বিডিও বলে কি নালিশ নেবে না থানা, প্রশ্ন হাইকোর্টের

জমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা, মারধর, শ্লীলতাহানি, প্রতিবন্ধী মহিলাকে নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ-হেন গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও রাজারহাটের বিডিও-র বিরুদ্ধে কেন এফআইআর দায়ের করা হবে না, সেই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৪ ০২:২৯
Share:

জমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা, মারধর, শ্লীলতাহানি, প্রতিবন্ধী মহিলাকে নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এ-হেন গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও রাজারহাটের বিডিও-র বিরুদ্ধে কেন এফআইআর দায়ের করা হবে না, সেই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট।

Advertisement

বুধবারেই উচ্চ আদালত জানতে চেয়েছিল, ওই বিডিও-র বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি কেন? সরকারি আইনজীবী আদালতে জানান, বিডিও রাজারহাট থানার আইসি-র (ইনস্পেক্টর ইনচার্জ) চেয়ে পদমর্যাদায় উঁচুতে আছেন বলে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়নি।

রাজারহাটের আড়বেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা গোবিন্দ ঢালি পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ এনে ১৮ জুলাই মামলা দায়ের করেন হাইকোর্টে। বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানি ছিল। সেই শুনানি চলাকালীন ওই প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত।

Advertisement

বিচারপতি সরকারি আইনজীবী স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করেন, “আইসি-র চেয়ে উচ্চ পদমর্যাদার অফিসার বলেই কি বিডিও-র বিরুদ্ধে এফআইআর করা যাবে না? আইসি তাঁর এলাকায় কোনও ঘটনা ঘটলে তদন্ত করবেন না?” তার পরেই বিচারপতি নির্দেশ দেন, অবিলম্বে ওই বিডিও-র বিরুদ্ধে রাজারহাট থানার আইসি-কে এফআইআর দায়ের করতে হবে এবং অভিযোগের তদন্তের অগ্রগতি জানাতে হবে আদালতকে।

আবেদনকারীর আইনজীবী নারায়ণচন্দ্র মণ্ডল আদালতে জানান, আড়বেড়িয়া মৌজায় গোবিন্দবাবু কয়েক শতক জমির বর্গাদার। কিছু শতক জমির পাট্টাও পেয়েছেন তিনি। গত ১৮ জানুয়ারি সকাল ৯টা নাগাদ রাজারহাটের বিডিও অমলেন্দু সমাদ্দার এলাকার বেশ কয়েক জন প্রোমোটারকে সঙ্গে নিয়ে গোবিন্দবাবুর বাড়িতে চড়াও হন। গোবিন্দবাবুর অভিযোগ, বিডিও-র নেতৃত্বে ওই প্রোমোটারেরা তাঁকে জমি থেকে উচ্ছেদ করে বহুতল তৈরি করতে চান। তাঁকে বেশ কয়েক শতক জমি ছেড়ে দিতে বলা হয়। তিনি তাতে রাজি না-হওয়ায় তাঁকে, তাঁর স্ত্রী সন্ধ্যাদেবীকে এবং তাঁদের প্রতিবন্ধী মেয়ে অণিমাকে বেধড়ক পেটানো হয়। প্রতিবাদ করায় গোবিন্দবাবুর খড়ের গাদায় আগুনও ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা।

আক্রান্তের আইনজীবী আদালতে জানান, গোবিন্দবাবু ও তাঁর স্ত্রী ওই দিনই থানায় বিডিও অমলেন্দু সমাদ্দার, তিন প্রোমোটার সুজিত মণ্ডল, ভরত মণ্ডল, সুনীল মণ্ডল-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে রাজারহাট থানায় অভিযোগ জানাতে যান। গোবিন্দবাবুর অভিযোগ, তৎকালীন আইসি অমিতাভ চন্দ এফআইআর করা তো দূরের কথা, তাঁর অভিযোগ শুনতেই চাননি।

আইনজীবী নারায়ণবাবু আদালতে জানান, আইসি অভিযোগ না-নেওয়ায় উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক, অতিরিক্ত জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং রাজারহাট থানার আইসি-র কাছে রেজিস্ট্রি ডাকে লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয় জানুয়ারিতেই। তা সত্ত্বেও পুলিশ ওই বিডিও এবং তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। সরকারি আইনজীবী এ দিন বিচারপতির কাছে একটি পুলিশ রিপোর্ট পেশ করেন। বিচারপতি সেই রিপোর্ট পড়ে সরকারি আইনজীবীকে জানান, রাজারহাটের আইসি রিপোর্টে লিখছেন, বিডিও তাঁর চেয়ে উচ্চ পদমর্যাদার বলে এফআইআর দায়ের করা হয়নি।

বিচারপতির নির্দেশ, রাজারহাট থানার বর্তমান আইসি-কে অবিলম্বে এফআইআর দায়ের করতে হবে এবং অভিযোগের তদন্ত কতটা কী এগোল, তা জানাতে হবে আদালতকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন