যানবাহন অপ্রতুল, নাজেহাল নিত্যযাত্রী

দৃশ্য ১: দুপুর সাড়ে বারোটা। আক্রা ফটকের বাসিন্দা প্রকাশ মণ্ডল স্ত্রী এবং দুই মেয়েকে নিয়ে চল্লিশ মিনিটের উপর দাঁড়িয়ে তারাতলা মোড়ে। বেহালা বাজারে এসেছিলেন কেনাকাটা করতে। কিন্তু বাড়ি ফেরার জন্য তারাতলায় এসে বেশ ফাঁপরেই পড়লেন।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া ও বিদীপ্তা বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৪ ০১:৪১
Share:

প্রতি দিনের অপেক্ষা। —নিজস্ব চিত্র।

দৃশ্য ১: দুপুর সাড়ে বারোটা। আক্রা ফটকের বাসিন্দা প্রকাশ মণ্ডল স্ত্রী এবং দুই মেয়েকে নিয়ে চল্লিশ মিনিটের উপর দাঁড়িয়ে তারাতলা মোড়ে। বেহালা বাজারে এসেছিলেন কেনাকাটা করতে। কিন্তু বাড়ি ফেরার জন্য তারাতলায় এসে বেশ ফাঁপরেই পড়লেন। মার্চের এই সময়েই রোদ এত চড়া যে দুই মেয়ে-স্ত্রীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কষ্টদায়ক। অথচ কিছু করার নেই। বাড়ি যাওয়ার এই রুট ছাড়া অন্য যে রুট, তাতে করে যেতে গেলে টালিগঞ্জ স্টেশনে যেতে হবে ট্রেন ধরার জন্য। তাই অগত্যা তারাতলা মোড়েই দাঁড়িয়ে রইলেন অটো কিংবা বাসের জন্য।

Advertisement

দৃশ্য ২: তারাতলা মোড়ে দাঁড়িয়ে রাস্তার দোকানে খাবার খাচ্ছিলেন মহম্মদ ফিরোজ। বড়ুল যাবার জন্য কোন বাস ধরতে হবে, তা জানতে চাইলে জানালেন, বজবজ পর্যন্ত গিয়ে আবার অন্য বাস কিংবা অটো ধরে যেতে হবে। তিনিও বাসের জন্য প্রায় ২৫ মিনিট অপেক্ষা করছেন। কিন্তু তাড়াতাড়ি যেতে গেলে অন্য কোনও ব্যবস্থা নেই? ফিরোজ জানালেন, অটো ধরে মোল্লার গেট, সেখান থেকে বজবজ, চড়িয়াল হয়ে আবার অটো ধরে তবেই বুড়ুল পৌঁছতে হবে।

প্রকাশ মণ্ডল কিংবা মহম্মদ ফিরোজ দু’জনেই জানালেন, এটি কিন্তু এক দিনের কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা বা সমস্যা নয়। রোজই এ ভাবে তাঁদের যাতায়াত করতে হয়। শুধু বড়ুল, আক্রা ফটক নয়। দক্ষিণ শহরতলির বিশলাক্ষীতলা, অছিপুর, বিড়লাপুর, চড়িয়াল, মোল্লার গেট সব ক্ষেত্রেই পরিবহণ ব্যবস্থার এই সমস্যায় জেরবার সাধারণ নিত্যযাত্রীরা। অভিযোগ, এই সব রুটগুলিতে শুধু বেসরকারি বাসের সংখ্যাই কম নয়, সরকারি বাসেরও সংখ্যা রীতিমতো কম। ফলে প্রতি দিনই যাতায়াতের জন্য হাতে বেশ কয়েক ঘণ্টা বেশি সময় নিয়ে বেরোতে হয় নিত্যযাত্রীদের।

Advertisement

কিন্তু প্রতি দিন যেখানে এত লোক শহরতলির এই সব জায়গা থেকে কলকাতায় আসেন, সেখানে বাসের সংখ্যা বা রুটের সংখ্যা এত কম কেন?

ওই সব এলাকার বাসিন্দাদের অধিকাংশেরই বক্তব্য, এক-দু’বছর আগে বেশ কিছু নতুন রুটে সরকারি বাস নেমেছিল। কিন্তু বেশ কয়েক মাস চলার পরে বাসগুলির সংখ্যা কমতে কমতে বর্তমানে প্রায় দেখা মেলে না বলেই সাধারণ মানুষের অভিযোগ। যদিও ওই বাসরুটগুলির মালিকেরা জানাচ্ছেন, বাস চালানো শুরু করলেও, ভাড়া না বাড়ায় অফিসটাইমের বাইরে বাসগুলি প্রায় ফাঁকাই চলত। মূলত অফিসটাইম ছাড়া কলকাতা থেকে দক্ষিণ শহরতলির দিকে যাওয়ার সময় যাত্রী পাওয়া যেত না।

ফলে বাসগুলিকে ফাঁকাই চালাতে হত। আর লোকসান করে কত দিন বাস চালানো সম্ভব! তাই বেশির ভাগ বাস মালিকেরা অফিসটাইমে বাস চালিয়ে তা তুলে নেন। ফলে ক্রমশ অফিস টাইমেরও বাসের সংখ্যা কমে গিয়েছে।

ফলে অফিসটাইমে যে সংখ্যক বাস রাস্তায় চলে, সেগুলিও যাত্রী চাপ সামলাতে পারে না। উল্টে যাত্রীদের বাধ্য হয়েই কাটা রুটে অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে যাতাযাত করতে হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা তাতেও কমেনি।

সন্ধ্যার পরে অটোর সংখ্যা কমে যাওয়ায়। অভিযোগ, রাত আটটার পরে রাস্তা খারাপ হওয়ায়, অটো চালকেরা অটোও তুলে নেন। তখন এক মাত্র ভরসা বেশি ভাড়ার শাট্ল গাড়ি। তবে সেখানেও তিন থেকে চার বার গাড়ি বদলেই গন্তব্যে পৌঁছনো যায়।

যদিও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার এক পরিবহণ কর্তা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এক-দেড় মাস আগেই দক্ষিণ শহরতলির বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার জন্য নতুন করে কয়েকটি রুট চালু করা হয়েছে। ফলে বাস রুট বা সংখ্যা কমার কোনও প্রশ্নই নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন