বাইক উল্টে মৃত্যু কলেজছাত্রের

মাত্র কিছু দিন আগেই মোটরবাইক চালানো শিখেছিলেন। নিজের বাইক নেই, তাই বেরিয়েছিলেন এক বন্ধুর মোটরবাইক নিয়ে। শনিবার সকালে সেই চলন্ত মোটরবাইক রাস্তায় পিছলে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা গেলেন বি কম প্রথম বর্ষের ছাত্র এক যুবক। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম সঞ্জিত রায় (২২)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৪ ০১:০০
Share:

সঞ্জিত রায়

মাত্র কিছু দিন আগেই মোটরবাইক চালানো শিখেছিলেন। নিজের বাইক নেই, তাই বেরিয়েছিলেন এক বন্ধুর মোটরবাইক নিয়ে। শনিবার সকালে সেই চলন্ত মোটরবাইক রাস্তায় পিছলে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা গেলেন বি কম প্রথম বর্ষের ছাত্র এক যুবক। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম সঞ্জিত রায় (২২)। এ দিন রবীন্দ্র সরোবরের কাছে বরজ রোড ও লেক গার্ডেন্স উড়ালপুলের সংযোগস্থলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে সঞ্জিতের বাড়ি গড়িয়াহাটের ডোভার টেরেসে। তাঁর বাবা ছাতু বিক্রি করেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সঞ্জিত সম্প্রতি পুলিশের চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।

Advertisement

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, মোটরবাইক চালানোর লাইসেন্স সঞ্জিতের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি এবং সম্ভবত তাঁর লাইসেন্স ছিল না। তা সত্ত্বেও তিনি মোটরবাইক চালাচ্ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। সঞ্জিতের মাথায় অবশ্য হেলমেট ছিল। কিন্তু মোটরবাইক চালানোয় তেমন পারদর্শী না হওয়া সত্ত্বেও বাইকের গতি দ্রুত থাকার ফলে ওই দুর্ঘটনা ঘটে বলে তদন্তকারীরা মনে করছেন।

ঠিক কী ভাবে ঘটল দুর্ঘটনা?

Advertisement

ছোটবেলা থেকেই রোয়িংয়ের নেশা সঞ্জিতের। রবীন্দ্র সরোবরের একটি রোয়িং ক্লাবের প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে তিনি বহু বার পুরস্কার পেয়েছিলেন। কিছু দিন ধরে ওই ক্লাবেরই প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। এই ভাবে পড়াশোনা করার ফাঁকে তাঁর কিছু রোজগারও হচ্ছিল। পুলিশ মনে করছে, ওই রোয়িং ক্লাবে কাজ করার সূত্রেই সঞ্জিত এ দিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ লেক গার্ডেন্স উড়ালপুলের দিক থেকে বরজ রোডের দিকে যাচ্ছিলেন।

পুলিশ জানিয়েছে, দ্রুত গতিতে চলতে চলতেই লেক গার্ডেন্স উড়ালপুল থেকে বরজ রোডে সঞ্জিত বাঁক নেওয়ার সময়ে ওই মোটরবাইক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হড়কে গিয়ে ফুটপাথের রেলিঙে সজোরে ধাক্কা মারে। বাইকের উপর থেকে ছিটকে পড়ে যান সঞ্জিত। রেলিঙে আছড়ে পড়ার ফলে ওই যুবকের বুকে ও মুখে আঘাত লাগে। তাঁর মুখ দিয়েও রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।

দুর্ঘটনাস্থলের অদূরেই পুলিশের কিয়স্ক। ওই ভাবে দুর্ঘটনা ঘটতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান কিয়স্কের পুলিশকর্মীরা। তাঁরাই গুরুতর জখম সঞ্জিতকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এক পুলিশ অফিসার বলেন, “একেই বাইক চালাতে তেমন দক্ষ ছিলেন না ওই যুবক। তার উপরে চালাচ্ছিলেন খুব জোরে। গতি বেশি থাকায় সেতুর উপরে বাঁক নেওয়ার সময়ে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।”

গড়িয়াহাটের ডোভার টেরেসে টালির চালের একচিলতে ঘর সঞ্জিতদের। ছাতু-বিক্রেতা দেবেন্দ্র রায়ের মেজ ছেলে সঞ্জিত। পড়াশোনায় বেশ ভাল ছিলেন। দক্ষিণ কলকাতার একটি নামী কলেজে বি কম প্রথম বর্ষে পড়তেন। দুঃসংবাদ পাওয়া ইস্তক বাড়ির লোকজনকে ঘরের ভিতরে ঘিরে রেখেছেন আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা গেল, সম্প্রতি পরিবারের বড় ছেলে রঞ্জিত একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি পাওয়ার পরে তাঁদের আর্থিক অবস্থা কিছুটা ভাল হয়েছিল। কিন্তু এ দিনের ওই বাইক দুর্ঘটনা এক লহমায় বিধ্বস্ত করে দিয়েছে পরিবারটিকে।

রোয়িং ক্লাবে সঞ্জিতের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়া আকাশ রজক বলেন, “আমরা শুনেছিলাম, সঞ্জিতদা পুলিশে চাকরি পেয়েছেন। ভোট মিটলেই প্রশিক্ষণে যোগ দেওয়ার কথা ছিল।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement