মাটি খুঁড়ে উদ্ধার নিহতের হাড়গোড়

প্রায় দু’বছর আগে এক অটোচালককে টুকরো টুকরো করে কেটে খুন করে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। সোমবার প্রায় সাত ফুট গভীর একটি গর্ত থেকে ওই ব্যক্তির খুলি, হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া খুলি-হাড়গোড় ফরেন্সিক ও ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৪ ০২:৪৬
Share:

পে-লোডার দিয়ে মাটি খুঁড়ে দেহাবশেষের সন্ধান। —নিজস্ব চিত্র।

প্রায় দু’বছর আগে এক অটোচালককে টুকরো টুকরো করে কেটে খুন করে মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। সোমবার প্রায় সাত ফুট গভীর একটি গর্ত থেকে ওই ব্যক্তির খুলি, হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া খুলি-হাড়গোড় ফরেন্সিক ও ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সোনারপুর থানার রানিয়া এলাকার বাসিন্দা মদন রায় নামে এক অটোচালক দু’বছর আগে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। গত শনিবার রানিয়া এলাকার মাটি খুঁড়ে এক যুবকের দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। তদন্তকারীরা জানান, এলাকায় জমির কারবারের দালালি নিয়ে গোলমালে সূর্যদেব পণ্ডা নামে ওই যুবককে গুলি করে খুন করে মাটিকে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল। ওই ঘটনায় দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়। ওই খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত জ্ঞানসাগর শর্মা এখন ফেরার। পুলিশ জানায়, জ্ঞানসাগর জমির দালালি ও চোরাই অস্ত্রের কারবারি। মাস পাঁচেক আগে জ্ঞানসাগরের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একটি অস্ত্র কারখানার হদিস পেয়েছিল পুলিশ। ওই সময়ে জ্ঞানসাগর-সহ মোট চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, জামিন পেয়ে ফের এলাকায় ফিরে আসে জ্ঞানসাগর। শনিবার সূর্যদেবের মৃতদেহ উদ্ধারের পরে সে পালিয়ে যায়। তার পরেই এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা গোপনে পুলিশকে জানান, জ্ঞানসাগর দু’বছর আগে মদন রায়কে খুন করে মাটিতে পুঁতে দিয়েছে। রবিবার রাতে বাবলু যাদব নামে জ্ঞানসাগরের এক সঙ্গীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জ্ঞানসাগরের অস্ত্র কারখানার কারিগর ছিল বাবলু। তাকে জেরা করে জানা যায়, জ্ঞানসাগরের বাড়ির পাশেই মদনের মৃতদেহ পুঁতে রাখা হয়েছে। পুলিশকে বাবলু জানায়, বছর দু’য়েক আগে প্রতিবেশী মদনকে মদ খাইয়ে বেঁহুশ করার পরে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। তার পরে তাঁর দেহটি টুকরো টুকরো করে কেটে পরে দু’টি বস্তায় ভরে মাটির নীচে পুঁতে দেওয়া হয়েছিল।

বাবলুর কথামতো এ দিন সকালে এক জন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মাটির কাটার বড় যন্ত্র এনে জ্ঞানসাগরের বাড়ির পাঁচিল ঘেষে গর্ত খোঁড়া শুরু হয়। সকাল সাড়ে ন’টা থেকে প্রায় ঘণ্টা দেড়েক ধরে ওই গর্ত খোঁড়ার পর হাড়গোড়ের হদিস মেলে। পুলিশ জানায়, মৃতদেহ পোঁতার পরে গর্তটি পাথরকুচি ও সিমেন্ট দিয়ে ঢাকা দেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

কেন খুন করা হয়েছিল মদনকে?

বাবলুকে জেরার ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, মদনের স্ত্রী সাবিত্রীর সঙ্গে জ্ঞানসাগরের সর্ম্পক ছিল। পুলিশের দাবি, বাবলু জানিয়েছে, পথের কাঁটা সরাতেই জ্ঞানসাগর, সাবিত্রী মিলে এই খুনের পরিকল্পনা করে। বাবলুও তাদের সঙ্গে ছিল বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। জ্ঞানসাগরের স্ত্রী দুর্গারতিও এ দিন বলেন, “সাবিত্রী ও জ্ঞানসাগর দু’জনে মিলেই মদনকে খুন করেছে।” এক তদন্তকারীর কথায়, বাবলু ও দুর্গারতির কথা সত্যি কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, এই খুনে জ্ঞানসাগর ও সাবিত্রী জড়িত। কারণ, স্বামী নিখোঁজের কথা জানিয়ে সাবিত্রী পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। জ্ঞানসাগরের সঙ্গে সাবিত্রীও ফেরার বলে পুলিশ জানিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী এ দিন বলেন, “আমরা জ্ঞানসাগরের খোঁজ করছি। কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন