প্রশ্নে ভবিষ্যৎ

‘বিনোদিনী’র স্বজন-কাঁটা

নাট্যস্বজন-এর ভাঙনে এ বার ‘অনিশ্চয়তা’র মুখে কলকাতা পুরসভার নাট্য-পোষকতার প্রয়াসও। নগরবাসীর করের টাকায় শহরে নাট্যচর্চার কেন্দ্র করতে মাস পাঁচেক আগে উদ্যোগী হয় কলকাতা পুরসভা। সেই মতো পাইকপাড়ার মোহিত মৈত্র মঞ্চে নাট্যচর্চার কর্মশালা (রেপার্টরি) গড়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং তার জন্য পুরসভা থেকে বছরে সাড়ে ১৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দও করে।

Advertisement

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:২২
Share:

নাট্যস্বজন-এর ভাঙনে এ বার ‘অনিশ্চয়তা’র মুখে কলকাতা পুরসভার নাট্য-পোষকতার প্রয়াসও। নগরবাসীর করের টাকায় শহরে নাট্যচর্চার কেন্দ্র করতে মাস পাঁচেক আগে উদ্যোগী হয় কলকাতা পুরসভা। সেই মতো পাইকপাড়ার মোহিত মৈত্র মঞ্চে নাট্যচর্চার কর্মশালা (রেপার্টরি) গড়ার সিদ্ধান্ত হয় এবং তার জন্য পুরসভা থেকে বছরে সাড়ে ১৬ লক্ষ টাকা বরাদ্দও করে। যার বরাত পায় নাট্যস্বজন গোষ্ঠী। যে সংস্থার দুই স্তম্ভ ছিলেন রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং সাংসদ অর্পিতা ঘোষ। ওই দুই নাট্য ব্যক্তিত্ব সম্প্রতি সংস্থার পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। আর তাতেই কী হবে পুরসভার নাট্যচর্চার ভবিষ্যৎ, তা নিয়ে ফাঁপড়ে পুরকর্তারা। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি কিছু জানি না।” যদিও সংশ্লিষ্ট দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, “নাট্যস্বজন অপারগ হলে নতুন করে টেন্ডার ডাকা হবে। কোনও একটা সংস্থার জন্য তো আর পুরসভার প্রয়াস আটকে থাকবে না।” তিনি জানান, সংস্থা এখনও অবশ্য পুরসভাকে কিছু জানায়নি।

Advertisement

পাইকপাড়ার মঞ্চটিকে কেন্দ্র করে রেপার্টরি গড়ার কথা বছর খানেক আগেই ঘোষণা করেছিল পুরসভা। গত অগস্টে মোহিত মৈত্র মঞ্চকে নাট্যচর্চা কেন্দ্র হিসেবে নাট্যস্বজনের হাতে দেওয়ার চুক্তি হয় পুরভবনে। নামকরণ করা হয় বিনোদিনী রেপার্টরি। দায়িত্ব পেয়েই সংস্থার কর্ণধার তথা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছিলেন রেপার্টরিতে শাঁওলী মিত্রের পরিচালনায় ‘চাঁদ বণিকের পালা’ অভিনীত হবে।

পুরসভা সূত্রে তখন জানানো হয়েছিল, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় নাট্যচর্চার প্রসার ঘটাতে পুরসভাকেও উদ্যোগী হতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তারই প্রেক্ষিতে মেয়র শোভনবাবুরা মোহিত মঞ্চে রেপার্টরি গড়ার কাজ শুরু করেন। কিন্তু পাঁচ মাসের মধ্যেই দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার ভাঙনে রীতিমতো সমস্যায় পুর-প্রশাসনও। প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ইতিমধ্যে নাট্যচর্চার কাজ শুরুও হয়েছিল। নাটকের কলাকুশলীর জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল। তার ভিত্তিতে যে সব প্রার্থীরা হাজির হয়েছিলেন, তাঁদের ইন্টারভিউ করার কাজও সম্পন্ন। এমনকী, ‘চাঁদ বণিকের পালা’ নাটকের মহড়াও প্রায় শুরুর মুখে।

Advertisement

এখনও পর্যন্ত কত টাকা খরচ হয়েছে?

মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার বলেন, “ওঁদেরকে তিন মাস অন্তর টাকা দেওয়ার কথা। এখনও কোনও টাকা দেওয়া হয়নি।” যদিও ইতিমধ্যেই ওই সংস্থার অনেক টাকা খরচ হয়েছে বলে জানান পুরসভার এক কর্তা। তিনি জানান, খুব শীঘ্রই ওই টাকা দেওয়ার কথা ছিল।

চুক্তির দিনেই তবে নাট্যস্বজনের হাতে ওই রেপার্টরির বরাত দেওয়া নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে নাট্য মহলে। যা নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্যের নাট্য মহল। অভিযোগ ওঠে, যে সংস্থার হাতে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তার নেতৃত্ব অরাজনৈতিক নন। সরকার মদতপুষ্ট সংস্থাকেই বেছে রেপার্টরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পুরসভার প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেছিলেন, “এ ধরনের খরচ অপ্রয়োজনীয়, অপ্রাসঙ্গিক এবং পুর-স্বার্থবিরোধী।” বিশেষ কাউকে টাকা পাইয়ে দেওয়ার অভিসন্ধি বলেও মন্তব্য করেছিলেন বিকাশবাবু। যদিও ও সব অভিযোগে কান দেননি মেয়র। তিনি বলেছিলেন, “ব্রাত্য-অর্পিতারা বহু দিন ধরেই এটা চাইছিলেন। ওঁরা আছেন, কাজ ভালই হবে।”

এ বার ‘স্বজন’ বিচ্ছেদে রেপার্টরির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পুর-প্রশাসনও। যে সব কলাকুশলীদের নেওয়া হয়েছে তাঁদের কী বলা হবে, কী পদ্ধতিতে নতুন টেন্ডার ডাকা হবে, এ সব নিয়ে এখন সমস্যায় পুরকর্তারা।

এ দিকে বিনোদিনী রেপার্টরি ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রীর বক্তব্য, “এ প্রসঙ্গে আমার কিছু বলার নেই। এখন যাঁরা স্বজনে আছেন, তাঁরাই এটা বলবেন।”

নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষ বলেন, নাট্যস্বজন-এ বর্তমানে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলেই এর ভবিষ্যৎ কী হবে, পুরসভাকে তা জানানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন