বিজয়গড়ে খুনের ঘটনার বারো ঘণ্টার মধ্যে এক যুবককে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের নাম মঙ্গল মণ্ডল। শুক্রবার তাঁকে আলিপুর আদালতে তোলা হলে দশ এপ্রিল পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত বৃহস্পতিবার বিজয়গড়ের একটি ফ্ল্যাটে উদ্ধার হয় বিজয়গড় কলেজের গ্রন্থাগারের কর্মী সমন্বয় ভট্টাচার্যের (৩২) দেহ। ওই রাতেই তদন্তে নামে পুলিশ। গোয়েন্দারা জানতে পারেন, মঙ্গল নামে তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু রয়েছে। তার বাড়ি ক্যানিংয়ে। পুলিশ জানতে পারে, মঙ্গলের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল সমন্বয়ের। মাঝেমধ্যেই তার বাড়িতে গিয়ে টাকাও দিয়ে আসতেন তিনি। তল্লাশি চালিয়ে ধরা হয় মঙ্গলকে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত মঙ্গল জেরার মুখে ভেঙে পড়ে দোষ স্বীকার করে। জেরায় মঙ্গল গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, ওই দিন সে সমন্বয়ের আলমারি থেকে পাঁচশো টাকা বার করতে গিয়েছিল। এটা সমন্বয় দেখে ফেললে তাঁর সঙ্গে বচসা হয়। এর পরেই রেগে গিয়ে মঙ্গল তাঁর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে দেয়। সমন্বয়ের মোবাইল, আলমারি এবং ফ্ল্যাটের চাবি ওই রাতে ঘটনাস্থলে পাননি তদন্তকারীরা। তাঁরা গিয়ে দেখতে পান ঘরের আলমারি খোলা ছিল। তদন্তকারীদের মঙ্গল জানিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে তার পরিবারে আর্থিক অনটন চলছিল। তাই সে চুরি করতে গিয়েছিল।
তদন্তকারীরা জানান, সমন্বয়ের ফ্ল্যাটের দরজা খোলাই ছিল। বৃহস্পতিবার বিকেলের পর থেকে মঙ্গলের দেখা মেলেনি এলাকায়। এখানেই খটকা লাগে গোয়েন্দাদের। তদন্তকারীদের জেরায় মঙ্গল জানায়, ঘটনার পরে সে ক্যানিংয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছিল। গভীর রাতে আবার সে বাবার সঙ্গে বিজয়গড় এলাকায় আসে। এর পরেই ওই এলাকার একটি ক্লাবের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, তৃণমূলকর্মী ছিলেন সমন্বয়। এলাকার সকলের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক ছিল তাঁর। মঙ্গলের বাবা বিজয়গড়ে রিকশা চালান। বাসিন্দাদের দাবি, মঙ্গল এবং তার বাবার সঙ্গে সমন্বয়ের ঘনিষ্ঠতা ছিল। দু’জনে সমন্বয়ের ভাড়ার ফ্ল্যাটে মাঝেমধ্যে রান্না করেও খেত বলে স্থানীয়েরা জানান। সমন্বয় মঙ্গলকে পড়শোনা করতেও সাহায্য করতেন বলে জানান তাঁরা। এক বাসিন্দা বলেন, “সমন্বয়ের তৎপরতাতেই বিজয়গড় কলেজে সম্ভবত ভর্তিও হয়েছিল মঙ্গল।” শুক্রবার লালবাজারে যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টা থেকে দু’টোর মধ্যে ঘটনাটি ঘটে বলে অনুমান। সমন্বয়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন না মিললেও শ্বাসরোধের প্রমাণ মিলেছে ময়না-তদন্তে।”