বহুতল নির্মাণ মানেই কুয়ো খোঁড়া, সেটাই দস্তুর দমদমে

একটি ৫ কাঠা নির্মীয়মাণ বহুতলের জমির মধ্যে প্রায় ৪০টি কুয়ো খোঁড়া হয়েছে। তার মধ্যে ওই জমির দক্ষিণ দিকের একটি ধারে ১২টি কুয়ো তৈরি করা হয়েছে। সেগুলি পাইলিং করার জন্যই খোঁড়া। এর গভীরতা ৩০-৩৫ ফুট। এর মধ্যে বেশির ভাগ কুয়োরই পাইলিং-এর কাজ শেষ। শুরু হয়েছে বিম বসানোর কাজ।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৪ ০১:৪৩
Share:

মধুগড়ের ঘটনায় মৃত শ্রমিক অমর পাল। —নিজস্ব চিত্র।

একটি ৫ কাঠা নির্মীয়মাণ বহুতলের জমির মধ্যে প্রায় ৪০টি কুয়ো খোঁড়া হয়েছে। তার মধ্যে ওই জমির দক্ষিণ দিকের একটি ধারে ১২টি কুয়ো তৈরি করা হয়েছে। সেগুলি পাইলিং করার জন্যই খোঁড়া। এর গভীরতা ৩০-৩৫ ফুট। এর মধ্যে বেশির ভাগ কুয়োরই পাইলিং-এর কাজ শেষ। শুরু হয়েছে বিম বসানোর কাজ।

Advertisement

যে পদ্ধতিতে এই বহুতলের পাইলিং-এর কাজ হচ্ছে, তার নাম হল ‘কুয়ো পাইলিং’। যেখানে এখন পাইলিং-এর জন্য লোহার খাঁচা তৈরি করে আরসিসি পাইলিং করাই দস্তুর, সেখানে অভিযোগ, দক্ষিণ দমদম পুর-এলাকায় বেশির ভাগ নির্মীয়মাণ বাড়িতেই চলছে অবৈজ্ঞানিক ও নিয়ম বহির্ভূত ভাবে কুয়ো পাইলিং-এর কাজ। নির্মীয়মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারেরা জানাচ্ছেন, কুয়ো পাইলিং-এর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এক ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, “পুরসভা বাড়ি তৈরির ভিত করার জন্য যে নকশা অনুমোদন করে, তাতে কুয়ো পাইলিং করা সম্ভব নয়। এই পদ্ধতিতে বাড়ি তৈরি হলে সে বাড়ির ভিত নড়বড়ে হয় এবং কিছুদিনের মধ্যেই বাড়িটি বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছয়। একমাত্র জল তোলা ছাড়া অন্য কোনও কাজে লাগে না কুয়ো।”

ইঞ্জিনিয়ারেরা জানাচ্ছেন, এখন যে সব বহুতল তৈরি হয় সেখানে লোহার খাঁচা তৈরি করে তা গর্তে ঢুকিয়ে সিমেন্ট ও বালি ফেলে পাইলিং করাই নিয়ম। একে বলে আরসিসি পাইলিং। যে কারণে বহুতলের ভিত মজবুত হয়। কুয়ো পাইলিং-এর খরচ কম কিন্তু বিপদ বেশি।

Advertisement

দক্ষিণ দমদম পুর-এলাকায় কী ভাবে বহুতল নির্মাণ হচ্ছে, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল রবিবার দমদমের মধুগড়ে কুয়োয় পড়ে শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা। মধুগড়ে যে নির্মীয়মাণ বহুতলে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে, তার সামনে একটি বোর্ডে লেখা রয়েছে, ‘এক-দুই ও তিন কামরার বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের বুকিং চলছে’। এই বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিন্তু সেই বিতর্কিত কুয়ো পাইলিং-পদ্ধতিতেই তৈরি হচ্ছিল। শুধু ওই নির্মীয়মাণ বহুতলই নয়, এলাকা ঘুরে দেখা গেল অন্যান্য নির্মীয়মাণ বহুতলেও একই ঘটনা ঘটছে। প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে পুর-প্রশাসনের চোখের সামনে চলছে এই বেআইনি কুয়ো পাইলিং করে ভিত তৈরির কাজ?

এলাকার প্রোমোটারদের একাংশের দাবি, কুয়ো পাইলিংও যথেষ্ট মজবুত। মাটি পরীক্ষা করে তবেই কুয়ো পাইলিং-এর কাজ করা হয়। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, কুয়ো পাইলিংও অনেক ক্ষেত্রে ঠিকমতো পদ্ধতি মেনে করা হয় না। যেমন মধুগড়ের ঘটনা। এ ক্ষেত্রে এই কুয়ো পাইলিং-এর সময়ে চারদিকে বেড় না পরিয়েই অনেক গভীর পর্যন্ত খোঁড়া হচ্ছিল। এবং সেখান থেকেই ধ্বস নেমে শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

পুরসভার বিরোধী পক্ষের অবশ্য অভিযোগ, কুয়ো পাইলিং করার সময়ে শ্রমিকদের সুরক্ষা ব্যবস্থা মজবুত ছিল না, ঘটনা থেকেই তা বোঝা যাচ্ছে। তবে পুর-প্রশাসনের একাংশের মদত ছাড়া এ ভাবে নিয়ম বহির্ভূত কাজ করা মুশকিল। দায় পুর-প্রশাসনের উপরেও বর্তায়।

অভিযোগ অস্বীকার করে দক্ষিণ দমদম পুরসভা অবশ্য জানাচ্ছে, তারা কোনও ভাবেই কুয়ো পাইলিং-এর প্ল্যান অনুমোদন করে না। পুরসভার চেয়ারপার্সন অঞ্জনা রক্ষিত বলেন, “আমরা সব সময়ে আরসিসি পাইলিং-এর প্ল্যান অনুমোদন করি। কিন্তু তার পরে সেই প্ল্যান বদলে ফেলে কেউ যদি কুয়ো পাইলিং করে, সে দিকে নজর রাখা কার্যত সম্ভব নয়। পুর-এলাকায় অসংখ্য বহুতল হচ্ছে। সেখানে প্রতিটি জায়গায় সমীক্ষা চালানোর মতো ইঞ্জিনিয়ার নেই।” যদিও তাঁর অভিযোগ, দায় পুরসভার ঘাড়ে চাপালেই হবে না। পাইলিং-এর কাজ কী ভাবে হচ্ছে, তা দেখার কথা ঠিকাদারের নিয়োগ করা ষ্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের। কাজ শেষে ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে তিনি ঘোষণা করেন, কোনও কিছু হলে দায় তাঁর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন