মিছিলের দুর্ভোগ নিয়েই সপ্তাহ শেষ

রেহাই মিলল না শনিবারেও। বড়দিনের আগের সপ্তাহান্তে শীতের শহরে উত্‌সবের মেজাজটাও ভোঁতা হয়ে গেল রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলের ধাক্কায়। দুপুর দেড়টা নাগাদ জরুরি কাজে দক্ষিণ কলকাতা থেকে বাচ্চাদের নিয়ে নিউ মার্কেট যাওয়ার পথে ভবানীপুরে কবরখানার কাছে বাঁক নিতে গিয়েই থমকে গেল বিদিশা ভট্টাচার্যের গাড়ি। ডিএল খান রোডে ট্রাফিকের দেওয়াল ডিঙিয়ে সরাসরি রেসকোর্সের রাস্তা ধরা অসম্ভব বুঝে গাড়ি নিয়ে চিড়িয়াখানার দিকের রাস্তা ধরলেন ভবানীপুরের তরুণী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:০৭
Share:

থমকে পার্ক স্ট্রিট। নিজস্ব চিত্র

রেহাই মিলল না শনিবারেও।

Advertisement

বড়দিনের আগের সপ্তাহান্তে শীতের শহরে উত্‌সবের মেজাজটাও ভোঁতা হয়ে গেল রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলের ধাক্কায়। দুপুর দেড়টা নাগাদ জরুরি কাজে দক্ষিণ কলকাতা থেকে বাচ্চাদের নিয়ে নিউ মার্কেট যাওয়ার পথে ভবানীপুরে কবরখানার কাছে বাঁক নিতে গিয়েই থমকে গেল বিদিশা ভট্টাচার্যের গাড়ি। ডিএল খান রোডে ট্রাফিকের দেওয়াল ডিঙিয়ে সরাসরি রেসকোর্সের রাস্তা ধরা অসম্ভব বুঝে গাড়ি নিয়ে চিড়িয়াখানার দিকের রাস্তা ধরলেন ভবানীপুরের তরুণী। সেখানে ঠোক্কর খেতে খেতে এগোলেও রেড রোড ধরাই গেল না। বিদ্যাসাগর সেতুর নীচ দিয়ে গঙ্গার ধার ধরে ঢিমে লয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে লাগল ঝাড়া ৪০ মিনিট। দুপুরের হাল্কা যানজটে সাধারণত এই রাস্তা মিনিট পনেরোয় পার হতে অভ্যস্ত নিত্যযাত্রীরা।

বিদিশার কথায়, “ময়দানের কাছে দেখলাম, লোকের ভিড়ে ধুলোয় আকাশটাই আবছা। গাদাগাদা লরি-ম্যাটাডর-বাসও সমাবেশমুখী।” মানুষের ভোগান্তি শুরু হয় দুপুর বারোটার আগে থেকেই। বাগনান থেকে অসুস্থ বাবাকে অ্যাম্বুল্যান্সে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে থমকে গিয়ে সমস্যায় পড়েন কৌস্তুভ মিত্রও। লেনিন সরণিতে প্রায় আধ ঘণ্টা আটকে। হুটার বাজানোই সার। শেষে ভিড় ঠেলে এগোতে পারলেও যানজটে আটকে পড়ার দরুণ ক্ষোভ উগরে দিয়ে গেলেন কৌস্তুভবাবু।

