি ক্ষুব্ধ হয়ে স্বামীর পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলতেন, তা হলে তাঁর (রোহিণীর) হাতের আঙুলে, তালুতে ব্লেডে কাটার চিহ্ন থাকত। কারণ, ব্লেড দিয়ে কেউ যদি কাউকে বারবার আঘাত করেন, তা হলে যিনি ব্লেড চালান তাঁর আঙুলে ও তালুতে ব্লেডে কাটার দাগ থাকতে বাধ্য। রোহিণীর আঙুলে বা তালুতে তা ছিল না। কিন্তু শঙ্করের আঙুলে ও তালুতে সেই সব চিহ্ন মিলেছে।

পুলিশ ও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, রোহিণীর হাতে ও শরীরের অন্য কয়েকটি জায়গায় এমন কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন মিলেছে, যাতে বোঝা যাচ্ছে মৃত্যুর আগে মহিলা বাধা দিতে গিয়েছিলেন। সেই কারণেও শঙ্করের পুরুষাঙ্গ শরীর থেকে একেবারে আলাদা করে দেওয়ায় রোহিণীর ভূমিকা থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

লালবাজারের গোয়েন্দারা গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণ করার চেষ্টা করেছেন। বারবার কথা বলেছেন হরিনাভির খুনের তদন্তে থাকা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের সঙ্গে। সঙ্গে জুড়েছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যাও। সব মিলিয়ে শুক্রবার গোটা ঘটনার কালক্রম নিয়ে মোটামুটি একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তাঁরা। কী রকম?

পুলিশ জানায়, পৌলমী ও অরিত্রকে খুনের সময়ে শঙ্কর মত্ত অবস্থাতেই ছিল। তার পরে চলে আসে গরফায়। রাতভর সেখানেই ছিল। ওই বহুতলের বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জেনেছে, বুধবার গভীর রাতে শঙ্কর ও রোহিণীর ঝগড়ার আওয়াজ পেয়েছিলেন তাঁরা। তার পরে বৃহস্পতিবার সকালেও ফের চেঁচামেচি শোনেন। সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ বহুতলের নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গেও কথা বলেছিল শঙ্কর।

তদন্তকারীরা বলছেন, ময়না-তদন্তে কারও পেটেই খাবার মেলেনি। তবে শঙ্করের পাকস্থলীতে মদ পাওয়া গিয়েছে। ফলে এটা নিশ্চিত, খুনটি সকাল থেকে বেলা ১১টার মধ্যে হয়।

গরফার ফ্ল্যাটে কাকে আগে খুন করা হয়েছে এবং কাকে পরে খুন করা হয়েছে, তা নিয়ে অবশ্য ধন্দ রয়েছে। তদন্তকারীদের একাংশ বলছেন, ইয়াশিকে আগে কুপিয়ে ও পেটে ছুরি ঢুকিয়ে খুন করে শঙ্কর। যা দেখে আঁতকে ওঠেন রোহিণী। শঙ্কর তাঁকেও খুন করতে গেলে দু’জনের ধস্তাধস্তি হয়। রোহিণীকে কুপিয়ে ও গলা কেটে খুন করা হয়। তার পরে নিজেই পুরুষাঙ্গ ও হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যা করে শঙ্কর। তদন্তকারীদের আর একটি অংশ বলছেন, রোহিণীকে আগে খুন করা হয়। তার পরে ঘরে ঢুকে ইয়াশিকে খুন করে শঙ্কর। তাঁদের যুক্তি, ইয়াশিকে খুন করার পরে আত্মহত্যা করে শঙ্কর। তাই ইয়াশির দেহের কাছেই শঙ্করের দেহ মিলেছে।

তদন্তকারীদের সূত্রের খবর, রোহিণীর দেহে ৯টি ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। শঙ্করের দেহে মিলেছে ৬টি ক্ষতচিহ্ন। ইয়াশির দেহে ৪টি কোপানোর দাগ ও একটি পেটে ছুরি ঢোকানোর চিহ্ন মিলেছে। পেটে ছুরি ঢোকানোয় তার অন্ত্রের অংশ বেরিয়ে এসেছিল।

পুলিশ জানায়, হরিনাভি ও গরফার বাড়ি থেকে দু’টি ছুরি মিলেছে। গরফার বাড়ি থেকে দু’টি নতুন ব্লেডও মিলেছে। গলার নলি কাটার পরে দেহগুলিকে উপুুড় করে দেওয়া হয়। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ ও তদন্তকারীরা বলছেন, গলার নলি কেটে উপুড় করে দিলে দ্রুত রক্ত বেরিয়ে যায়। এ থেকেই পরিকল্পনামাফিক খুনের তত্ত্ব মিলছে বলে পুলিশের দাবি।

সরকারি সূত্রের খবর, এই ঘটনায় তেমন রহস্য না থাকলেও মহানগরে এমন নৃশংস ঘটনার পরে প্রশাসনের উঁচুতলায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে লালবাজারের কাছে ঘটনাটি সবিস্তার জানতে চাওয়া হয়। ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও এ দিন দফতরে যান গোয়েন্দাপ্রধান পল্লবকান্তি ঘোষ। গরফার ঘটনা নিয়ে লালবাজার থেকে একটি রিপোর্ট নবান্নে পাঠানো হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন