(বাঁ দিকে) কালীগঞ্জে বোমার আঘাতে নিহত কিশোরী তমন্না খাতুন। তাঁর মা সাবিনা বিবি (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
নদিয়ার কালীগঞ্জে নিহত চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তমন্না খাতুনের মা সাবিনা বিবি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। মঙ্গলবার রাতে অত্যধিক মাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলেন তিনি। পরিবারের দাবি, তাদের লাগাতার হুমকি দিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। পরিবারের সকলেই আতঙ্কিত। সন্তান হারানোর যন্ত্রণার সঙ্গে সেই হুমকি এবং আতঙ্ক নিতে পারেননি সাবিনা। তাই চূড়ান্ত পদক্ষেপ করেছেন। আপাতত তাঁর শারীরিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল।
মঙ্গলবার রাতে বাড়িতে অচৈতন্য অবস্থায় সাবিনাকে উদ্ধার করা হয়। গভীর রাতে নিয়ে যাওয়া হয় পলাশির প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। পরে সেখান থেকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়। পরিবার সূত্রে দাবি, একসঙ্গে অনেকগুলি ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলেছিলেন তমন্নার মা। নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন। এখনও তমন্নার খুনের অনেক অভিযুক্ত অধরা বলে দাবি করেছেন সাবিনার পরিবারের সদস্যেরা। অভিযোগ, ওই দুষ্কৃতীরাই হুমকি দেয়। তাই প্রতিনিয়ত তাঁদের প্রাণের আশঙ্কায় দিন কাটাতে হচ্ছে।
তমন্নার বাবা হুসেন শেখ জানিয়েছেন, এখনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি সাবিনা। একা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন বিচারের আশায়। হুসেনের কথায়, ‘‘চোখের সামনে মেয়ের মৃত্যুর দৃশ্য ও ভুলতে পারেনি এখনও। বোমার আঘাতে মেয়ের ছিন্নভিন্ন দেহের ছবি এখনও ওর চোখে ভাসে। এই মানসিক অবস্থাতেও আমরা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। বেশ কিছু আসামি এখনও অধরা। আমাদের পরিবারকে তারা নিয়মিত হুমকি দিচ্ছে। তমন্নার মা তাই এখন আমার জীবন নিয়ে আতঙ্কিত। তাই রাতে অনেক ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলেছিল। এখন চিকিৎসা চলছে।’’
অভিযোগ, তমন্নার বাবাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সন্তানের পর স্বামীকেও হারাতে হতে পারে, এই আতঙ্ক গ্রাস করেছিল সাবিনাকে। মানসিক চাপ তিনি আর সহ্য করতে পারছিলেন না। তাই ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল সূত্রে খবর, ঘুমের ওষুধের পাশাপাশি অবসাদের ওষুধ খেতেন সাবিনা। মঙ্গলবার রাতে সেই ওষুধও অনেক খেয়ে ফেলেছিলেন। ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে আপাতত তিনি বিপণ্মুক্ত এবং স্থিতিশীল।
গত ১৯ জুন কালীগঞ্জে বিধানসভার উপনির্বাচন ছিল। ২৩ জুন ছিল ভোটের ফলঘোষণা। গণনা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই কালীগঞ্জে তৃণমূলের প্রার্থীর জয় একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। সে দিন সময়ের আগেই বেরিয়েছিল শাসকদলের বিজয়মিছিল। অভিযোগ, সেখান থেকে স্থানীয় সিপিএম সমর্থকদের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া হয়। তার আঘাতে মৃত্যু হয় ১০ বছরের তমন্নার। তাদের পরিবার এলাকার পরিচিত সিপিএম সমর্থক।
এখনও পর্যন্ত মূল অভিযুক্ত-সহ তমন্নার খুনে অভিযুক্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও অনেকে এখনও জেলের বাইরে। অভিযোগ, তাঁরাই তমন্নার পরিবারকে লাগাতার হুমকি দিচ্ছেন। যে কারণে সাবিনা অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।