রবীন্দ্রসদন অঞ্চলে চলছে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা

সিগন্যাল লাল। সেই সুযোগে বাস থামিয়ে কার্যত খেদিয়ে যাত্রী নামাচ্ছেন কন্ডাক্টর। সিগন্যাল সবুজ হতেই প্রায় ঝাঁপিয়ে নামতে হল বাকি যাত্রীদেরও। দু’পাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে অসংখ্য গাড়ি। ঝুঁকি নিয়ে এর মধ্যেই রাস্তা পেরতে হল যাত্রীদের। কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ তখন নীরব দর্শকের ভূমিকায়। প্রায়ই এমন দৃশ্য দেখা যায় রবীন্দ্রসদন ও এক্সাইডের মতো শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০৬
Share:

সিগন্যাল খোলা। তবুও যাত্রী তুলতে দাঁড়িয়ে বাস। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

সিগন্যাল লাল। সেই সুযোগে বাস থামিয়ে কার্যত খেদিয়ে যাত্রী নামাচ্ছেন কন্ডাক্টর। সিগন্যাল সবুজ হতেই প্রায় ঝাঁপিয়ে নামতে হল বাকি যাত্রীদেরও। দু’পাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে অসংখ্য গাড়ি। ঝুঁকি নিয়ে এর মধ্যেই রাস্তা পেরতে হল যাত্রীদের। কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ তখন নীরব দর্শকের ভূমিকায়। প্রায়ই এমন দৃশ্য দেখা যায় রবীন্দ্রসদন ও এক্সাইডের মতো শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে।

Advertisement

নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, এখানে সব জায়গায় বাস দাঁড়ায় না। ফলে কখনও নন্দনের সামনে, কখনও বা ভিক্টোরিয়ার ধার ঘেঁষে সিগন্যাল উপেক্ষা করে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে চলছে বাসগুলিতে যাত্রী ওঠা-নামা। তাঁদের দাবি, এই সমস্যা বহু দিনের। কিন্তু এক বাসচালকের বক্তব্য, বাস নির্দিষ্ট স্টপেই থামে। যাত্রীরা যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে হাত দেখান। তবে সাঁতরাগাছি থেকে দ্বিতীয় হুগলি সেতু পার হয়ে আসা বাসের ক্ষেত্রে যাত্রীদের ওঠা-নামায় সমস্যা আরও বেশি। কারণ, দুপুর একটার আগে পিটিএস থেকে রবীন্দ্রসদনের দিকে আসা বাসগুলিকে এক্সাইডে যেতে হলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিড়লা তারামণ্ডল হয়ে ঘুরে যেতে হয়। সে ক্ষেত্রে অধিকাংশ যাত্রীরা রবীন্দ্রসদনে নেমে যান। সাঁতরাগাছি থেকে ধর্মতলা, পার্কস্ট্রিট, শিয়ালদহ রুটের বাসের ক্ষেত্রে একই সমস্যা। অভিযোগ, এখানে কোনও বাসস্টপ না থাকায় যাত্রীরা যত্রতত্র দাঁড়িয়ে থাকেন। এই সব জায়গায় অন্যান্য গাড়ি গতি কমায় না। এর ফলেই ঝুঁকি আরও বেশি। অসতর্ক হলেই পিছন থেকে আসা গাড়ি যে কোনও সময়ে ধাক্কা মারতে পারে বলে অভিযোগ করছেন নিত্যযাত্রীরা।

দুপুর একটার পরে ছবিটা আরও ভয়াবহ হয়। কারণ, এক্সাইড, ধর্মতলা, শিয়ালদহ রুটের ক্ষেত্রে এই রাস্তা তখন ‘নো এন্ট্রি’ হয়ে যায়। ফলে সব গাড়ি নন্দনের সামনে দিয়ে ঘুরে যায়। জানাচ্ছেন যাত্রীদের একাংশ। এ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বেশি থাকে। কারণ, সে সময় নন্দন চত্বর শুধু ‘বাসস্টপ’ নয়, কার্যত ‘বাসস্ট্যান্ড’-এ পরিণত হয়ে যায়। তখন সাঁতরাগাছি থেকে এক্সাইড রুটের বাসগুলি নন্দনের সামনে দাঁড়ায়। যাত্রী তোলে। তার পরে সাঁতরাগাছির উদ্দেশে রওনা দেয়। তার মাঝে প্রায় পনেরো, কুড়ি মিনিট পার হয়ে যায়। কখনও রাস্তায় চলন্ত গাড়ির সামনে হাত দেখিয়ে কখনও বা ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার করেন যাত্রীরা। ঢিল ছোড়া দূরত্বেই রয়েছে ময়দান থানা। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয় না বলে পথচারীদের অভিযোগ। যদিও যাত্রীদের একাংশের মতে রবীন্দ্রসদনে মেট্রো ধরতে হলে এখানে নামলেই সুবিধা। হাওড়ার বেলেপোলের বাসিন্দা অতনু ভাণ্ডারী অবশ্য বলছেন, “এটা নিতান্তই বাজে অজুহাত। ঘুর পথে হলেও যেখানে বাসস্টপ সেখানেই নামা উচিত।” বেশ কিছু যাত্রী জানাচ্ছেন, বাস নন্দনের সামনে থেকে আর এগোয় না। আগে এই নিয়ে অনেকবার বিরোধিতা করতাম। কিন্তু এখন বাধ্য হয়ে নেমে যেতে হয়।

Advertisement

এক সপ্তাহ আগেই সার্ভে পার্ক থানা এলাকায় ধাক্কা দিয়ে চলন্ত বাস থেকে যাত্রী নামানোর প্রতিবাদ করায় কন্ডাক্টর এক যাত্রীকে মারধর করেন। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর পরে ওই কন্ডাক্টরকে গ্রেফতারও করা হয়। তাও নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়াই যাত্রীদের নামতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের এক অফিসার বলেন, “ওখানে কেন যাত্রীরা দাঁড়াবেন! বাসই বা কেন যত্রতত্র দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলে! এ ভাবে ওঠা-নামা বন্ধ করতে কেস দেওয়া হয়। তাও অভিযোগ আসছে। আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্ঘটনা এড়াতে যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন