প্রযুক্তি মান্ধাতার আমলের, মূলত এই কারণেই আকর্ষণ হারিয়েছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের আলো ও ধ্বনি অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান চালু হওয়ার পরে পেরিয়ে গিয়েছে দুই যুগের বেশি সময়। এ বার এটির খোলনলচে বদলাতে উদ্যোগী হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এর জন্য তিন কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক।
বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের সহযোগিতায় ১৯৯২ সালে ভিক্টোরিয়ায় চালু হয় এই অনুষ্ঠান। বাংলা ও ইংরেজিতে। প্রথমটি ৪১ মিনিট, দ্বিতীয়টি ৪২ মিনিটের অনুষ্ঠান। পুরনো পদ্ধতির সমস্যার কথা মেনে ভিক্টোরিয়ার সচিব জয়ন্ত সেনগুপ্ত বলেন, “আলো ও ধ্বনি অনুষ্ঠানের পুরনো যন্ত্রাংশ পাওয়া যায় না। প্রস্তাবিত পরিবর্তনে ছবি, কথা ও আলোর মান ভাল হবে। খরচও কমবে। প্রদর্শনী চালাতে লোকও কম লাগবে।”
দিল্লির লালকেল্লায় আইটিডিসি-র উদ্যোগে আলো ও ধ্বনি অনুষ্ঠান শুরু হয় ১৯৬৫-তে। মেওয়ার রাজবংশের কাহিনি ফুটিয়ে তুলতে কয়েক দশক আগে উদয়পুরের ‘সিটি প্যালেসে’ও চালু হয়েছে এই অনুষ্ঠান। অনেক আগেই ওই দুই জায়গায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু হয়েছে। সংস্কৃতি মন্ত্রক সূত্রের খবর, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালেও অ্যানালগের পরিবর্তে ব্যবহার হবে ডিজিটাল। এখন প্রদর্শনীর আলো হ্যালোজেন-ভিত্তিক। হবে এলইডি। বদলাবে সময়সূচিও।
কলকাতার ৩০০ বছর পূর্তিকে মাথায় রেখে তৈরি হয়েছিল ‘গর্ব এবং গৌরব কলকাতার কাহিনি’ শিরোনামে এই অনুষ্ঠান। কিন্তু ২০০৩-এর ৩১ জানুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অশোককুমার মাথুর ও বিচারপতি জয়ন্তকুমার বিশ্বাসের ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেয়, ১৬৯০-এর ২৪ অগস্ট জোব চার্নকের আসার দিনটিকে এ শহরের জন্মদিন হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে না। তা হলে কি বদলে যাবে নয়া অনুষ্ঠানের বিষয়? ভিক্টোরিয়া-কর্তৃপক্ষের জবাব, “এ ব্যাপারে শীঘ্রই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তৈরি হবে কমিটি। বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন।”
ভিক্টোরিয়ায় এই অনুষ্ঠানের আসন প্রায় ৩০০। প্রথম দু’টি সারি ২০ টাকার। ১০ টাকার আসন প্রায় ২৫০। বিদেশিদের মাথাপিছু প্রবেশমূল্য ১০০ টাকা। বর্ষায় অনুষ্ঠান বন্ধ থাকে ৩-৪ মাস। গ্রীষ্মেও বেশির ভাগ আসন ফাঁকা থাকে। টিকিট বিক্রি করে আয় হচ্ছে কতটা? জয়ন্তবাবু বলেন, “বিক্রির হিসেবে এর জনপ্রিয়তা মাপা যাবে না। কারণ, ১২ বছর বা তার কম বয়সের ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে নিখরচায় এই অনুষ্ঠান দেখতে আসে। অনুষ্ঠান দেখতে উর্দি পরা সেনা এবং আরও কিছু ব্যক্তির টিকিট লাগে না।”