Advertisement

শনিবাসরীয় এই ভোগান্তির নেপথ্যে শহিদ মিনারে একটি ধর্মীয় সংগঠনের সমাবেশ। যানজটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিস্থিতি ঘোরালো করে তোলে মিছিলমুখী গাড়ি যত্রতত্র রাখার হিড়িক। পুলিশের অবশ্য দাবি, নিয়ম মেনেই যাবতীয় পার্কিং করানো হয়েছে। দুপুর একটার পরে দক্ষিণ কলকাতায় কংগ্রেসের মিছিলের জেরেও অনেককে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। হাজরা মোড় থেকে এক্সাইডের মোড় অবধি মিছিল। দুপুর দেড়টায় ভবানীপুর যদুবাবুর বাজার থেকে চাঁদনি চক পাড়ায় আসতে গিয়ে গলদঘর্ম বেসরকারি সংস্থার কর্মী সোমদেব বিশ্বাস। এক্সাইডের মোড় অবধি গাড়ির ভিড় এক চুলও নড়ছে না প্রায় আধ ঘণ্টা। কোনওমতে এলগিন রোডের দিকের গলিঘুঁজি ধরে জ্যাম-বৈতরণী পেরিয়ে জরুরি মিটিং শেষের আধ ঘণ্টা পরে ডিসেম্বরের দুপুরে ঘাম মুছতে মুছতে অফিসে ঢুকলেন সোমদেববাবু।

লালবাজারের কর্তারা অবশ্য এই ‘ভোগান্তি’টুকুতে বাড়তি গুরুত্ব দিতে রাজি নন। তাঁদের মতে, বড় মিছিল শহরে ঢোকার সময়টুকু বাদ দিলে ট্রাফিক মোটামুটি সচল ছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, শহিদ মিনারের ওই সমাবেশের জন্য শিয়ালদহ থেকে আসা মিছিলের সৌজন্যে বেলা ১১টা থেকেই যান চলাচলের গতি ঢিমে হতে শুরু করে। শিয়ালদহ উড়ালপুলেও একনাগাড়ে যানজট। মোটরবাইক নিয়ে ক্রিক রো-য়ে ঢুকে সংক্ষিপ্ত পথে ধর্মতলা যাওয়ার চেষ্টা করেও ডিফেন্স ভাঙতে পারলেন না ফুলবাগানের বাসিন্দা এক যুবক। গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ পৌঁছতেই তাঁর ৪০ মিনিট সময় লেগে গেল।

হাওড়া থেকে কলকাতামুখী মিছিলের জেরেও একই ভাবে ভুগতে হয়েছে। মহাত্মা গাঁধী রোড, ব্রেবোর্ন রোড, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, রবীন্দ্র সরণি, গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ, গভর্নমেন্ট প্লেস ইস্ট, এসপ্ল্যানেড রো (ইস্ট) রোডে। বি বা দী বাগ এলাকাতেও যানজট শুরু হয়। দীর্ঘক্ষণ ধরে বাস ও গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে।

মিছিলের জেরে যানজটে পিছিয়ে নেই হাওড়াও। সেখানে আবার মুখ্য ভূমিকায় খোদ শাসক দল। কেন্দ্রীয় সরকার ও বামেদের ‘যৌথ চক্রান্তের’ বিরুদ্ধে বিধায়ক সুলতান সিংহ ও মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিকেল তিনটে নাগাদ হাওড়ার বালিতে রাস্তায় নামেন তৃণমূল সমর্থক ও কর্মীরা। ফলে, কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে জিটি রোড। স্থানীয় এক পুলিশকর্তার কথায়, “সরু জিটি রোডে এক ধারে মিছিলকে এগোতে দিলে গাড়ি চলবে কী করে! ফলে, যা হওয়ার সেটাই হয়েছে।” তিনটি অ্যাম্বুল্যান্সকে রাস্তা ছাড়তে সক্রিয় হয়েছেন মিছিলে সামিল লোকজন। তবু রোগী ও তাঁর পরিজনেদের ভোগান্তি কমেনি। পুলিশ জানায়, মিছিল বালিখাল থেকে লিলুয়া পর্যন্ত যায়। এর ফলে জিটি রোডে প্রায় দেড় ঘণ্টার যানজটে বালি ব্রিজ, বালি খাল, বালি হল্ট-সহ সালকিয়ার দিকে গাড়ির লম্বা লাইন লেগে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন